সকলের তরে সকলে আমরা ভাবসম্প্রসারণ

সকলের তরে সকলে আমরা ভাবসম্প্রসারণ | পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না ভাব সম্প্রসারণ | আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে ভাবসম্প্রসারণ

পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না।
অথবা, 
আপনারে রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা
জন্ম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা
অথবা, 
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।
অথবা, 
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

মূলভাব : শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যাপৃত থাকার জন্যই মানুষ জন্মগ্রহণ করে না অপরের কল্যাণ সাধনের মধ্যেই মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত

সম্প্রসারিত ভাব : ফুল পরহিত ব্রতে উৎসর্গীকৃত জীবনের সার্থক প্রতিনিধি। সে কখনো তার নিজের প্রয়োজনে ফোটে না। সে তার সৌরভ ও সৌন্দর্যে সকলকে মোহিত করে। সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে সে শোভা পায় সকলের মনোরাজ্যে । নিজের সৌন্দর্য ও সৌরভ অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেয়াতেই তার সার্থকতা। স্বীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্যের জন্য পবিত্রতার প্রতীক ফুল দেবতার চরণে নিবেদিত হয় নৈবেদ্য হিসেবে এভাবে ফুটন্ত ফুল তার অপার সৌন্দর্য ও পবিত্র সৌরভ বিলিয়ে একসময় নিঃস্ব হয়ে বৃত্তচ্যুত হয়ে পড়ে । মানব জীবনকেও ফুলের সাথে তুলনা করা যায়। মানুষ শুধু ভোগ- বিলাস ও নিজ স্বার্থোদ্ধারের জন্যই জন্মগ্রহণ করেনি। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তার জীবনের চরম ও পরম সার্থকতা। পরের কল্যাণ সাধনই মহত্ত্বের লক্ষণ। জগতের সাধু ও মহৎ ব্যক্তিরা তাই করেন। তাঁরা সর্বদা পরের হিত সাধনে ব্যাপৃত থাকেন এবং পরের তরে জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। কেননা প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসার বিতরণ ও ব্যক্তিস্বার্থ পরিহারের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। মহৎ ব্যক্তিগণ বিশ্ব মানবের আদর্শ। যেমন: মহাত্মা গান্ধী, মওলানা ভাসানী জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রিয় এবং সকলের আপনজন। তাঁদের জীবন পুষ্পের ন্যায় পরার্থে উৎসর্গীকৃত। পক্ষান্তরে, ফ্রাঙ্কেস্টাইনের মতো স্বার্থপর ব্যক্তি মনে করে সমস্ত জগৎটা তার একার উপভোগ্য। সকলকে বঞ্চিত করে এ ধরনের স্বার্থপর ব্যক্তিরা একাই বড় হতে চায়। ফলে বিদ্বেষ, অমিল, কলহ, হিংসা মনুষ্য সমাজকে কলুষিত করে তোলে।

মন্তব্য : আত্মসুখ অন্বেষণের মাঝে প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের সকলের উচিত পরের হিতার্থে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেয়া।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন