পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের এক অমর সৃষ্টি এই আসমানী কবিতা। ১৯৪৬ সালে কবি জসীমউদ্দীনের ভাই নুরুদ্দিন আহমেদ এর শ্বশুর বাড়ি ফরিদপুর সদরের ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের (শিবরামপুর স্টেশন বর্তমান আমিরাবাদ স্টেশনের পাশে) রসুলপুর গ্রামে বেড়াতে যান কবি। সেখানে বেড়াতে গিয়েই এই আসমানীর দেখা পান। তখন আসমানীর বাড়ির উঠানে আসমানীর সামনে বসেই তিনি এ কবিতা লেখেন। পরবর্তীতে কবিতাটি ১৯৪৯ সাল তাঁর ‘এক পয়সার বাঁশি’ কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত হয়।
কবিতা
আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশিথাপড়েতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি।পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে,ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।খোসমানী আর আসমানী যে রয় দুইটি দেশেকও তো যাদু, কারে নেবে অধিক ভালবেসে?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন