উলামায়ে কিরামকে মাওলানা বলে সম্বােধন করা যাবে কি?

মাওলানা | মাওলানা বলা যাবে কি | bongotweet.com

প্রশ্ন : আমাদের দেশে নির্দিষ্ট একটা পর্যায় পর্যন্ত পড়ালেখা সমাপ্তকারীকে মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিস ইত্যাদি উপাধি দেয়া হয়। লােকেরা তাদেরকে মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিস, কারী বলে সম্বােধন করে। নিজেরাও নামের শুরুতে এসব উপাধি ব্যবহার করে থাকেন। উলামায়ে কিরাম নিজেদের লিখিত বই এবং অন্যান্য লেখালেখিতে লিখকের পরিচয় দিতে গিয়ে নিজেদের নামের শুরুতে ‘মুফতী, মাওলানা' উপাধি লিখে থাকেন। অনেক সময় এর প্রয়ােজনও হয়। কেননা, অনেক সচেতন পাঠক মাওলানা মুফতীদের লেখা ছাড়া কোনাে দীনী বই পড়তে চায় না। কিন্তু অনেক আরব বলেন, তােমরা বাংলাদেশীরা আলিমদেরকে ‘মাওলানা' বলাে। অথচ “মাওলানা" তাে কেবল আল্লাহ। সুতরাং তােমাদের এমনটি বলা মােটেও উচিত নয়। সুতরাং প্রশ্ন হলাে, উলামায়ে কিরামকে মাওলানা বলে সম্বােধন করা এবং তারা নিজেদের নামের শুরুতে মাওলানা মুফতী, মুহাদ্দিস, কারী উপাধি ব্যবহার করা কতােটুকু শরী'আত সম্মত? বিস্তারিত জানাবেন।

উত্তর : বুখারী শরীফ: ২/৬১০- এ এবং মুসলিম শরীফের বরাতে মিশকাত শরীফ ২৯৩ পৃষ্ঠায় একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সেই হাদীসে স্বয়ং রাসূলে আকরাম সা. হযরত যাইদ রা. কে বলেছেন, (আন্তা আখুনা ওয়া মাওলানা) অর্থাৎ তুমি আমাদের ভাই ও মাওলানা তথা বন্ধু। এ হাদীসে রাসূলে কারীম সা. সাহাবী যাইদ রা. কে মাওলানা বলে সম্বােধন করেছেন। সুতরাং প্রশ্নোক্ত আরবদের কথা সঠিক নয়। মাওলানা শব্দের একাধিক অর্থ আছে। তার একটি হলাে, প্রভু। এই অর্থটি ছাড়া অন্য সকল অর্থেই যে কোনাে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে মাওলানা বলা যেতে পারে। ইসলামী পরিভাষায় উলামায়ে কিরামকে মাওলানা বলা হয় এই অর্থে যে, তারা আমাদের দীনী মুরব্বী, নেতা ও বন্ধু। আর কার্যত তারা এমনটিই। এমনিভাবে অন্য যেসব উপাধি তাদের শানে ব্যবহার করা হয়, সেগুলােও নিজ নিজ অর্থে সঠিক। অপরদিকে উলামায়ে কিরাম যদি আল্লাহর নি'আমত প্রকাশ কিংবা মানুষ যেন তাদের থেকে উপকৃত হতে আসে, জনগণ তাদের লেখা ও বয়ান সাদরে গ্রহণ করে সে উদ্দেশ্যে নিজেদের নামের শুরুতে মাওলানা মুফতী, মুহাদ্দিস, কারী ইত্যাদি উপাধি লিখে বা ব্যবহার করে, তাহলে তাতে দোষের কিছু নেই। বরং জায়িয আছে। তবে কেউ যদি গর্ব স্বরূপ কিংবা পার্থিব কোনাে ফায়দা লাভের জন্য এমনটি করে, তাহলে তা জায়িয হবে না। 

(বুখারী শরীফ: ২/৬১০, মিশকাত শরীফ: ২৯৩, তাফসীরে। | কুরতুবী: ৯/২১৬, তাফসীরে মাযহারী: ১০/২৮৮,ফাতাওয়া হিন্দিয়া:৫/৩৭৭, ইমদাদুল ফাতাওয়া:৫/১৫৩)

উত্তর প্রদান:
দারুল ইফতা ওয়াল ইরশাদ 
আল-মারকাজুল ইসলামী, বাংলাদেশ। 
(উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা ও প্রশিক্ষণ বিভাগ) ২১/১৭ বাবর রােড, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা-১২০৭।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন