ভূগোলশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

ভূগোলশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান - বঙ্গ টুইট -Bongo Tweet

অজানাকে জানা, কেবলা নির্ধারণ, ইসলাম প্রচার ও ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ নানা কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য মুসলমানদের ভূগােলবিষয়ক জ্ঞানার্জনের প্রয়ােজনীয়তা দেখা দেয়। এ প্রয়ােজন পূরণের লক্ষ্যে মুসলিম ভূগােলবিদরাই সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভূতত্ত্ব নিয়ে আলােচনা করেন এবং একে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা হিসেবে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাদের ভূগােলবিষয়ক জ্ঞানের উৎস ছিল পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও কুরআন মাজিদ। 

ভূগােলশাস্ত্রের মুসলিম মনীষীদের নাম

মুসলিম মনীষীদের মধ্যে আল মুকাদ্দাসি, আল মাসউদি, ইয়াকুত ইবনে আবদুল্লাহ আল হামাবি, আল ইদ্রিস, মুসা আল-খাওয়ারিযমি, আল বিরুনি ও ইবনে খালদুন প্রমুখ ভূগোলশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। নিচে তাদের নিয়ে আলোচনা করা হলো-

আল মুকাদ্দাসি

আল মুকাদ্দাসি ছিলেন একজন বিখ্যাত মুসলিম পরিব্রাজক ও ভূগােলবিদ। তিনি স্পেন, ভারতবর্ষ ও সিজিস্তান ছাড়া প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন। দীর্ঘ বিশ বছরের ভ্রমণ অভিজ্ঞতার আলােকে তিনি 'আহসানুত-তাকাসিম ফি মারিফাতুল আকালিম' নামে ভূগােলবিষয়ক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন।

আবুল হাসান আলি আল মাসউদি 

আবুল হাসান আলি আল মাসউদি একাধারে পরিব্রাজক, ইতিহাসবিদ ও ভূগােলবিদ ছিলেন। তিনি 'মুরুজ আল যাহাব ওয়া মা'দিন আল-যাওয়াহির' নামে ঐতিহাসিক ভূগােল বিশ্বকোষ' রচনা করেন। এর মধ্যে তিনি তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি পৃথিবীর আকার, আয়তন, গতি ও প্রধান প্রধান বিভাগগুলোর বিবরণ দেন। আল মাসউদি ভারত মহাসাগর, পারস্য সাগর ও আরব সাগরের ঝড়ের অবস্থার কথা উল্লেখ করেন এবং ভূকম্পন বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লেখেন। তিনি পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন।
 

মুসা আল খাওয়ারিযমি

মুসলিম ভূগােলবিদদের মধ্যে মুসা আল খাওয়ারিযমি এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি মিশরীয় ভূগোলবিদ টলেমির ভূগােলবিষয়ক গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদ করে এর সাথে মানচিত্র সংযোজন করেন। তিনি পৃথিবীর পরিধিও নির্ধারণ করেন। আল খাওয়ারিযমি পৃথিবীকে 'সাতটি ভূখণ্ডে' বিভক্ত করেন এবং অন্যান্য ভূগোলবিদদের সহযােগিতায় সুরাতুল আরদ বা পৃথিবীর একটি প্রতিরূপ তৈরি করেন। তার সপ্ত ইকলিম থেকেই পরবর্তী ভুগোলবিদরা সাতটি মহাদেশের ধারণা লাভ করেন। 

আরও পড়ুনঃ

 ইয়াকুত ইবনে আবদুল্লাহ আল হামাবি

পারস্যের মুসলিম মনীষী ইয়াকুত ইবনে আবদুল্লাহ আল হামাবিকে মুসলিম ভুগােল শাস্ত্রের জনক বলা হয়। তাঁর রচিত মুজামুল বুলদান নামক গ্রন্থটি ভুগোলশাস্ত্রের একটি প্রামাণ্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থে তিনি আরব থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত এলাকার নগরসমূহের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ তুলে ধরেন। এতে তিনি প্রত্যেক স্থানের ঐতিহাসিক, জাতিতান্ত্বিক ও প্রকৃতিক বিষয়ের বিবরণ দিয়েছেন। ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের পরিচয় ও ঘটনাসমূহের উল্লেখ করেছেন। 

আল ইদ্রিস

মধ্যযুগের মুসলিম ভূগােলবিদ আল ইদ্রিস প্রাচীন ও আধুনিক ভৌগোলিক জ্ঞানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। ভূগােলবিষয়ক তার বিখ্যাত গ্রন্থ হলো 'কিতাবুল রোজারি'। 

ইবনে খালদুন

তিউনিসিয়ার মুসলিম ভূগোলবিদ ইবনে খালদুন তার ভূগােলবিষয়ক 'আল মুকাদ্দিমা' গ্রন্থের জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতিলাভ করেন। 

ইবনে খুরদাদ

আরবের প্রধান বাণিজ্য পথ এবং চীন, জাপান ও কোরিয়ার ভৌগােলিক অবস্থান বর্ণনা করে ইবনে খুরদাদ লেখেন 'কিতাবুল মাসালিক ওয়াল মামালিক'।

ইবনে রুশতাহ

ইবনে রুশতাহ রচনা করেন 'আল আলাক আন নাফিসা' নামক ৭ খণ্ডে বিন্যস্ত ভূগােল বিশ্বকোষ।

আল-ইসতাখরি

আল-ইসতাখরি তার ভূগােলবিষয়ক গ্রন্থে রঙিন মানচিত্র ব্যবহার করেন। ইবনে-হাওকাল লেখেন ভ্রমণ কাহিনিনির্ভর ভূগোলগ্রন্থ। 

আল-বিরুনী

আল-বিরুনী সর্বপ্রথম পৃথিবীর গােলাকার মানচিত্র তৈরি করেন। তিনি তাঁর 'কিতাবুল হিন্দ' গ্রন্থে ভূবিদ্যার ওপর আলােকপাত করেন। এতে তিনি নদীর ভূসংস্থান, ভূত্ত্ব, জোয়ারভাটা, মহাসমুদ্র, আবহাওয়া, ভূমি পরিমাপমূলক কাজ প্রভৃতি বিষয় আলােচনা করেন।

তথ্যসুত্র : বই - ইসলাম শিক্ষা। 
লেখক: ড. এ আর এম আলী হায়দার।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন