ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ডিজিটাল বাংলাদেশ | ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস | ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা | ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ | ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প | ডিজিটাল বাংলাদেশ অনুচ্ছেদ | ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস কুইজ প্রশ্ন | ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ কি কি | ডিজিটাল বাংলাদেশ কুইজ | ডিজিটাল বাংলাদেশ কুইজ প্ৰতিযােগিতার প্রশ্ন |  ডিজিটাল বাংলাদেশের চার স্তম্ভ mcq | ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প ২০২১ | ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণের গল্প | bongotweet.com

ডিজিটাল বাংলাদেশ

ভূমিকা : ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে একটি উচ্চকিত শ্লোগান। ২০২১ সালে পালিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। তাই এসময়ের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্যে এটি একটি সময়ােচিত পদক্ষেপ। পৃথিবীর প্রায় সকল জাতিই জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশকেও এর থেকে বাইরে থাকলে চলবে না। কিন্তু একটি দেশকে ডিজিটাল হিসেবে তৈরি করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ নয়।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অর্থ : ইন্টারনেটের সুফল সমাজের সকল কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সমাজ বা দেশকে ডিজিটাল করা যেতে পারে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কী? এ বিষয়কে বুঝতে হলে আমাদের আগেই জানতে হবে একটি দেশ কীভাবে ডিজিটাল দেশে পরিণত হতে পারে। একটি দেশকে তখনই ডিজিটাল দেশ (Digital Coutry) বলা যাবে যখন দেশটি ই-স্টেট' (e-state)-এ পরিণত হবে। অর্থাৎ ওই দেশের যাবতীয় কার্যাবলি যেমন : সরকার ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি প্রভৃতি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট : বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয়। যার ফলে রাজনৈতিক দলের মেনিফেস্টোই ডিজিটাল বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নির্বাচনি ইশতেহারে একটি গুরত্বপূর্ণ দিক ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। ফলে একটা বিশাল সংখ্যক তরুণ ভােটার তাদেরকে ভােট দিয়েছে। এখন যদি সরকার বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে, তবে বাংলাদেশের মানুষের জন্যে তা হবে আর্শীবাদ স্বরূপ।

ডিজিটাল বাংলাদেশের পূর্বশর্ত : একটি ডিজিটাল সমাজ নিশ্চিত করবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অনলাইন প্রযুক্তির প্রয়ােগ ঘটবে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিশ্চয়তা দেবে দ্রুত ও কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সুশাসিত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। এক্ষেত্রে শক্তিশালী তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামাে মূলভিত্তি। কঠিন বাস্তবতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়তে গেলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন : 

i. শিক্ষা : বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। এই হারকে আরও বাড়িয়ে নিরক্ষরতার হারকে শূন্যের কোঠায়
নামিয়ে আনতে হবে। কেননা শিক্ষিত মানুষ ছাড়া ডিজিটাল শব্দটি অর্থপূর্ণ হবে না। কেননা অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে প্রযুক্তি তুলে দিয়ে গণমানুষকে তার আওতায় আনা যায় না, বিষয়টি সকল মানুষকে বুঝতে হবে।

ii. বিদ্যুৎ ঘাটতি : সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় বাংলাদেশকে ৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার
ক্ষেত্রে দৈনিক ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির মুখােমুখি হতে হয়। একটি পরিপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি কাঠামাে
গড়ে তােলার জন্যে যথাযথ বিদ্যুতের ব্যবহার একান্ত প্রয়ােজন। সেক্ষেত্রে বিদ্যুত ঘাটতি কমাতে হবে। 

iii. নেটওয়ার্ক-কাঠামাে উন্নয়ন : ঢাকার বাইরে এখনও খুবই কমসংখ্যক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কাঠামাের আওতায় আসতে পেরেছে। ঢাকা শহরের বাইরের কিছু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে তথ্য পাওয়া গেছে যে, বেশির ভাগ LAN (লেন) ঢাকা কেন্দ্রিক। এই পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের পার্থক্যকে প্রতীয়মান করে। 

iv. ইন্টারনেট ব্যবহার সম্প্রসারণ : তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্যে একটি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলাের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ খারাপ। তবে আশার কথা এই সংখ্যা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

v. ইংরেজি শিক্ষার হার বৃদ্ধি : মূলত ইংরেজি ভাষা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করছে। অন্যদিকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা প্রয়ােজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারিনি। এজন্যেই
আমাদের দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন করতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। 

vi. সমুদ্রের তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবল সংযােগ : ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সুপার
হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমুদ্র তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে। কিন্তু এই সাবমেরিন ক্যাবল
প্রায়শই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। 

vii. ভাষান্তর : কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংক্রান্ত বিষয় ও ধারণাগুলাে বাংলায় ভাষান্তর করতে হবে। যাতে কম শিক্ষিত মানুষও এসব কার্যক্রম চালাতে পারে। 

এ ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সঙ্গে জড়িত। তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলাে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।

অনলাইনের সুবিধাসমূহ : বাংলাদেশের মানব সম্পদ যতবেশি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে, ততই অনলাইনের গুরুত্ব বাড়ছে। আজকের দিনে মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় যাবতীয় কাজ সমাধান করছে। অনলাইনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা বর্তমানে ঘরে বসেই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে। পৃথিবীর বিভিন্ন তথ্য সহজেই পেয়ে যাচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে। চাকরিপ্রার্থীরা খুব সহজেই ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করছে। অনলাইন ব্যাংকিং চালু হওয়ার ফলে এখন গ্রাহক যেকোনাে ব্যাংক থেকেই টাকা জমাদান, উত্তোলন, বিল পরিশােধ ইত্যাদি কাজ ঘরে বসেই করতে পারছে। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জন ও বাস্তবতা : বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত প্রসারের ফলে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বহির্বিশ্বের যােগাযােগ স্থাপন করেছে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য মােবাইল ফোনের ক্রমবর্ধিত ব্যবহার। এটি বাংলাদেশের যােগাযােগ মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক কম। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন করতে হলে ইন্টারনেট ব্যবহারকে সহজলভ্য করতে হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ : ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই বিশাল কর্মপদ্ধতি চালানাের জন্যে অনেকগুলাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। নিচে বিষয়গুলাে তুলে ধরা হলাে—

(i) ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করতে গেলে আমাদের উন্নয়নের একটি বিজ্ঞানসম্মত নকশা তৈরি করতে হবে। এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমেই 'e-readiness' প্লান তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী মানবশক্তি তৈরি করতে হবে। 

(ii) ইন্টারনেট কাঠামাের উন্নয়ন ও ইন্টারনেটের ব্যয় সাধারণের সীমার মধ্যে এনে সকল জনগণের জন্যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

(iii) সর্বোপরি সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি কাজে ইন্টারনেটের ব্যবহার করে স্বচ্ছতা আনা ইত্যাদি বাংলাদেশকে ডিজিটালায়নে সহযােগিতা করবে। 

(iv) জনগণকে পরিবর্তনশীল মানসিকতার পরিচয় দিতে হবে এবং সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। 

(v) গ্রাম ও শহর অঞ্চলের মধ্যে একটি ভালাে যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। 

(vi) ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত ও সহজলভ্য করতে হবে। 

উপসংহার : পরিবর্তনশীল বিশ্বে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রিক জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। এ স্বপ্নকেই ধারণ করছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে এটি সকলেরই আশা। তবে এ আশাকে বাস্তবায়ন করা কঠিন। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে ডিজিটাল বাংলাদেশে বসবাসের স্বপ্ন দেখতে হবে।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন