হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এর চিকিৎসা পদ্ধতি - ইসলামিক গল্প

ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্পের বই pdf | ইসলামিক গল্প থেকে শিক্ষা | মেয়েদের ইসলামিক গল্প | স্বামী স্ত্রীর রােমান্টিক ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্প ও কাহিনী | ছােটদের ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্প ও কাহিনী pdf | ইসলামিক গল্পের লিংক | শিশুদের ইসলামিক গল্পের বই pdf | ইসলামিক গল্পের বই | ছােটদের ইসলামিক গল্পের বই pdf | Bongotweet.com

হাকিমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.)। এই নামটি শুনেনি এমন মুসলমানের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আশরাফ আলী থানভী (রহ.) ছিলেন একজন দেওবন্দী আলেম, ইসলামি গবেষক, সমাজ সংস্কারক এবং পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন  ভারতের থানাভবনের নিবাসী। আর এই জন্য তার নামের শেষে 'থানভী' যোগ করা হয়। ভারত উপমহাদেশসহ পৃথীবির নানা দেশের অসংখ্য মানুষ তার কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি এবং তাসাওউফের শিক্ষা লাভ করার কারণে তিনি "হাকীমুল উম্মত" (উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক) উপাধিতে পরিচিত লাভ করেন। অনেক বড় বড় আলেমও নিজেদেরকে শুধরানাের জন্য হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ. এর দরবারে আসতেন। তাঁদের তারবিয়াত খুবই সুন্দর হত।

অহংকারের চিকিৎসা পদ্ধতি

হযরত ক্বারী তৈয়ব সাহেব রহঃ যখন দারুল উলূম দেওবন্দের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন, তখন ছিল তার যৌবন, আল্লাহ তা'আলা তাঁকে সৌন্দর্যও দান করেছেন এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞাও দান করেছেন। মানুষের অন্তরে তাঁর প্রতি মহব্বত এবং ভালবাসা ও দিয়েছেন। হযরত ক্বারী তৈয়ব সাহেব রহঃ একদা হযরত থানভী রহঃ কে পত্র মারফতে জানালেন যে, হযরত! মাঝে মাঝে আমার অন্তরে আত্ম অহমিকা সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আমার মাঝে এমন একটি অহংকারবােধ সৃষ্টি হয় যে, আমার মাঝে অনেক সুন্দর গুণাবলী রয়েছে, এই যৌবন বয়সেই আমি দারুল উলূম দেওবন্দের মুহতামিম। আল্লাহ তাআলা আমাকে অনেক ইলমও দান করেছেন, মানুষও আমার ওয়াজ শ্রবণে বেশ আগ্রহী। রুপ সুষমাও আল্লাহ তা'আলা দিয়েছেন, সম্পদ এবং সম্মানও দিয়েছেন। তার পত্রের জবাবে হযরত থানবী রহঃ বললেন, ঠিক এক মাসের জন্য আগনি সমস্ত দায়িত্ব অন্য কারাে উপর ন্যস্ত করে আমার দরবারে চলে চলে আসুন। তার এ পত্র পেয়ে তিনি সাথে সাথে থানবী রহঃ এর দরবারে পৌছে গেলেন। সেখানে পৌছলে হযরত থানতী রহ, তাকে বললেন, ঠিক আছে আপনি এখানে থাকুন; শুধু একাটি কাজ করবেন যে, মসজিদের মুসল্লীদের জুতা সােজা করে দিবেন। হযরত কারী তৈয়াব সাহেব বহঃ নিজেই লিখেন যে, কিছু দিন এভাবে জুতা সােজা করার পরই আমার থেকে অহংকারী ও আত্ম অহমিকা চির বিদায় নিয়ে গেল। তাঁদের নিকট আত্মার এমন কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি ছিল যে, অহংকারকে মুলােৎপাটন করে দিতে সক্ষম ছিলেন।

নিরবতা অবলম্বনের স্বাদ

একবার হযরত মুফতী শফী রহঃ ও মাওলানা বিন্নুরী রহঃ হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ. এর খানকায় গেলেন। তাঁরা উভয়েই সে সময় যুবক ছিলেন। সবে মাত্র তাঁরা পড়া-শুনা শেষ করেছেন। অত্যন্ত শখ ও আগ্রহের সাথে তারা এই মনে করে হযরত থানভী রহঃ-এর দরবারে গেলেন যে, আমরা দারুল উলুম দেওবন্দ থেকেতাে পড়া-শুনা শেষ করলাম, এখন কিছু দিন বুযুর্গদের ছােহবত তথা সংস্পর্শ লাভ করি। তাঁরা যখন থানভী রহঃ-এর দরবারে পৌছলেন, তখন ইশার নামায সমাপ্ত হয়ে গেছে। সেখানকার পুরাতন যারা ছিলেন সবাই আপন আপন কক্ষে চলে গেলেন। সেখানে ছােট কক্ষ ছিল। তাঁদের জন্যও একটি কক্ষ বরাদ্ধ দেয়া হল। তাঁরা যখন সে কক্ষে গেলেন তখন কোন একটি বিষয়ে আলােচনা চলছিল। তাঁরা দু'জনেই ছিলেন অনেক বড় ও অভিজ্ঞ আলেম। তাই উক্ত বিষয় নিয়ে তাঁদের মাঝে খুব জোর বিতর্ক চলছিল। উভয়ই আপন মতের পক্ষে বিভিন্ন দলীল-প্রমাণ পেশ করে যাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় সেখানকার একজন তত্ত্বাবধায়ক এসে বললেন, আপনারা তাে এখানে নতুন এসেছেন, এখনাে আপনাদের জানা নেই যে, এখানে ইশার নামাযের পর কথা-বার্তা বলা নিষেধ। যদি কথা বলতে হয়, তাহলে আল্লাহ তা'আলার সাথে কথা বলবেন। আজ প্রথম দিন, তাই আজ আপনাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি। পরবর্তীতে আর কখনাে আপনাদেরকে ইশার নামাযের পর কথা বলতে দেখলে আপনাদের বিছানা খানকা হতে বের করে দেয়া হবে। তারা বলেন, সেই তত্ত্বাবধায়কের এমন সতর্কবাণী আমাদের মানসিকতাকে স্বচ্ছ ও বিশুদ্ধ করে দিয়েছে। এর পর থেকে আমরা সেখানকার নিয়ম নীতি ও শিষ্টাচার মেনেই চলেছি। আর আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে নিরবতা অবলম্বনের স্বাদ দান করেছেন।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন