∎ প্রশ্ন ১: দশম শ্রেণির ছাত্র সজল একজন ভালো ছাত্র। কিছুদিন যাবৎ সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে না। প্রায়ই রাস্তায় দুষ্ট ছেলেদের সাথে চলাফেরা করতে দেখা যায়। শ্রেণিশিক্ষক বিষয়টি তার বাবাকে জানালেন। সজলের বাবা নিজেও বিষয়টি লক্ষ্য করলেন এবং বললেন সে ইদানীং অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে। কিছু জিজ্ঞেস করলে রেগে যায়। আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। সজলের বাবা তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য শিক্ষক, প্রতিবেশী ও তার বন্ধুদের সহযোগিতা চাইলেন। বন্ধুরা তাকে নিয়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যায়। মাঝে মাঝে খেলাধুলায় এবং নয়নাভিরাম স্থানে বেড়িয়ে আসে। কিছুদিন পর দেখা গেল সে সুস্থ হয়ে উঠছে।
ক. মাদকদ্রব্য কী?
খ. শেখার ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায় কেন তা ব্যাখ্যা কর।
গ. সজলের সমস্যাটি
কী ধরনের? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সজলের সুস্থতার পিছনে কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি বলে তুমি মনে কর? উদ্দীপকের আলোকে
বিশ্লেষণ কর?
➲ ১ নং প্রশ্নের উত্তর ➲
ক. যে দ্রব্য গ্রহণের
ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে এবং ঐ দ্রব্যের
প্রতি নির্ভরশীলতা সৃষ্টি, পাশাপাশি দ্রব্যটি গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা ক্রমশই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত
হয়, এমন দ্রব্যই মাদকদ্রব্য।
খ. শেখার ও কাজ
করার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মাদকদ্রব্য গ্রহণ।
ব্যাখ্যা :
মাদকদ্রব্য মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। যেমন— চাপ
সহ্য করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে, মানসিক পীড়ন বাড়ায়। মাদকদ্রব্য
সেবন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস করে, খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে, চোখের দৃষ্টিশক্তি
কমিয়ে দেয়। এরূপ বিবিধ কারণে শেখার ও কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
গ. উদ্দীপকের আলোচনা থেকে বলা যায় সজল মাদকাসক্ত। মাদক সেবন করলে মানুষের শারীরিক
ও মানসিক অবস্থার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং সেগুলোর প্রতি সেবনকারীর প্রবল আসক্তি
জন্মে । যারা মাদকদ্রব্য সেবন করে মাদকদ্রব্যের প্রতি তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্ভরশীলতা
সৃষ্টি হয়। তারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারে না, যদি কোনো কারণবশত মাদক গ্রহণ করতে না পারে তাহলে তাদের মধ্যে মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক উপসর্গের সৃষ্টি হয়। যেমন— মেজাজ খিটখিটে হয়, ক্ষুধা ও রক্তচাপ কমে যায়, শ্বাস- প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়, আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে যা উদ্দীপকের সজলের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। মাদকদ্রব্য সেবন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষকে ধ্বংস করে, খাদ্যাভ্যাস নষ্ট করে ও চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে।
ঘ. মাদকাসক্ত
সজলের সুস্থতার পিছনে তার বন্ধুদের ভূমিকাই
সবচেয়ে বেশি । উদ্দীপকের
আলোকে তা বিশ্লেষণ করা
হলো- সজল রাস্তার দুষ্টু
ছেলেদের প্ররোচনায় প্রভাবিত হয়ে মাদকাসক্ত হয়
এবং বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। শ্রেণিশিক্ষক
বিষয়টি তার বাবাকে অবগত
করলে তিনি সজলকে সুস্থ
করে তোলার জন্য শিক্ষক, প্রতিবেশী
ও তার বন্ধুদের সহযোগিতা
চান । শিক্ষকের আদেশ
ও উপদেশ ছাত্ররা আন্তরিকভাবে পালন করে। শ্রেণিকক্ষে
ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষকের আদেশ ও উপদেশে
ছাত্ররা মাদক পরিহার করে
চলতে পারে। প্রতিবেশীরাও স্নেহ, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা দিয়ে
ছেলেমেয়েদের মাদকমুক্ত থাকতে সাহায্য করে। অন্যদিকে বন্ধুরা
অর্থাৎ ভালো বন্ধুরাই অন্য
বন্ধুদেরকে মাদক গ্রহণ না
করার জন্য প্রভাবিত করতে
পারে। সজলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সজলের
ভালো বন্ধুরা তাকে মাদকের আসক্তি
থেকে মুক্ত করতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানে নিয়ে যায়, মাঝে মাঝে খেলাধুলায়
এবং নয়নাভিরাম স্থানে বেড়াতে আসে । এভাবে
ভালো বন্ধুদের সাহচর্যে মাদকমুক্ত পরিবেশে থাকতে থাকতে এক সময় সজলের
মাদকের প্রতি আসক্তির রেশ কেটে যায়
এবং সজল স্বাভাবিক জীবনে
ফিরে আসে।
উপরোক্ত
আলোচনা থেকে বলা যায়,
মাদকাসক্ত সজলের সুস্থতার পিছনে তার বন্ধুদের অর্থাৎ
ভালো বন্ধুদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি ছিল।
শারীরিক শিক্ষা বইয়ের নবম অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্নের উওর
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন