The Great Depression 1929 : বিশ্ব যখন থমকে গিয়েছিলো!

great depression 1929 | 1929 great depression | ১৯২৯ সালের মহামন্দার কারণ | wall street crash of 1929 | stock market crash 1929 | ১৯২৯ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কি | ১৯২৯ সালের ঘটনা | মহামন্দা ১৯২৯ | ১৯২৯ সালের মহামন্দার প্রভাব | Bongotweet.com

অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ঠিক কি বুঝায় এ বিষয়টায় আমরা কম বেশ সবাই অবগত৷ অর্থনীতিবিদ্যার সংজ্ঞামতে- দীর্ঘ সময় ধরে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ধীর গতি অথবা বাণিজ্যিক আবর্তন-এর সংকোচনকে মন্দা বলা হয়৷ মন্দার সময় বড় অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ধরন একই রকম থাকে। মন্দার সময়, জাতীয় গড় আয় (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা GDP), চাকরি, বিনিয়োগ সংক্রান্ত ব্যয়, উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার, পারিবারিক আয়, ব্যবসায়িক লাভ- এ সব কিছুই অনেক কমে যায়; মুদ্রাস্ফীতি ঘটে ( একই অর্থ ব্যয় করে কম পরিমান দ্রব্য ক্রয় করতে হয় )৷ এই সময়ে মানুষের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার এবং বেকারত্বের হার ব্যাপক হারে বেড়ে যায়৷ 

অর্থনৈতিক একটি মন্দায় যদি এতো কিছুই হয়ে যায়,তাহলে The Great Depression টা আবার কি? আসুন বুঝিয়ে বলছি-
দ্যা গ্রেট ডিপ্রেশন হচ্ছে এমন একটি অর্থনৈতিক মন্দার নাম যা বিশ্বব্যাপী ১৯২৯ সালে শুরু হয়েছিল এবং প্রায় ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত চলমান ছিলো। এটি ছিলো শিল্পোন্নত পশ্চিমা বিশ্বের দ্বারা দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে গুরুতর মন্দার অভিজ্ঞতা! যা অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং অর্থনৈতিক তত্ত্বে মৌলিক পরিবর্তনের জন্ম দেয়।

যদিও এটির শুরুটা যুক্তরাষ্ট্রে হয়েছিল, তবে এই মহামন্দা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই উৎপাদনে ব্যাপক হ্রাস, গুরুতর বেকারত্ব এবং তীব্র মুদ্রাস্ফীতির কারণ হয়েছিল। এর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবও কম বিস্ময়কর ছিল না৷ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে এই মহামন্দা গৃহযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকানদের সবচেয়ে কঠিন প্রতিকূলতার মুখোমুখি করে।

এই মহামন্দা বেশ কিছু কারনের মধ্যে অন্যতম হলো,
পন্যের প্রোডাকশন এবং সাপ্লাই এ যথাযথ ইকুয়ালিটি না থাকা৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমানে বহু রকমের পন্য রপ্তানি করেছিলো যার দরুন তারা সেই আনুপাতের প্রোডাকশন যুদ্ধের পরবর্তী সময়েও চালু রেখেছিলো,আর সেখানেই ঘটে আসল বিপত্তি৷ 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর সকল দেশ আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করে,তারা তাদের আমদানি কমিয়ে দেশেই পন্যের উৎপাদনের দিকে নজর দিতে থাকে,আর যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের   রপ্তানি কমে যেতে থাকে হঠাৎ করেই৷ গুদামে জমা পড়তে থাকে হাজার হাজার কোটি টাকার রপ্তানি পন্য,মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে লসে পড়ে প্রোডাকশন হাউজ৷ কোম্পানি গুলো তাদের প্রোডাকশন কমিয়ে নিতে বাধ্য হয়৷ যার ফলে কর্মী ছাটাই করতে হয়,বেকারত্বের হার বাড়তে থাকে৷ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমতে থাকে৷ প্রোডাকশন ব্যাপক পরিমানে কমে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে পন্যের দাম বাড়তে থাকে,যার ফলে কমতে থাকে মুদ্রার মান৷ মুদ্রাস্ফীতি ঘটে,আর এখানেই জন্ম হয় The Great Depression এর!

আরও একটা বড় কারন ছিলো সেই মহামন্দার, সেটা হলো স্টক মার্কেটের হঠাৎ দরপতন৷ ১৯২৯ সালের ঠিক আগের কিছু বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনমি ছিলো অনেকটা স্টেবল,মানুষ তখন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের হার বাড়িয়ে দিয়েছিলো৷ যার ফলে বাসা বাড়ির প্লাম্বার থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক শেয়ার মার্কেটে আসতে শুরু করে,এবং একটা সময় গিয়ে মার্কেটে বাবল ক্রিয়েট হয়৷ ২৯ অক্টোবর ১৯২৯,যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের ইতিহাসে সব থেকে বেশী প্যানিক সেল হয় বেশ কিছু কোম্পানির স্টক,এবং এই দিন কে আমেরিকার শেয়ার মার্কেটের Black Thursday হিসেবে অবিহিত করা হয়৷ ১২.৯ মিলিয়ন স্টক এই এক দিনেই বিক্রি হয় যার ফলে মার্কেটের সূচক অনেক নেমে যায় আর এভাবেই মানুষ লক্ষ কোটি টাকা শেয়ার মার্কেট থেকে এক দিনেই হারায়৷ এবং মার্কেট এক দিনই হারায় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার৷  

সেপ্টেম্বরে শেয়ার মার্কেটের সর্বোচ্চে পৌছানো এবং নভেম্বরে তার নিম্নগতির, মার্কিন স্টকের দাম (কাউলেস সূচক দ্বারা পরিমাপ করা হয়) ৩৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিলো। যেহেতু পতন এত নাটকীয় ছিল, এই ঘটনাটিকে প্রায়ই 1929 সালের গ্রেট শেয়ার মার্কেট ক্র্যাশ হিসাবে উল্লেখ করা হয়।

আর এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়ায় ২৪.৯% এ৷ মানুষ তাদের চাকরি হারায়,অভুক্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে৷ যার প্রভাব ছড়িয়ে পরে পুরো ইউরোপ আমেরিকায় এশিয়া আফ্রিকা মহাদেশে৷ 

এই সমস্যা গুলোর সাথে সাথে বিশ্বের পুজিঁপতিরা ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিলো,যার প্রভাব পড়লো পুরো বিশ্বের ক্রয় বিক্রয়ে৷ যে দেশ গুলো বাহিরের দেশের ঋণের উপর নির্ভরশীল ছিলো সেই দেশ গুলোতেও অর্থনৈতিক মন্দা আসতে শুরু করলো৷ একটি দেশের মন্দা মানে শুধু সেটা তার দেশেই যে প্রভাব ফেলবে বিষয়টা অতীতে এমন ছিলো না, যার ফলে প্রতিবেশী অর্থনৈতিক ভাবে ভালো দেশগুলো এই মন্দার স্রুতে পড়তে বাধ্য হলো৷ 

আরও একটি সমস্যা সেই সময় মন্দাকে আরও  বিরুপ আকার ধারন করতে সাহায্য করেছিলো তা হলো বিশ্বের অনেক দেশ তাদের মূল্যবান ধাতু যেমন, সোনা রুপার বিনিময় বন্ধ করে দিয়েছিলো৷ যেহেতু সে সময় সোনা রুপা ছিলো অর্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম তাই এটির ব্যাবহার কমানো মানে অর্থনৈতিক মন্দাকে আরও উসকে দেওয়া৷ 

এভাবেই The Great Depression এর প্রভাব ছড়িয়ে পরে পুরো বিশ্বে,আর থমকে দেয় পুরো বিশ্বের অর্থনীতিকে,যেটা চলমান ছিলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঠিক আগ পর্যন্ত!

লেখক: Ishmam  Qureshee Nayeeb

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন