বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ কি?

বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ কি - Bongo Tweet

বিশ্বগ্রামের ধারণা

'ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়' আমাদের স্বপ্নের গ্রামের ধারণা। এখানে সবাই সবাইকে চেনেন, প্রতিদিন সবার সাথে সবার দেখা হয়, রাত পোহালে একজন অন্যজনের খবরাখবর নেন, কুশলাদি বিনিময় করেন, সুখ ও দুঃখের ভাগীদার হন। গ্রামের মানুষের যে জীবনাচার, প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের যে মমত্ববোধ বা আন্তরিকতা রয়েছে শহুরে জীবনে তা হয়তো সম্ভব নয়। সারা বিশ্বের মানুষ ভৌগোলিক দূরত্বে থেকেও যদি গ্রামীণ পরিবেশের মতো একে অপরের পাশাপাশি থাকত তাহলে অর্থনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ আর ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ গড়ে সর্বত্র নিবিড় ও সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব হতো। বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজের ধারণার সূত্রপাত মূলত এসব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করেই।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং তথ্যের নিবিড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পরিচিতি ও সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হচ্ছে এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বগ্রাম সৃজনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা নিজেরাই অনুভব করতে পারি যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমোন্নয়নের কারণেই আমরা বিশ্ববাসী এখন কেউ কারো থেকে দূরে কিংবা বিচ্ছিন্ন নই।

বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রবক্তা কে?

বিশিষ্ট কানাডিয়ান দার্শনিক হার্বার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Herbert Marshal McLuha) ষাটের দশকে সর্বপ্রথম কীভাবে বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি এবং তথ্যের দ্রুত বিচরণ, স্থান এবং সময়ের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রাম বা ভিলেজে রূপান্তরিত করতে পারে সেই ধারণাটি সবার সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। 

বিশ্বগ্রাম বলতে কি বুঝায়?

গ্লোবাল ভিলেজ হলো এমন একটি পরিবেশ ও সমাজ যেখানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করাসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে পারে। 

তথ্য প্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার কারণে অবাধ ও সহজলভ্য তথ্য প্রবাহের উৎস তৈরি থেকে শুরু করে সার্বিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দূরশিক্ষণ, চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধিসহ বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এক কথায় সভ্যতার সুফল বিশ্বের সকল মানুষের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের এ ব্যাপারে সচেতনতা, সক্ষমতা, আগ্রহ, জ্ঞান, দক্ষতা এবং উপযোগিতা থাকা প্রয়োজন। এর সাথে হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার, নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্য ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা থাকতে হবে।

অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় তথ্য উন্মুক্ত ও সহজলভ্য করার কারণে ক্ষতিকারক এবং অসত্য তথ্য অনুপ্রবেশের আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনৈতিক হস্তক্ষেপ, সাইবার আক্রমণ এবং প্রযুক্তি বিভেদ-বৈষম্যেরও জন্ম দিচ্ছে। পৃথিবীর গুটিকতক তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীর ভারসাম্যকে বিপদগ্রস্ত করে তোলার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন