শিষ্টাচার রচনা

শিষ্টাচার | শিষ্টাচার কাকে বলে | শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ | শিষ্টাচার রচনা | সম্বােধনের শিষ্টাচার প্রসঙ্গ রাসুল | শিষ্টাচার শব্দের অর্থ | শিষ্টাচার শব্দের অর্থ কি | অনুচ্ছেদ শিষ্টাচার | শিষ্টাচার বলতে কি বুঝায় | সম্বােধনের শিষ্টাচার | শিষ্টাচার রচনা hsc | বাংলা অনুচ্ছেদ শিষ্টাচার | অনুচ্ছেদ রচনা শিষ্টাচার | শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ রচনা | bongotweet.com

ভূমিকা :
মানুষ দৈনন্দিন জীবনে কথাবার্তা, চাল-চলন, আহার-বিহার ও সার্বিক আচরণে যে শালীনতা প্রকাশ করে তা-ই শিষ্টাচার। মানুষ সমাজজীবনে বাইরের সৌজন্যবােধকে প্রকাশ করে নিজেকে মার্জিত ও বিনয়ী স্বভাবের ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় । প্রকৃতপক্ষে যারা কেবল কৃত্রিমভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায় তার কৃপটচারী। পক্ষান্তরে, ভেতরে-বাইরে যে সমান মার্জিত ও বিনয়ী তার মধ্যে প্রকাশ ঘটে শিষ্টাচারের। বলা যায়, মানবের ভেতর সত্তার মার্জিত আচরণের বহিঃপ্রকাশ শিষ্টাচার। শিষ্টাচার মানুষের অন্যতম প্রধান গুণ।

শিষ্টাচারের স্বরূপ : শিষ্টাচারকে একক একটি গ্রুপ না বলে একগুচ্ছ ভালাে গুগের সম্মিলন বলা যায়। একজন ব্যক্তি ভদ্র কি অভদ্র, উদ্ধত নাকি শান্ত সবকিছুরই প্রকাশ ঘটে ব্যক্তিআচরণে। উদ্ধত ব্যক্তি নম্র আচরণে অপারগ। সুতরাং তার পক্ষে শিষ্ট আচরণও সহজ কাজ নয়। মানব আচরণের মধ্য দিয়ে তার যথার্থ ব্যক্তিত্বকে নিরূপণ করা যায়। তাই ব্যক্তির আচরণের মধ্যেই শিষ্টাচারের স্বরূপ বিদ্যমান। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ কাটা পর্যন্ত কাজেও শিষ্টতাকে চিনে নেওয়া যায়। ভদ্রোচিত চুল কাটা যেমন শিষ্টতার মধ্যে পড়ে, তেমনি দুর্বিনীত আচরণ শিষ্টাচারের অঙ্গ হতে পারে না। সুরুচি, কথা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নম্র স্বরে কথা বলা ইত্যাদির মধ্যেও শিষ্টাচারের প্রকাশ ঘটে। মােটকথা, ব্যক্তির সর্বোত্তম আচরণই শিষ্টাচার । শিষ্টাচার সকলের মধ্যে বর্তমান থাকা বাঞ্ছনীয়।

শিষ্টাচার শিক্ষা : শিষ্টাচার শিক্ষার জন্য পরিবারই প্রথম এবং প্রধান শিক্ষালয়। পরিবারের বড়দের মধ্যে শিষ্টাচারের অভাব হলে নতুন শিশুর পক্ষে শিষ্টাচার শেখা সম্ভব নয়। শিশুর প্রথম পাঠশালা তার পরিবার। শিষ্টাচার অর্জনের পাঠটি পরিবার থেকেই নেওয়া। শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই অনুকরণপ্রিয়। তাই তাদের চোখের সামনে যত শিষ্ট আচরণ করা যায় ততই তাদের আচরণে শুদ্ধতা আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া হয়। গুরুজনের সাথে ছাত্রের আচার-ব্যবহার, সমাজের অন্যান্য ব্যক্তির সাথে তার আদব-কায়দা কেমন হবে তা বিদ্যালয়েও শিক্ষা দেওয়া হয়। শিষ্টাচার শুধু শিক্ষা দেওয়ার বিষয় নয় একে নিজ গুণেও নিজের মধ্যে ধারণ করতে হয়, তবেই নন্দিত ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ ঘটে জীবনে। 

শিষ্টাচারের গুরুত্ব : মানবজীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। শিষ্টাচার আছে এমন মানুষ সহজেই অন্যের মন জয় করতে পারে। ফলে সমাজে তার গ্রহণযােগ্যতা বৃদ্ধি পায়। শিষ্টাচারপ্রবণ মানুষ বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে সবার মাঝে, সবাই তাকে সমাজের নেতৃত্বে দেখতে চায়। ফলে ব্যক্তির পক্ষে মহৎ কাজ করাও সম্ভবপর হয়ে ওঠে। শিষ্টাচারী ব্যক্তি সাধারণ মানুষের জন্য মডেল বা অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। সমাজের মানুষ তাকে উঁচু অবস্থানে স্থান দেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহম্মদ (স.) বিধর্মীদের মন জয় করেছিলেন শিষ্টাচার প্রদর্শনের মাধ্যমে। তাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়ে আসা ব্যক্তি তার শিষ্টাচারে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে— এখানেই শিষ্টাচারের একটি শক্তির পরিচয় মেলে। মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অন্যের কাছ থেকে সদাচরণ আশা করে, প্রকাশ না করলেও মনে মনে স্নিগ্ধ ব্যবহার ও সামান্য প্রশংসা প্রত্যাশা করে। তাই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির শিষ্টাচার সমাজে বয়ে আনে সাম্য ও শান্তি। তাই সামাজিক জীবনে শিষ্টাচারের প্রয়ােজনীয়তা ও গুরুত্ব অত্যধিক। 

পারিবারিক জীবনে শিষ্টাচার : পারিবারিক জীবনে শিষ্টাচারের ভূমিকা অপরিসীম। যে পরিবারে শিষ্টাচার আছে তারা শান্তিময় জীবনযাপন করে। পরিবারে শিষ্টাচার আছে বলেই তারা একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ফলে পরিবারে কোনাে অনভিপ্রেত ঘটনার উদ্ভব হয় না। পক্ষান্তরে, শিষ্টাচারশুন্য পরিবার অশান্তির ঠিকানা। তারা শান্তিপ্রিয় জীবনে আগ্রহী হলেও শান্তি তাদের কাছে থেকে যায় অধরা। কেননা তাদের মধ্যে শিষ্টাচার নেই। ফলে উদ্ধত আচরণ দিয়ে তারা একে অন্যের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। পারিবারিক জীবনে যারা শিষ্টাচার চর্চা করে সমাজের অন্যান্য পরিবার তাদের ভালাে মানুষ হিসেবে গণ্য করে। একটি সম্রান্ত পরিবারে কোনাে অবস্থাতেই শিষ্টাচারের মতাে উৎকৃষ্ট গুণের চর্চা না হয়ে পারে না। তাই পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে আমাদের হতে হবে শিষ্টাচারপ্রিয়। 

ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার : ছাত্রজীবন মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। ছাত্রজীবনে শিষ্টাচারের মতাে উত্তম আচরণ নিজের স্বভাবধর্মে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে পরিণত জীবনে এর প্রতিফলন ঘটে। ফলে ব্যক্তিগত জীবন হয়ে ওঠে নান্দনিক। একজন শিষ্টাচারী ছাত্র সব শিক্ষক এবং সহপাঠী দ্বারা সমাদৃত হয় এবং বিদ্যালয়ে হয়ে ওঠে প্রিয়পাত্র। অন্যদিকে, অশিষ্টাচারী ছাত্র নিজে যেমন মন্দ অন্যের জন্যেও সে ক্ষতিকারক। সবাই তাকে অভিসম্পাত করে এবং তার জীবন হয় অর্থহীন। 

শিষ্টাচারহীন জীবনের পরিণাম : শিষ্টাচারহীন জীবন মানে ঔদ্ধত্যপূর্ণ অহংকারী জীবন। সে জীবনে ভদ্রতার কোনাে স্থান নেই। যার মধ্যে শিষ্টাচার নেই, তার জীবনাচরণে মার্জিত কিছু আশা করা বৃথা। শিষ্টাচারবর্জিত জীবন, সমাজ, রাষ্ট্র সবার জন্যই অকল্যাণকর। যে জীবনে শিষ্টাচারের অভাব রয়েছে তাকে সবাই ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে। সমাজে তার অবস্থান নিচে। অমার্জিত লােকের সাহচর্য কেউ কামনা করে না, এমনকি তার পরিবারও তাকে এড়িয়ে চলে। যে জীবনের সাহচর্যকে কেউ গ্রহণ করে না তার মতাে দুর্ভাগা আর কে আছে? 

উপসংহার : শিষ্টাচার অসংখ্য মানবিক গুণের সমষ্টি। এ গুণকে জীবনে ধারণ করতে হবে। শিষ্টাচারপূর্ণ জীবন মানুষকে অনেক উর্ধ্বে উত্থিত করে। সমাজের সর্বস্তরে মানুষ যদি এ গুণের অধিকারী না হয় তা হলে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে মানুষের মর্যাদা হ্রাস পায়। শিষ্টাচারী জীবনের গৌরব ধারণ করতে হলে দৈনন্দিন। জীবনের আচরণে শিষ্টাচারী হওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন