জ্যোতির্বিদ্যায় মুসলমানদের অবদান

জ্যোতির্বিদ্যায় মুসলমানদের অবদান - বঙ্গ টুইট - Bongo Tweet

জ্যোতির্বিদ্যা হলাে মহাকাশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান। এটি গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলােচনা করে। মুসলমানগণই সর্বপ্রথম ইউরাপে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে তারা দূরবীক্ষণ যন্ত্র, দিক নির্ণয় যন্ত্র, দোলক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

মুসলিম মনীষীদের মধ্যে যারা জ্যোতির্বিদ্যায় বিশেষ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে আল ফাজারি, মুসা আল খাওয়ারিযমি, আল নেহাওয়ান্দি, আল ফারাগানি, আবুল হাসান, আল বাত্তানী, আল বিরুনী, আব্দুর রহমান আস-সুফি ও ওমর খৈয়াম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিচে তাদের নিয়ে আলোচনা করা হলো-

আল-বাত্তানী

মুসলিম জ্যোতির্বিদদের মধ্যে আল-বাত্তানীকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, ক্রিকোণমিতি ও গােলকীয় ত্রিকোণমিতির অনেক মৌলিক সূত্র আবিষ্কার করেন। দশম শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুসলিম জ্যোতির্বিদ আল-বাত্তানী মিশরীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমির বহু মতবাদকে ভুল প্রমাণিত করায় তাকে মুসলিম টলেমি বলা হয়। তিনি সূর্যের গতি ও কক্ষপথ সম্পর্কে গভীর গবেষণা করেন। সূর্যের পরিভ্রমণে যে কোণ সৃষ্টি হয়, আল-বাত্তানী নির্ভুলভাবে তার মান নির্ণয় করেন। তিনিই সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন, সূর্যের আপাতদৃষ্ট ব্যাসটি ধ্রুব নয়। শীতকালে সূর্যকে গ্রীষ্মকালের চেয়ে বড় মনে হয়। এ পার্থক্যের পরিমাণ ১৪২২০ ডিগ্রি চাপের একটি অর্ধবৃত্তাকারের সমান। তিনি নক্ষত্রের একটি তালিকাও প্রণয়ন করেন।

আল ফাজারি

খলিফা আল মনসুর এর সময় আল ফাজারি জ্যোতির্বিদ্যার ওপর রচিত সংস্কৃত 'সিদ্ধান্ত' গ্রন্থটির আরবি অনুবাদের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞান আলােচনার সূচনা করেন। 'আল-নেহাওয়ান্দী আল-মুশতামাল' নামে জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে একটি নির্ঘন্ট প্রণয়ন করেন, যা গ্রিক ও হিন্দু উভয় জ্যোতির্বিদ্যার পথপ্রদর্শক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলমানগণই সর্বপ্রথম ইউরােপে মানমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। আব্বাসীয় খলিফাগণ মানমন্দির প্রতিষ্ঠায় পৃষ্ঠপােষকতা দিলে মুসলিম জ্যোতির্বিদদের গবেষণায় ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়।

আরও পড়ুন :

আবুল বাশার বালখি

আবুল বাশার বালখি জ্যোতির্বিদ্যার ওপর চারটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন যা ল্যাটিন ভাষায় অনুদিত হয়। তিনি জোয়ারভাটা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, পৃথিবীর উপর চন্দ্রের আকর্ষণই জোয়ারভাটার কারণ। 

আবুল হাসান

আরেক মুসলিম জ্যোতির্বিদ আবুল হাসান টিউব দিয়ে একটি স্থুল টেলিস্কোপ তৈরি করেছিলেন। চাঁদের গতি নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। 

আব্দুর রহমান আস-সুফি

পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন আব্দুর রহমান আস-সুফি। তাঁর রচিত 'নক্ষত্রেরাজির গতি' গ্রন্থটি এ শাস্ত্রের অধ্যয়নে বিশেষ সহায়ক। ওমর খৈয়াম প্রথম বর্ষপঞ্জি তৈরি করেন।

মুসা আল খাওয়ারিযমি

মুসা আল খাওয়ারিযমি জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত একটি ছক তৈরি করেন। তিনিই বিশ্বমানচিত্রের প্রথম ধারণা দেন। 

আল ফারাগানি

জ্যোতির্বিদ্যায়  আল ফারাগানি 'Elements of Astronomy' নামে একটি প্রামাণ্যগ্রন্থ রচনা করেন।

মুসলিম জ্যোতির্বিদদের বড় কৃতিত্ব হলাে তারা এ শাস্ত্রের তাত্ত্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবহারিক উন্নতিও নিশ্চিত করেন এবং বিভিন্ন সাহায্যকারী যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেন।

তথ্যসুত্র : বই - ইসলাম শিক্ষা। 
লেখক: ড. এ আর এম আলী হায়দার।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন