বিজয় দিবস রচনা

বিজয় দিবস | ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা | বিজয় দিবসের ছবি | বিজয় দিবসের কবিতা | বিজয় দিবস রচনা | বিজয় দিবস শুভেচ্ছা | বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা | বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ | মহান বিজয় দিবস | বিজয় দিবস পিকচার | বিজয় দিবসের পিক | বিজয় দিবসের পিকচার | বিজয় দিবস পিক | ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস | বিজয় দিবসের কবিতা আবৃত্তি | ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ কততম বিজয় দিবস | বিজয় দিবস উক্তি | বিজয় দিবসের উক্তি | বিজয় দিবসের কবিতা আবৃতি | মহান বিজয় দিবস ২০২১ | বিজয় দিবসের বক্তব্য pdf | Bongotweet.com


১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস 

সূচনা : ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। বাঙালির এক প্রতীক্ষার দিন, শৃঙ্খল মুক্তির দিন। এ দিনে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। দীর্ঘ নয় মাস অনেক রক্তের পিচ্ছিল পথ মাড়িয়ে, অনেক প্রাণের বিনিময়ে বাঙালি জাতি সেদিন অর্জন করে তাদের প্রিয় স্বাধীনতা। মুক্তিকামী জাতির কাছে সে দিনটি ছিল অনেক প্রতীক্ষিত একটি দিন। আজও বাঙালি জাতি তার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে গেলেই ফিরে যায় সে দিনটির কাছে। তাই জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের আছে সুগভীর তাৎপর্য।

বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপট : ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে অবিভক্ত ভারতবর্ষ ভেঙে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে আমাদের পূর্ববাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে পূর্ব বাংলার মানুষ স্বাধীন দেশ পাকিস্তান লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা স্বাধীনতার ফল ভােগ করতে পারেনি। বাংলার অখণ্ডতাকে বাদ দিয়ে ধর্মভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশীদার হয়ে তারা যে মস্ত বড় ভুল করেছে তা তারা শিগগিরই উপলব্ধি করে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা নিপুণ ছলে শোষণ করতে চায় পূর্ব বাংলাকে। উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চায় বাঙালিদের ভাষা হিসেবে। এর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্রজনতা। তারা দাবি করে 'রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই'। শুরু হয় আন্দোলন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মিছিল করতে গিয়ে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, শফিক জব্বারসহ অনেকে। গতি পেতে থাকে আন্দোলন। ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং এগারাে দফার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় ব্যাপক গণজাগরণ। ফলে ১৯৬৯ সালে সফল গণঅভুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতন ঘটে। এরপর সামরিক আইনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে ইয়াহিয়া খান। তীব্র আন্দোলনের চাপে ১৯৭০ সালে ঘােষণা করা হয় সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে বাঙালির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের বিজয় ঘটে। সঙ্গত কারণেই রাষ্ট্র পরিচালনার ভার তাকে দেওয়ার কথা। কিন্তু শুরু হয় ষড়যন্ত্রের নীল নকশা। আসে ২৫-এ মার্চের ভয়াল কালাে রাত। গুলি চলে ঘুমন্ত মানুষের ওপর। এরপর দীর্ঘ নয় মাস ধরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে। বাঙালি এ বিপর্যয় মুখ বুজে সহ্য করেনি। রুখে দাঁড়িয়েছিল জল্লাদ বাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবের বিরুদ্ধে। ফলে চলতে থাকে যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আসে সােনালি দিন। বাঙালি জাতি স্বাধীনতা লাভ করে, অর্জন করে একটি মানচিত্র, একটি পতাকা। 

বিজয় দিবসের তাৎপর্য : যুদ্ধজয়ের মধ্য দিয়ে জাতি পতাকা পেয়েছে, ভূখণ্ড পেয়েছে বলেই জাতি সফল হয়েছে ধরে নেওয়া যায় না। বরং এ বিজয়ের আছে সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল বলেই জাতির মেধাবী সন্তানরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। নিজ ভাষা চর্চা নিজ সংস্কৃতি পালন করতে পারছে বাঙালি জাতি। বিশ্বে আজ বাংলাদেশ আর বাঙালি জাতি এখন অচেনা নয় বরং বিশ্বকে সমৃদ্ধ করার কাজে এদেশেরও আছে গৌরবময় অবদান। 

বিজয় দিবস উদযাপন : বাঙালি জাতির এ আনন্দের দিনটি নানাভাবে উদযাপিত হয়ে থাকে। সেদিন বাঙালিরা মিলিত হয় প্রাণের মেলায়। দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ওড়ে আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যম, সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেল গ্রহণ করে নানা উদ্যোগ। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় বিশেষ ক্রোড়পত্র। বিদেশের বাংলাদেশি দূতাবাসগুলােতে ওড়ে পতাকা। দেশের সর্বস্তরের মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তাদের বীর শহিদদের। বিজয়ের আনন্দে মানুষ স্মরণ করে এ দিনটিকে।

বিজয় দিবস এবং আমাদের প্রত্যাশা : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ আমরা যেমন চেয়েছিলাম তেমনটা এখনাে পাইনি। স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মুক্তি পেলেও আমরা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনাে পাইনি। জনজীবনে এখনাে আসেনি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান এখনাে অনিশ্চিত। বরং, এর বিপরীতে দুর্নীতির ভয়াল রূপ দেখে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে প্রয়ােজন অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং সম্পদের সুষম বণ্টন।

বিজয় দিবস এবং আমাদের প্রাপ্তি : অনেক না পাওয়ার মধ্যেও আমাদের প্রাপ্তি অনেক। স্বাধীন বাংলাদেশ এখন শিক্ষায় যথেষ্ট এগিয়েছে। দেশের বাইরেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাক্ষর রাখছে। যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি, পল্লি জনপদে বিদ্যুতায়ন, স্বাস্থ্য খাতসহ ইত্যাদি বিষয়ে উল্লেখযােগ্য উন্নতি ঘটেছে। ক্রীড়া ক্ষেত্রেও সুখ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি দিন দিনই বাড়ছে। তৈরি পােশাক, চামড়া, হিমায়িত চিংড়ি ইত্যাদির পর এবার জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবেও বাংলাদেশ পরিচিতি পাচ্ছে।

উপসংহার : এক সাগর রক্ত আর লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সােনার বাংলাদেশ। একটি নতুন দেশকে সােনার দেশ হিসেবে গড়ে তােলার দায়িত্ব সকলের। বিজয় দিবস স্বাধীনতাকামী বাঙালির পবিত্র চেতনার ধারক। সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন