আমার কুরআন

আমার কুরআন - শাইখ আতিক উল্লাহ - বঙ্গ টুইট


কুরআন কারীমের এক বিস্ময়কর দিক হলো,

অভিজ্ঞতার আলোকেই দেখা গেছে,
আমার যে কোনো পরিস্থিতি বা অবস্থাতেই ভীষণ তৃষ্ণা নিয়ে কুরআন কারীম খুলে তিলাওয়াত শুরু করলে, আজিব এক অবস্থা তৈরি হয়।

কঃ বুঝে বুঝে (নির্ভরযোগ্য তরজমা-তফসিরের সাহায্য নিয়ে, বা নিজে নিজে) পড়তে থাকলে, আমার তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির উপযোগি নসিহত সামনে চলে আসে।

খঃ বোঝার উপকরণ সুলভ না থাকার কারণে, মনে আক্ষেপ নিয়ে না বুঝেও তিলাওয়াত চালিয়ে গেলে, মনে এক ধরণের প্রশান্তি নেমে আসতে শুরু করে। এমনকি সমাধানও মনে চলে আসে। 
নিজের সুবিধা-অসুবিধায় কুরআনে আশ্রয় নিলে, তিলাওয়াত অব্যাহত রাখলে, একটু পর মনে সুস্থির ভাব আসতে শুরু করে। কুরআনি শব্দগুলো আমার ক্ষতস্থানগুলোর ওপর হেদায়াত ও নূরের প্রলেপ বোলাতে শুরু কর। আমার তৃষ্ণার্ত কলবে প্রয়োজনীয় নসিহা উদ্রেক করতে থাকে। আমার ঘাটতি-খামতিগুলো মনে করিয়ে দিতে থাকে। আমাকে আখেরাত সম্পর্কে সতর্ক আর আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির প্রতি আশাবাদী করে তুলতে থাকে।

হেদায়াত লাভের নিয়তে, নিজেকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে কুরআন পড়তে থাকলে, একটু পর মনে হতে থাকে, কুরআনের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি আয়াত যেন একেকজন ‘নবি’। এই নবিকে শুধুই আমার আত্মশুদ্ধি আর সংশোধনের জন্যই প্রেরণ করা হয়েছে। এই নবির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা শুধু আমার কাছে ওহি পাঠিয়েছেন। আয়াতটি অবলীলায় আমার নাফসের গোপন দিকগুলো আমার সামনে উন্মেচিত করে দিচ্ছে। একান্ত মনে কুরআন নিয়ে বসলে, মনে হতে থাকে, পুরো কুরআন এই মুহূর্তে দৈর্ঘে, প্রস্থে শুধুই আমার। আমি ছাড়া আর কারো নয়। এই মুহূর্তে আমি যেমন কুরআন ছাড়া আর কিছু ভাবছি না, দেখছি, কুরআনও আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবছে না। এই মুহূর্তে কুরআন যেমন শুধুই আমার, আমিও শুধুই কুরআনের।

ধরা যাক, ‘কুদসের’ সংকট নিয়ে ভাবতে ভাবতে কুরআন নিয়ে বসলাম। কুরআন আমাকে বলে দিবে, আমি কে। সেখানে কে আমার ভাই। কে আমার শত্রু। কোন কাতারে আমার থাকা উচিত। বীরত্ব সাহসিকতা কেমন হওয়া উচিত। বিশ্বাসঘাতকতা কাকে বলে।

তিলাওয়াত ও তাদাব্বুরকালে কুরআনের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি হরফ আমাকে ক্রমাগত শিখিয়ে চলে, পড়িয়ে চলে, দিকনির্দেশনা দিয়ে চলে, আমাকে আমার শক্তি-সামর্থ সম্পর্কে সতর্ক সজাগ করে চলে, আমার শক্তি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে চলে, আমার সামনে আমার চলার পথের মানচিত্র এঁকে দিতে থাকে। বিপদে আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে চলে। দুঃখ-দুর্দশায় আমাকে ধৈর্যশীল করে তুলতে থাকে। আমাকে বিজয়ের সুসংবাদ শোনাতে থাকে। আমার মধ্যে আত্মমর্যাদা বোধের প্রবল বোধ জাগরিত করতে থাকে।
কুরআন এভাবেই অমার একাকীত্বে আমাকে সঙ্গ দিতে থাকে। শোকে সান্ত্বনা দিতে থাকে। নিরানন্দে আনন্দ বিলাতে থাকে। ব্যথা-বেদনায় উপশম করতে থাকে। কঠিন পরিস্থিতিতে সুদিনের আশাবাদ জোগাতে থাকে। মাজলুম হলে সবর শেখাতে থাকে। জালেম হলে করুণ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করতে থাকে। মুহসিন বা সদাচারি হলে সুসংবাদ দিতে থাকে। পাপী হলে ‍উপদেশ দিতে থাকে।

উপদেশ ও হেদায়াতে উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকলে, কুরআন আমার মধ্যে মহোত্তম গুণাবলির বীজ বপন করতে থাকে। আমার ভেতরে থাকা সদগুণগুলোকে শক্তিশালী করতে থাকে। আমার মধ্যে বিদ্যমান বদগুণগুলোকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে থাকে। আমি জাহেল হলে, অল্পশিক্ষিত হলে, স্বল্পবুদ্ধির হলে, কুরআন আমাকে আমার বুঝবুদ্ধির স্তর অনুযায়ী সম্বোধন করে। আমি শিক্ষার্থী হলে, বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হলে, কুরআন আমার মধ্যে আমার মেধার স্তর অনুযায়ী চিন্তা ও ভাবনা উদ্রেক করে যেতে থাকে। 

কুরআন আমার সব। 
কুরআন আমার সবচেয়ে আপন বন্ধু।
কুরআন আমার শ্রেষ্ঠতম পাথেয়।
কুরআন আমার শ্রেষ্ঠতম সম্পদ।
কুরআন আমার অন্তরঙ্গতম আত্মীয়।

ইয়া রব, কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত বানিয়ে দিন। আমীন।

© শাইখ আতিক উল্লাহ

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন