নারীদের সাদাস্রাব: শরয়ী দৃষ্টিকোণ

নারীদের সাদাস্রাব :শরয়ী দৃষ্টিকোণ | সাদা স্রাব | সাদা স্রাব কেন হয় | সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়

নারীদের সাদাস্রাব বের হলে কি কাপড় পরিবর্তন করে   নামাজ পড়তে হবে নাকি এমনিতেই নামাজ পড়া যাবে?

হায়েজের মেয়াদ ছাড়াও বিভিন্ন সময় নারীদের লজ্জাস্থান থেকে যে সাদা স্রাব বের হয় তা নাপাক। চাই তা লিকোরিয়া রোগের কারণে হোক বা ভিন্ন কোনো কারণে হোক। নামাযরত অবস্থায় যদি কোনো নারীর লজ্জাস্থান থেকে এধরনের সাদাস্রাব বের হয় তাহলে ওযু ভেঙ্গে যাওয়ার দরুন তার নামাযও নষ্ট হয়ে যাবে এবং এতে কাপড়সহ দেহের যে জায়গায় লাগবে তা নাপাক হয়ে যাবে। সাদাস্রাব থেকে পবিত্র না হয়ে এভাবে নামায চালিয়ে যাওয়া বৈধ হবে না।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

قَالَ عَطَاءٌ: «تَوَضَّأْ مِنْ كُلِّ حَدَثٍ مِنَ الْبَوْلِ، وَالْخَلَاءِ، وَالْفُسَاءِ، وَالضُّرَاطِ، وَمِنْ كُلِّ حَدَثٍ يَخْرُجُ مِنَ الْإِنْسَانِ

হযরত আত্বা রহি. বলেন, অযু কর প্রত্যেক হদসের কারণে। যেমন পেশাব, পায়খানা, বায়ু বের হওয়া শব্দসহ বা শব্দ ছাড়া এবং প্রত্যেকটি হদসের কারণে  যা মানুষের শরীর থেকে বের হয়। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক-১/১৩৯, হাদীস নং-৫২৭]

 
তাই কারো যদি লিকোরিয়া রোগে বা এমনিতেই সাদাস্রাব নির্গত হয় তাহলে এটাও মযীর মতো নাপাক বলে গণ্য হবে এবং তাতে ওযু ভেঙ্গে যাবে।

ফাতাওয়ায়ে শামীতে এসেছে

  کما فی رد المحتار: ․․․․ ومن وراء باطن الفرج فإنہ نجس قطعاً ککل خارج من الباطن کالماء الخارج مع الولد أو قُبَیْلہ الخ 
আর যোনির ভিতরের অংশ থেকে যা বের হয় তা একেবারেই নাপাক, যেমন ভিতর যা কিছু বের হয় তার মতো, যেমন শিশু জন্মের সাথে যে পানি বের হয় তার মতো।

তবে কারো সাদাস্রাব যদি ধারাবাহিকভাবে সব সময় নির্গত হতে থাকে এবং এপরিমাণ সময় সে পবিত্র অবস্থায় না থাকে  যাতে সে ওযু করে শুধু ঐ ওয়াক্তের ফরজ নামায আদায় করতে পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট নারী "অপারগ" বলে গণ্য হবে।

এরূপ নারীর ক্ষেত্রে বিধান হলো যে, সে নারী প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্ত আসার সাথে সাথেই বা ওয়াক্তের ভিতরে ওযু করবে এবং সেই ওযু দিয়ে যে পরিমাণ ইচ্ছা ফরজ,নফল নামায এবং কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবে।

যতক্ষণ পর্যন্ত সেই নামাযের ওয়াক্ত বাকী থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সময়ে সাদাস্রাব নির্গত হওয়ার দরুন তার ওযু ভাঙ্গবে না। তবে সেই ওয়াক্ত শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার ওযু এমনিতে এমনিতেই ভেঙ্গে যাবে।
অন্য ওয়াক্তের নামাযের জন্য পুনরাই নতুন করে ওযু করতে হবে।

আর যদি কোনো নারীর এই পরিমাণ সময় ফাঁকা যায় অর্থাৎ সাদাস্রাব বন্ধ থাকে যাতে সে চার রাকাত নামায বা সেই ওয়াক্তের নামায আদায় করতে পারে তাহলে  সে সময়েই নামায পড়বে। আর যদি উক্ত পরিমাণ সময়ও সাদাস্রাব বন্ধ না থাকে তাহলে সে ঐ ওয়াক্তের  ওযু দিয়েই নামায পড়তে পারবে।

তাই কোনো নারী যদি অপারগ না হয় অর্থাৎ উপরে উল্লেখিত  অবস্থা দেখা না দেয় তাহলে যখনই সাদাস্রাব বের হবে তখনই তার ওযু ভেঙ্গে যাবে। অতঃপর পবিত্রতা অর্জন করে কাপড় পরিবর্তন করে পুনরাই নামায পড়তে হবে।

রেফারেন্স ___
 ইমদাদুল ফাত্তাহ ১/৭২: দুররে মুখতার ১/৩০৫: ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ওয়েবসাইট ফাতাওয়া নং: 10342 :হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-১৪৮-১৫১: ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪-৫০৫:  ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১০/২৬১

ولیس ھو فی حکم رطوبۃ الفرج الداخل کمافی امداد الفتاوی ج ( 1 / ۶۵ و ۷۴۔) 

وفی الدرالمختارج : ( ا / ۳۰۵) 
و صاحب عذر من به سلس بول لا یمکنه امساکه او استطلاق بطن ريح أوانفلات أو المستحاضۃ ۔۔۔۔ ان استوعب عذره تمام وقت صلاة مفروضة بان لا یجد في جميع وقتهاز منا يتوضأو یصلی فیہ خاليا عن الحدث ۔۔۔۔ وحکمہ الوضوء ۔۔۔۔ لکل فرض ۔۔۔۔ ثم یصلی بہ فیہ فرضا أو نفلا ، فاذا خرج الوقت بطل ۔

فى حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-وتتوضأ المستحاضة ومن به عذر كسلس بول واستطلاق بطن لوقت كل فرض ويصلون به ما شاءوا من الفرائض والنوافل- ويبطل وضوء المعذورين بخروج الوقت فقط  متى يثبت العذر - ولا يصير معذورا حتى يستوعبه العذر وقتا كاملا ليس فيه انقطاع بقدر الوضوء والصلاة وهذا شرط ثبوته

 (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح ، كتاب الطهارة، باب الحيض والنفاس والاستحاضة-148-151)

উত্তর প্রদানে:
মুফতী খাইরুল ইসলাম
হানাফী ফিকহ (Hanafi Fiqh) 
Facebook গ্রুফ

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন