‘ব্যাকরণ' শব্দটি সংস্কৃত। ব্যুৎপত্তি : বি + আ + √কৃ + অন। এর অর্থ— বিশেষভাবে বিশ্লেষণ। ব্যাকরণে ভাষার ভেতরগত নিয়ম বা শৃঙ্খলা বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা হয়।
পৃথিবীতে কয়েক হাজার ভাষা রয়েছে। প্রত্যেক ভাষারই রয়েছে নিজস্ব ধ্বনি (soud), শব্দ (word) ও বাক্য (sentence)। ভাষার এসব ধ্বনি কীভাবে উচ্চারিত হয়, শব্দ কীভাবে গঠিত ও রূপান্তরিত হয় এবং এই শব্দ কীভাবে বিন্যস্ত হয়ে বাক্যে পরিণত হয় তা নির্দেশ করাই ব্যাকরণের কাজ। ভাষাকে অবলম্বন করেই ব্যাকরণের সৃষ্টি। ভাষা সৃষ্টি হয়েছে আগে, ব্যাকরণ এসেছে ভাষার পথ ধরে। ভাষার গতি-প্রকৃতি, তার স্বরূপ, ধরন-ধারণ ইত্যাদি বিষয় ব্যাকরণে উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ ভাষার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা করাই ব্যাকরণের কাজ। সে জন্যই ব্যাকরণকে বলা হয় ভাষার সংবিধান। পণ্ডিতেরা বিভিন্নভাবে ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ নির্ণয় করেছেন। এখানে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হলাে :
১. যে বিদ্যার দ্বারা কোনও ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া তাহার স্বরূপটি আলােচিত হয় এবং সেই ভাষার পঠনে
ও লিখনে এবং তাহাতে কথােপকথনে শুদ্ধরূপে তাহার প্রয়ােগ করা যায়, সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে। [ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়]
২. যে শাস্ত্রের দ্বারা ভাষাকে বিশ্লেষণ করিয়া ইহার বিবিধ অংশের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় এবং ভাষা-রচনাকালে আবশ্যক মতাে সেই নির্ণীত তত্ত্ব ও তথ্য-প্রয়ােগ সম্ভবপর হইয়া উঠে, তাহার নাম ব্যাকরণ। [ড. মুহম্মদ এনামুল হক]
৩. যে শাস্ত্রে কোনাে ভাষার বিভিন্ন উপাদানের প্রকৃতি ও স্বরূপের বিচার বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিভিন্ন উপাদানের সম্পর্ক নির্ণয় ও প্রয়ােগবিধি বিশদভাবে আলােচিত হয়, তাকে ব্যাকরণ বলে। [মুনীর চৌধুরী ও মােয়াজ্জেম হায়দার চৌধুরী]
৪. এখন ব্যাকরণ বা গ্রামার বলতে বােঝায় এক শ্রেণির ভাষা বিশ্লেষণাত্মক পুস্তক যাতে সন্নিবিষ্ট হয় বিশেষ বিশেষ ভাষার শুদ্ধ প্রয়ােগের সূত্রাবলি। [ড. হুমায়ুন আজাদ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন