অদ্ভুত আস্তিক - ইসলামিক গল্প

অদ্ভুত আস্তিক - ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প - শাইখ আতিক উল্লাহ - বঙ্গ টুইট

পরিচিত এক ডাক্তার দম্পতি। দুজনেই ভালো ডাক্তার। স্ত্রী পারিবারিকভাবেই সাহিত্য-সংস্কৃতি অনুরাগি। ডাক্তারি প্র্যাকটিসের পাশাপাশি নাটক-থিয়েটারেও সময় দেন। গানের জলসা-ম্যাহফিলে যান। নিয়মিত বইপত্র কেনেন ও পড়েন। টুকটাক কবিতা লিখেন। বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরে আনাগোনা করেন। আগে নিয়মিত আজিজ সুপারে আড্ডা দিতেন। ডাক্তারির চেয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতির দিকে ঝোঁক বেশি। হালকার উপর ঝাপসা ধর্মকর্মও করেন। রমজানে কুরআন খতম করেন। নিত্য পাঁচওয়াক্ত না হলেও দুয়েক ওয়াক্ত পড়ার চেষ্টা করেন। 

স্ত্রী বনেদি পরিবার থেকে উঠে আসলেও, স্বামী নিতান্তই অজ পাড়া-গাঁ থেকে উঠে আসা মানুষ। মেধাবী ছাত্র। ঝকঝকে ফলাফল আর সরকারি চাকুরি আর রমরমা পসারের জোরেই হয়তো এমন ‘পাত্রী’ কপালে জুটে গেছে। মানুষটা ভালো। নিপাট ভদ্রলোক। আমুণ্ডুপদনখ ডাক্তার। ডাক্তারি ছাড়া অন্য কোনো দিকে আগ্রহ নেই বললেই চলে। ধর্মকর্ম দূরের কথা, পশ্চিম দিকে ফিরে আছাড়ও খান না। জুমা তো পড়েনই না, ঈদেও যান না। ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। আবার তিনি যে নাস্তিক, তাও না। স্ত্রীর মতো সাহিত্য-সংস্কৃতির বাতিক নেই। উল্টো স্ত্রীর এসব নিয়ে পড়ে থাকা নিয়ে মাঝেমধ্যে কৌতুক করতে ছাড়েন না।

স্ত্রীর মনে স্বামীর সাহিত্য-সংস্কৃতিবিরাগ নিয়ে চাপা অনুযোগ আছে। অন্য বান্ধবীরা দিব্বি স্বামীদের নিয়ে থিয়েটার-মঞ্চে যায়। বইপত্র পড়ে। কবিতা উৎসবে যায়। তাকে একা একা যেতে হয়। 
এই ডাক্তারের কথা শুনে বেশ কৌতুহলী হয়ে তাকে দেখার জন্য বাসা পর্যন্ত গিয়েছি। তার প্রতি কৌতুহলী হওয়ার কারণঃ তার অদ্ভুত এক উক্তি। তিনি স্ত্রীর শত অনুরোধেও কখনো থিয়েটার-মঞ্চে বা সিনেপ্লেক্সে যেতে রাজি হননি। প্রথম প্রথম স্ত্রী স্বামীকে সাথে নিতে না পেরে অভিমান করতেন। রাগ করতেন। ঝগড়া করতেন। কিন্তু স্বামীকে টলাতে পারেননি। কারণ জানতে চাইলেন,

-কেন যাবে না, গেলে কী সমস্যা?
স্বামী অদ্ভুত এক উত্তর দিলেন,

‘‘ শোনো রুবিনা, আমি নামাজ পড়ি না। ধর্মকর্ম করি না। কিন্তু তোমার সাথে নাটক-সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা মনে হলেই,  একটা ভয় মনে জেগে ওঠে। এসব দেখতে গিয়ে যদি ওখানে আমার মৃত্যু হয়ে যায়, নিঃসন্দেহে আমার ঠিকানা সোজাসুজি জাহান্নাম। আজরাইল একেবারে হাতেনাতে প্রমাণসহ হাজির। আল্লাহর কাছে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো উপায়ই থাকবে না। এখন নামাজ না পড়লেও, একসময় খুব ভালো হয়ে যাবো। কিন্তু চুরি করতে গিয়ে বমাল ধরা পড়লে আর রক্ষে নেই। আল্লাহ পত্রপাঠ বলে দিবেন- গো টু দ্য হেল।



ইবারতঃ
এখন নামাজ না পড়লেও পরে ভালো হয়ে যাবো, এটা শয়তানের বহুল প্রচলিত ‘মোয়া’। এই ফাঁদ বড় মারাত্মক আর লোভনীয়। এই ‘মুলো’ ঝুলিয়ে শয়তান বহুত লোককে উদাসীন করে রেখেছে। 
যাই হোক, মানুষটার উত্তর একদিকে যেমন মজার, আরেকদিকে ভাবনা উদ্রেককারী।

সংযোজন -
ও হাঁ, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। রুবিনা আপা তার স্বামীসহ হজ করে এসেছেন। হজ করার কারণটাও বেশ অদ্ভুত। ডাক্তার দম্পতি প্রতি বছর বিদেশে বেড়াতে যান। একেকবার এক দেশে। একটাই মাত্র ‘মেয়ে’। টাকার অভাব নেই। সাধ-আহ্লাদ পূরণে কোনো বাধা নেই। আগের বছর আমেরিকা বেড়াতে গিয়ে আশ মেটেনি। পরের বছরও আমেরিকা যাওয়ার জন্য সবকিছু ঠিকঠাক। হঠাৎ ডাক্তার ভদ্রলোকের মনে হল, হজে গেলে কেমন হয়? স্ত্রীকে ইচ্ছার কথা জানাতেই ‘কবিবিবি’ রীতিমতো আঁতকে উঠলেন। বিবির একান্ত ইচ্ছা, শেষজীবনে তৌবাতিল্লা করে ‘শাদা’ মানুষ হয়ে যাবো। এত তাড়াতাড়ি হজ? না বাপু। 

স্বামী নাছোড়। অগত্যা গিন্নিও নিমরাজি। হজ থেকে এসে দুজনের ভোল পুরোপুরি বদলে গেলো। রুবিনা আপা এখন হিজাব পরেন। আগের জাহান্নামভিতু ভদ্রলোকও এখন মোটামুটি নামাজি।
.
.
আমাদের মনে প্রশ্ন ছিল, এই মানুষটাকে আল্লাহ ফেরার সুযোগ করে দিলেন কেন? মূল কারণটা আল্লাহ তাআলাই জানবেন। আমাদের মনে হয়েছে, মানুষটার মনের গহীনে ‘আল্লাহভীতি’ চুপটি করে সুপ্ত ছিল। এই  ব্যাপারটা আল্লাহর বড়ই পছন্দের। তাই কাছে টেনে নিয়েছেন।
আল্লাহু আলাম।


© শাইখ আতিক উল্লাহ

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন