Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা | বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা | রচনা | স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু রচনা pdf | বঙ্গবন্ধুর জীবনী বাংলা রচনা ৩০০ শব্দ | রচনা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ | বঙ্গবন্ধু রচনা | মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু রচনা | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ৫০০ শব্দ | বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা রচনা | বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা | বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন রচনা ১২০০ শব্দের | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ১০০ শব্দ | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা pdf | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা যুগান্তর | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ৫০০ শব্দ | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ২০০০ শব্দ | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ৭০০ শব্দ | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ১০০০ শব্দ | বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা ৩০০ শব্দ | bongotweet.com

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

“পরাজিত শক্তি যখন হেঁটে বেড়ায় বিজয়ীর বেশে, 
যখন ফুলেরা কাঁদে, হায়েনারা হাসে;
যখন মানুষ ঘুমায়, পশুরা জাগে; 
তখন আমার ঠিকানায় আসে সেই পুরনাে পত্র, 
তখন আমার কানে ভাসে সেই পুরনাে ছত্র—
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম! 
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!
জয় বাংলা!”

কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় বলতে গেলে ঠিক এমনই— বাঙ্গালি জাতি যখনই সংকটাপন্ন হয় তখন যে ছত্র কানে ভাসে আর সেই ছত্রের সাথে যে নাম আমাদের স্মরণে আসে তা হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমাদের এই দেশ, এই জাতির অস্তিত্বই হয়তো পৃথিবীর বুকে গর্বভরে উচ্চারিত হতো না যদি এই নামটি না থাকত। বাংলার মাটি যে বাঙালি অমর নেতার জন্মে ধন্য হয়েছে, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নামটি উচ্চারণ করতে গেলেই যে শব্দ দুটি প্রথমে উচ্চারণ করতে হয় তা হলো 'জাতির জনক' ও বঙ্গবন্ধু। মূলত এই দুটি শব্দ দিয়েই তার পরিচয় ও অবদান আমাদের সামনে উঠে আসে। বিশ্বে যে সকল দেশ স্বাধীন হয়েছে তার কিছু কিছু দেশে স্বাধীনতার জন্য এক একজন মহীরূহ সদৃশ দেশনেতা অবদান রেখেছেন। বিশ্ব ইতিহাসের এই মহান ব্যক্তিদেরই একজন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির এক
মে রহমান। যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির এক মহাসন্ধিক্ষণে। মহান ব্যক্তির নেতৃত্ব লাভ করে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছিল বাঙালি জাতি। তার উদাত্ত আহ্বানেই বাঙালি অংশ নেয় গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে— অর্জন করে বহু প্রত্যাশিত স্বাধীনতা।

ব্যক্তিগত পরিচয়ে বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। ছয় ভাইবােনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। বাবা-মা ডাকতেন ‘খােকা বলে।

শিক্ষাজীবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সাত বছর বয়সে টঙ্গিপাড়া গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। নয় বছর বয়সে গােপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থানীয় মিশন হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে গােপালগঞ্জ মিশন হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স (এসএসসি) পাস করেন। তারপর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁর আর পড়া হয়ে ওঠেনি।

বৈবাহিক জীবনে বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল। 

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আন্দোলন

ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ফেডারেশনে যােগ দেন এবং এক বছরের মধ্যে বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সে বছরই তিনি গােপালগঞ্জ ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি হন। এভাবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল কায়েদ-ই-আযম মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘােষণা দিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তােলে। ফলে তাকে দু’বছর জেলে থাকতে হয়। জেলখানায় থেকেই ভাষা আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘােষণা করেন ও উৎসাহ দেন। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্মসম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদ, ও ১৯৫৫ সালে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দুইবার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। ১৯৫৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা কর্মসূচি পেশ করেন। ১৯৬৯ সালে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে বিচারের নামে প্রহসন করতে থাকে। তখন সারা বাংলায় ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-অভ্যুত্থানের কারণে সরকার তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এবং ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়ােজিত রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ মানুষের নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় না বরং পাকিস্তান সরকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দান— বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে ভাষণ দেন তাতেই বাংলার মানুষ দেশের স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। তার একটি ডাকে দেশের মানুষ পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর সেটি ছিল স্বাধীনতার ডাক। পাকিস্তানি সরকারের কাছে গ্রেফতারের পূর্বে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি স্বাধীনতার ডাক দেন। তার এই ডাকেই বাংলাদেশের মানুষ মক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন দেশ অর্জন করে। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি তিনি বাংলার মাটিতে পা রাখেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ‘জাতির জনক' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। 

স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু

লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকার ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল— “শেখ মুজিব ঢাকা বিমানবন্দরে পদার্পণ করামাত্র নতুন প্রজাতন্ত্র এক সুদৃঢ় বাস্তবতা লাভ করে।” স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়টুকু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে তাঁর সরকারকে অগণিত সমস্যা মােকাবিলা করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং জাতিগঠনে কার্যক্রম শুরু হয়। আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলাে লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা। স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হয়। পনেরাে মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একশত চল্লিশটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পথ নির্দেশনা নির্ধারণ করেন, “সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারাে প্রতি বিদ্বেষ নয়।" বস্তুত মুজিব সরকারই গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলাের সূচনা করেন। 

আদর্শ ও দেশপ্রেমের বঙ্গবন্ধু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল বাংলার স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠা। শৈশব-কৈশাের থেকে তিনি এই আদর্শ নিয়েই বড় হয়েছেন। এক অদ্ভুত চারিত্রিক দৃঢ়তার অধিকারী ছিলেন তিনি। তার এই চারিত্রিক দৃঢ়তার পেছনে ছিল গভীর অধ্যয়ন, জানাচেনা-শােনা ও দেখার গভীর অন্তর্দৃষ্টি। তাঁর ছিল মানুষকে ভালােবাসা ও সাহায্য করার জন্য দরদি মন। মানুষের দুঃখ তাঁকে চিন্তাক্লিষ্ট করে তুলতাে, তাকে আবেগতাড়িত করত। আর সেজন্যই বাঙালি জাতির ভাগ্যকে জয় করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনের প্রতি তাকিয়ে দেখার সুযােগ পাননি। দেশের জন্য জেল-জুলুম, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, শাসকগােষ্ঠীর অত্যাচার সবকিছু সহ্য করেছেন। কিন্তু বাংলার মানুষের সাথে কখনাে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তার লক্ষ্য ছিল, বাংলার মানুষের মুক্তি। একজন মহান নেতা হবার সবকটি গুণই আমরা তাঁর মধ্যে খুঁজে পাই।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু ও বাংলাদেশের কালো অধ্যায়

স্বাধীন বাংলাদেশে পথভ্রষ্ট কিছু সংখ্যক সামরিক আমলা, ক্ষমতালােভী দেশবিরােধীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে কালাে অধ্যায়ের সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড কেবল ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা নয়, বরং এটি ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এই নেতাকে যে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল, এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালাে অধ্যায়। কবির ভাষায়—

“আমরা বাহান্নতে মরেছি দলে দলে, 
আমরা একাত্তরে মরেছি ঝাঁকে ঝাঁকে,
আমরা পঁচাত্তরে মরেছি সপরিবারে।” 

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনার উপসংহার

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। এই মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের যথার্থ উচ্চারণ:

“যতদিন রবে পদ্মা-মেঘনা/গৌরী-যমুনা বহমান। 
ততদিন রবে কীর্তি তােমার/শেখ মুজিবুর রহমান।”

তার কীর্তি ও অবদান বলে শেষ করার নয়। তার নাম বাংলার মাটিতে, বাংলার কথায়, বাঙালির জাতিসত্তায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে আজীবন।

নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত লিখুন :