মুঘল সম্রাট নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুন - Mughal Emperor Nasiruddin Muhammad Humayun

মুঘল সম্রাট নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ হুমায়ুন - Mughal Emperor Nasiruddin Muhammad Humayun - Bongo Tweet
ছবি: © Study IQ education

প্রাথমিক জীবন ও সিংহাসনারােহণ

হুমায়ুন অর্থ ‘ভাগ্যবান’ (the Fortunate)। তিনি ছিলেন বাবরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। কামরান, আসকারী এবং হিন্দাল ছিলেন তাঁর অপর তিন ভ্রাতা। ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে মার্চ মাসে হুমায়ুন তার শিয়া মাতা মহিম বেগমের গর্ভে কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তুর্কি, আরবি ও ফার্সি ভাষায় জ্ঞান লাভ করার পর হুমায়ুন গণিত, দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বিশ বছর বয়সে তিনি বাদাখশানের এবং পরে হিসার ফিরােজা ও সাম্বালের শাসনকর্তার পদে নিয়ােজিত থাকেন। পিতার সাথে ভারতীয় অভিযানগুলােতেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

বাবর মৃত্যুমুখে পতিত হলে (২৬শে ডিসেম্বর, ১৫৩০ খ্রি.) উজীর নিজামউদ্দিন আলী বাবরের ভগ্নীপতি মাহদী খাজাকে সিংহাসনে উপবিষ্ট করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। হুমায়ুন সে চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে পিতার মনােনয়ন অনুসারে ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে ডিসেম্বর ২৩ বছর বয়সে আগ্রার সিংহাসনে আরােহণ করেন। 


সম্রাট হুমায়ুনের সাম্রাজ্যের সমস্যাবলি 

উত্তরাধিকার সূত্রে আগ্রার মসনদে আরােহণ করে হুমায়ুন অনুধাবন করলেন যে, তা আদৌ পুষ্পশয্যা (bed of roses) ছিল না। 

১. দুর্বল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী : বাবর প্রদত্ত সাম্রাজ্য মােটেই সুসংহত ছিল না। রাশব্রুক উইলিয়ামস্ বলেন, “বাবর তার পুত্রের জন্য এমন এক রাজত্ব রেখে যান যা কেবল যুদ্ধাবস্থা দ্বারাই সমন্বিত রাখা সম্ভব, অন্যথায় শান্তির সময় এটা ছিল দুর্বল, কাঠামােহীন ও মেরুদণ্ডবিহীন।” 

২. রাজপুতদের শত্রুতা : ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে খানুয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজপুতগণ বাবরের বশ্যতা স্বীকার করে বটে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হয়নি। তারা তাদের হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়। কাজেই রাজপুত সমস্যাও হুমায়ুনের পক্ষে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

৩. আফগানদের প্রতিরােধ : ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে এবং ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে গােগরার যুদ্ধে আফগানগণ পরাজিত হলেও তাদের শক্তি নিঃশেষিত হয়ে যায় নি। তারা প্রথমে মাহমুদ লােদী এবং পরে শেরখানের নেতৃত্বে মুঘলদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে হৃতরাজ্য ও ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সক্রিয় ও তৎপর হয়ে ওঠে। 

৪. বাহাদুর শাহের ক্ষমতা : গুজরাটের বাহাদুর শাহ সমগ্র রাজপুতনা অধিকার করে দিল্লী ও আগ্রা দখলের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার এ তৎপরতাও হুমায়ুনের জন্য বিপজ্জনক ছিল। 

৫. ভাইদের ষড়যন্ত্র : পিতার অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী ভ্রাতা কামরানকে কাবুল ও কান্দাহার, আসকারীকে সম্বল, হিন্দালকে আলােয়ার ও মেওয়াট এবং পিতৃব্যপুত্র সুলায়মান মীর্জাকে বাদাখশান প্রদান করে তুমায়ুন নিজের বিপত্তি ডেকে আনেন। বিশেষ করে উচ্চাভিলাষী কামরানের প্রতি অতি উদরতা প্রদর্শন পরবর্তীতে হুমায়ুনের ক্ষতির কারণ হয়েছিল।

৬. আত্মীয়-স্বজনের বিরােধিতা : পিতৃব্য মুহম্মদ সুলতান মীর্জা এবং ভগ্নিপতি মুহম্মদ জামান মীর্জা ছিলেন তাঁর চরম ও পরম শত্রু। হুমায়ুনের আত্মীয়-স্বজন ও অভিজাতবর্গ সকলেই ছিলেন সুযােগ-সন্ধানী, ষড়যন্ত্রপ্রিয় ও ক্ষমতালােভী। ভি. ডি. মহাজন যথার্থভাবেই বলেন, ‘ফলে তিনজন (ভ্রাতা) ছাড়াও হুমায়ুনের অসংখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল।' 

৭. সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব : মুসলমানদের মধ্যে সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাবও হুমায়ুনের বিপত্তির অন্যতম কারণ ছিল। এই কারণে বাবরের মৃত্যুর সাথে সাথেই ক্ষমতালাভের দ্বন্দ্বের উদ্ভব হয়। এরস্কাইন বলেন, “তরবারিই ছিল অধিকার নির্ধারণের চরম নিষত্তিকারক; এবং (বাবরের) প্রত্যেক পুত্রই ভ্রাতাদের বিরুদ্ধে স্বীয় ভাগ্য পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত ছিল।” 

৮. সেনাবাহিনীর অনৈক্য : হুমায়ুনের সেনাবাহিনী উজবেক, মুঘল, চাগতাই, আফগান, পারসিক, তুর্কি, ভারতীয় প্রভৃতি বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গঠিত ছিল। হুমায়ুনের ন্যায় দুর্বলচেতা সম্রাটের পক্ষে বহু জাতির সমন্বয়ে সংগঠিত সেনাবাহিনীর ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখা সম্ভব ছিল না। এটি তার জন্য একটি বিশেষ সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়।

হুমায়ুনের অযােগ্যতা ও অদূরদর্শিতা : পরিশেষে, হুমায়ুনের অদূরদর্শিতা ও চারিত্রিক কোমলতা তার বিপদের কারণ ছিল। অধিকাংশ সমস্যারই হােতা ছিলেন স্বয়ং তিনিই। বস্তুত হুমায়ুন নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন। 


সম্রাট হুমায়ুন ও কামরানের দ্বন্দ্ব

হুমায়ুনের সিংহাসনে আরােহণের অব্যবহিত পরে ভ্রাতা কামরানই তার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম অস্ত্র ধারণ করেন। তিনি সিন্ধুনদ অতিক্রম করে পাঞ্জাব ও হিসার ফিরােজা অধিকার করলে হুমায়ুন তা নীরবে সহ্য করেন। এর ফলে মুঘল বাহিনী সংগ্রহের স্থান তার প্রতিদ্বন্দ্বীর করতলগত হয় এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের সাথে হুমায়ুনের যােগাযােগও ছিন্ন হয়। 


মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত 

বাদশাহ হুমায়ুনের সবচেয়ে জটিল ও ব্রিতকর সমস্যা ছিল আফগানদের বিরােধিতা ও বিদ্রোহ। বুন্দেলখণ্ডের রাজা আফগানদের প্রতি মিত্রভাবাপন্ন থাকায় ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে হুমায়ুন তার বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়ে কালিঞ্জর দুর্গ অবরােধ করেন। কিন্তু প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তিনি উক্ত অবরােধ প্রত্যাহার করেন। এটি হুমায়ুনের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ও নির্বুদ্ধিতার স্বাক্ষর বহন করে। 

অতঃপর বিহারের আফগান নেতৃবৃন্দ অধিকতর শক্তি সঞ্চয় করে জৌনপুরের দিকে অভিযান পরিচালনা করলে হুমায়ুন অগ্রসর হয়ে ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌর সন্নিকটে দাদরাহের (দৌরাহ) যুদ্ধে তাদেরকে পরাজিত করে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এরপর উদীয়মান আফগান দলপতি শের খান চূনার দুর্গ অধিকার করে শক্তিশালী হয়ে উঠলে হমায়ুন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযানে অগ্রসর হন এবং ৪ মাস ধরে চুনার দুর্গ অবরােধ করে রাখেন। মৌখিকভাবে সুচতুর শের খান হুমায়ুনের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে দুর্গটি শের খানের কর্তৃত্বাধীনে রেখে হুমায়ুন গুজরাটের বাহাদুর শাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। 


সম্রাট হুমায়ুন ও বাহাদুর শাহ'র সংঘর্ষ

গুজরাটের বাহাদুর শাহ ছিলেন একজন উচ্চাভিলাষী শাসক। তার শাসনামলে গুজরাটে স্বর্ণযুগের সূচনা হয়েছিল। সংঘর্ষের কারণ : 

প্রথমত, বাহাদুর শাহ ছিলেন পাঠান শক্তির উৎস। তার মুঘল-বিরােধী কার্যকলাপ হুমায়ুনের প্রতি ছিল চ্যালেঞ্জস্বরূপ। কাজেই তার সাথে হুমায়ুনের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

দ্বিতীয়ত, বাহাদুর শাহ ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে মালব, ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে রায়সীন অধিকার করেন এবং ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে চিতােরের শিশোদীয় নেতৃবৃন্দকে পরাজিত করেন এবং বেরার, খান্দেশ ও আহমদনগরের বিরুদ্ধে পর পর সাফল্যজনক অভিযান পরিচালনা করে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এভাবে তাঁর রাজ্যসীমা মুঘল সাম্রজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে পড়লে সীমান্ত সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

তৃতীয়ত, বাহাদুর শাহ দিল্লী সাম্রাজ্য গ্রাস করবার উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ জামান মীর্জাকে আশ্রয় ও সহযােগিতা প্রদান করে হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধ্বজা উত্তোলনের উস্কানি প্রদান করেন। এতদ্ব্যতীত তিনি আলম খান লােদীর পুত্র তাতার খানকে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত বিয়ানা অঞ্চল অধিকার করতে সর্বতােভাবে সাহায্য করেন। তদুপরি বহু বিদ্রোহী আফগান দলপতিকে আশ্রয় প্রদান করেও বাহাদুর শাহ হুমায়ুনের বিরাগভাজন হন। 

চতুর্থত, দিল্লীতে নির্মিত দীনপনাহ ইমারতটি উদ্বোধন উপলক্ষে হুমায়ুন বাহাদুর শাহের শুভেচ্ছাবাণী প্রাপ্ত হয়ে সুসম্পর্ক বিদ্যমান রাখার মানসে গুজরাটে আশ্রয়প্রাপ্ত বিদ্রোহীদের প্রত্যার্পণের অনুরােধ জানান। কিন্তু বাহাদুর শাহ এই অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করায় মুঘলদের সাথে তার সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। 

পরিশেষে, বাহাদুর শাহের বিরুদ্ধে চিতােরের রাজমাতা রাণী কর্ণবতী হুমায়ুনের সাথে রাখী বন্ধনের (ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের) প্রস্তাবসহ সাহায্য কামনা করলে তিনি নতুন ভগ্নীর সাহায্যার্থে সসৈন্যে অগ্রসর হতে বদ্ধপরিকর হন। 


হুমায়ুন ও বাহাদুর শাহের যুদ্ধের ঘটনাবলি 

উপরিলিখিত কারণসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে অগ্রসর হয়ে হুমায়ুন মান্দাসােরের যুদ্ধে বাহাদুর শাহকে পরাজিত করেন। পরাজিত বাহাদুর শাহ পলায়ন করে পর্তুগীজ অধিকৃত দিউ দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করেন। হুমায়ুন মালব, চম্পানীর এবং ত্বরিত গতিতে অগ্রসর হয়ে গুজরাটের রাজধানী আহমদাবাদ অধিকার করেন (আগস্ট, ১৫৩৫ খ্রি.)।


হুমায়ুন ও বাহাদুর শাহের যুদ্ধের ফলাফল 

এরূপে সমগ্র গুজরাটের ওপর সর্বময় প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করে তার শাসনভার ভ্রাতা আসকারীর ওপর ন্যস্ত করে হুমায়ুন ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে স্বীয় রাজধানী আগ্রাতে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু আসকারীর কুশাসনে দেশে অরাজকতা দেখা দেয়। সেই সুযােগে বাহাদুর শাহ মুঘলদের হাত হতে গুজরাট পুনরুদ্ধার করেন। মালবও মুঘলদের হস্তচ্যুত হয়। এক বছরে দুটি প্রদেশ দ্রুতগতিতে বিজিত হয়; পরের বছরেই সেগুলাে একই গতিতে হস্তচ্যুত হয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অধ্যাপক এন. আই. চৌধুরীর সাথে একমত হয়ে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, ‘গুজরাটের বাহাদুর শাহ না থাকলে ভারতবর্ষের ইতিহাসে কোনাে শের শাহও থাকতেন না।' 


মুঘল-আফগান দ্বন্দ্ব বা হুমায়ুন-শের শাহের সংঘর্ষ 

হুমায়ুন যখন গুজরাটের বাহাদুর শাহের বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত তখন সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে আফগানরা মুঘলদের প্রচণ্ড হুমকি হয়ে দেখা দেয়। ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে মুঙ্গেরের সন্নিকটে সুরজগড়ের যুদ্ধে বাংলা ও বিহারের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে আফগান নেতা শের খাঁ সমগ্র বিহার অধিকার করেন। অতঃপর শের খা ১৫৩৪ এবং ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে পর পর দুটি সাফল্যজনক অভিযান বঙ্গদেশে পরিচালনা করে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তার উত্তরােত্তর শক্তি বৃদ্ধিতে হুমায়ুন শঙ্কিত হয়ে ১৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে অগ্রসর হয়ে চুনার দুর্গ আক্রমণ ও অধিকার করেন। এরপর হুমায়ুন গৌড় অবরােধ করে বাংলাদেশ বিজয় সম্পন্ন করেন (জুলাই, ১৫৩৮ খ্রি.)। ধূর্ত শের খা হুমায়ুনের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন না। বাংলাদেশে প্রায় ৯ মাসকাল হুমায়ুন আমােদ-প্রমােদে লিপ্ত থাকলে সে সুযােগে শের খা বারানসী, জৌনপুর, কনৌজ প্রভৃতি স্থান অধিকার করে বসেন। গত্যন্তর না দেখে জাহাঙ্গীর কুলী বেগের ওপর বাংলার শাসনভার অর্পণ করে হুমায়ুন ৫০০০ সৈন্যসহ রাজধানী অভিমুখে যাত্রাকালে ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে জুন গঙ্গা নদীর তীরে চৌসা নামক স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে শের খানের হস্তে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হন। হুমায়ুন নিজাম নামক জনৈক ভিস্তিওয়ালার সাহায্যে অতিকষ্টে গঙ্গানদী অতিক্রম করে আগ্রায় পলায়ন করতে সক্ষম হন। 

এ যুদ্ধে জয়লাভ করে শের খাঁ ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বাংলার রাজধানী গৌড়ে ‘শের শাহ’ উপাটি ধারণ করে নিজ নামে মুদ্রাঙ্কন ও খুতবা পাঠের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিগত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের মুঘল ও আফগানদের মধ্যে ক্ষমতা লাভের দ্বন্দ্ব ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। চৌসার যুদ্ধ তার নিষ্পত্তি করে দেয়। এ যুদ্ধে জয়লাভের ফলে শের শাহ পশ্চিমে কনৌজ হতে পূর্বে আসাম ও চট্টগ্রাম এবং উত্তরে রােটাস হতে দক্ষিণে বীরভূম পর্যন্ত এক বিস্তৃত অঞ্চলের ওপর স্বীয় আধিপত্য কায়েম করেন এবং শের শাহের সামরিক মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পক্ষান্তরে মুঘলদের সামরিক ও কূটনৈতিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। 

অতঃপর ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে ১৭ই মে হুমায়ুন ৩০,০০০ সৈন্যসহ কনৌজের নিকটবর্তী বিলগ্রামে শের শাহের ১৫,০০০ সৈন্যের সাথে শেষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। আবার এ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হুমায়ুন সিংহাসনচ্যুত হয়ে আশ্রয়ের অনুসন্ধানে দেশত্যাগ করেন। উল্লেখ্য আফগানদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধেও হুমায়ুন তার ভাইদের সাহায্য সহযােগিতা হতে বঞ্চিত হন। অতঃপর শের শাহ মােঘল সাম্রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে ভারতে পুনরায় আফগান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। 


সম্রাট হুমায়ুনের পরাজয়ের কারণ 

১. হুমায়ুনের অদূরদর্শিতা : পিতা বাবরের অন্তিম নির্দেশানুযায়ী তিন ভ্রাতা কামরান, আসকারী ও হিন্দাল এবং পিতৃব্যপুত্র সােলেমান মীর্জার মধ্যে সাম্রাজ্য বণ্টন করে তিনি অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন। ঐতিহাসিক ভি.ডি. মহাজন বলেন, “এ কার্য দ্বারা তিনি নিজেই নিজের হস্তকে দুর্বল করেন।” ("By doing so he weakened his own hand.") বাহাদুর শাহ কিংবা শের শাহের বিরুদ্ধে কেউই তুমায়ুনকে সাহায্য প্রদান করেন নি। 

২. রাজকোষের শূন্যতা : সুদীর্ঘ ১০ বছরকাল (১৫৩০—৪০ খ্রি.) হুমায়ুন প্রজাবর্গের মঙ্গল সাধনের কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে শুধুমাত্র ব্যর্থ যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থেকে রাজকোষে শূন্যতা আনয়ন করেন। ফলে জনগণ তার ওপর রুষ্ট হয় এবং বিপদের দিনে কেউই তাকে সাহায্য প্রদান করে নি। 

৩. শের শাহের ব্যাপারে ঔদাসীন্য : শের খার ক্ষমতা বৃদ্ধির সংবাদেও হুমায়ুন উদাসীন থাকেন এবং মহাজনের কথায়, “শের খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্বের ফলেই হুমায়ুনের পতন ঘটে।” শের খাঁর বিরুদ্ধে তিনি কোনাে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেননি বা করতে পারেননি। 

৪. বাহাদুর শাহের বৈরিতা : তিনি গুজরাটের বাহাদুর শাহের ক্ষমতার পূর্ণ ধ্বংসসাধন না করে এবং সাফল্যজনক অভিযান অর্ধপথে অসমাপ্ত রেখে বাংলায় অভিযান পরিচালনা করতে অগ্রসর হয়ে মারাত্মক ভুল করেন। এতে শত্রু শক্তি অর্জনে সক্ষম হয়। 

৫. যথাসময়ে প্রস্তুতি গ্রহণে বিলম্ব : চৌসার যুদ্ধের পর হুমায়ুন কনৌজ হতে বেনারস পর্যন্ত হারানাে অঞ্চলসমূহ নিজ অধিকারে আনয়নের প্রচেষ্টা না চালিয়ে এবং শের শাহের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক নীতি পরিহার করে আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ না করায় অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন। 

৬. বিপজ্জনক উত্তরাধিকার : উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত, পিতার সদ্য-প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য হুমায়ুন সুসংহত করবার সুযােগ পান নি। সিংহাসনে আরােহণের অব্যবহিত পর হতে শুরু করে শেষ পর্যন্ত তাকে বিদ্রোহ দমন ও যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকতে হয়। তার পতনের জন্য পরিস্থিতি, পরিবেশ ও বিশৃঙ্খল সাম্রাজ্য অনেকাংশে দায়ী ছিল।

৭. শের শাহের শ্রেষ্ঠত্ব : হুমায়ুন অপেক্ষা শের শাহ অসামান্য সামরিক কৌশল ও শক্তিমত্তার অধিকারী ছিলেন। কাজেই শের শাহের হাতে হুমায়ুনের পরাজয় ও পতন স্বাভাবিক ঘটনা বটে। 

৮. হুমায়ুনের ভােগবিলাস : চারিত্রিক দুর্বলতা, দূরদৃষ্টির অভাব এবং ব্যক্তিগত অযােগ্যতাই শেরশাহের বিরুদ্ধে হুমায়ুনের পরাজয়ের প্রধান কারণ ছিল। তাছাড়াও লেনপুল বলেন, “তিনি (হূমায়ুন) ক্রমাগতভাবে কোনাে বিষয়ে নিয়ােজিত থাকতে অসমর্থ ছিলেন এবং ক্ষণিকের বিজয়ের পর তিনি হেরেমের সুখে আত্মনিয়ােগ করতেন এবং যখন তার শত্রুরা তার প্রাসাদ ফটকে হানা দিতে থাকে তখনও আফিম সেবন করে মূল্যবান সময় অপচয় করতেন।

৯. হুমায়ুনের চারিত্রিক দুর্বলতা : সরলমনে মানুষের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন হুমায়ুন চরিত্রের আর একটি দোষ ছিল। শের শাহের মৌখিক আনুগত্যকে বিশ্বাস করবার ফলেই হুমায়ুনকে চৌসা ও কনৌজের যুদ্ধে শের শাহের হাতে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। পরিশেষে, ত্রিপাঠী বলেন, “হুমায়ুন তার ভাগ্যেরই শিকার হয়েছিলেন।”

১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে শের শাহের নিকট কনৌজের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পরবর্তী পনেরাে বছর হুমায়ুন নির্বাসিত জীবন যাপন করেন। এই সুদীর্ঘ সময় হুমায়ুন যাযাবরের মতই ভাগ্যের সন্ধানে এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিভ্রমণ করেন। ঈশ্বরীপ্রসাদ বলেন, “১৫ বছর ধরে তিনি ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের দ্বারা নিগৃহীত হন, কিন্তু তবুও তিনি কখনও মনের প্রশান্তি হারান নি এবং কঠিন ধৈর্য ও দৃঢ়সংকল্প সহকারে দুর্ভাগ্যকে সহ্য করেন।” রাজধানী পরিত্যাগ করে হুমায়ুনের কাশ্মীর যাত্রাকালে পথিমধ্যে কামরান অন্তরায় সৃষ্টি করলে তিনি সিন্দুদেশে গমন করেন। অতঃপর রাজা মালদেবের আমন্ত্রণক্রমে হুমায়ুন তথায় যাত্রা করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে মালদেব শের শাহের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে হুমায়ুনকে বন্দী করতে উদ্যোগী হলে হুমায়ুন পুনরায় সিন্দুদেশে গমন করেন। এরপর তিনি অমরকোটে যান এবং সেখানকার রাজপুত রাজা তাকে আশ্রয় দান করেন। এখানেই শেখ আলী আকবর জামির কন্যা হামিদা বানুর গর্ভে সর্বশ্রেষ্ঠ মুঘল সম্রাট মহান আকবর জন্মগ্রহণ করেন (২৩ শে নভেম্বর, ১৫৪২ খ্রি.)। হুমায়ুন অমরকোট হতে কান্দাহারে গমন করে তথায় এক বছরের শিশু আকবর এবং তার মাতাকে কামরানের নিকট রেখে পারস্য যাত্রা করেন এবং সাফাভী বংশীয় শাসক শাহ তাহমাসপের দরবারে আশ্রয় গ্রহণ করেন। অতঃপর (১) স্বয়ং শিয়ামত গ্রহণ করতে, (২) নিজ রাজ্যে তা প্রচার করতে এবং (৩) পারস্যের শাহকে কান্দাহার প্রদান করবার অঙ্গীকারে পারস্যের শাহ তাহমাসপের নিকট হতে ১৪,০০০ সৈন্য লাভ করে হুমায়ুন ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। 

প্রথমে তিনি কামরানের রাজ্য আক্রমণ করে কাবুল ও কান্দাহার অধিকার করেন (১৫৪৬ খ্রি.)। চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি কান্দাহার পারস্যের শাহকে সমর্পণ করেন। কিন্তু শাহ তাহমাসপের মৃত্যুর পর তিনি তা পুনরায় স্বীয় সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। অতঃপর কামরান ও আসকারীকে বন্দী করে তিনি মক্কায় প্রেরণ করেন। এই ঘটনার পর হুমায়ুন সসৈন্যে লাহােরে উপস্থিত হন এবং মাসিওয়ারা ও সরহিন্দের যুদ্ধে আফগান শাসক সিকান্দার শূরকে পরাজিত করেন। এভাবে দীর্ঘ ১৫ বছর দুঃখ-দুর্দশাপূর্ণ প্রবাসী জীবন যাপনের পর পাঞ্জাব, দিল্লী ও আগ্রা পুনরাধিকার করে পুনরায় ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সিংহাসন পুনরুদ্ধারের সুফল তিনি বেশি দিন ভােগ করতে পারেন নি। একদিন তিনি তাঁর পাঠাগারের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার কালে আজানের ধ্বনি শ্রবণকালে পা পিছলিয়ে নিচে পড়ে গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং সে আঘাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (২৪শে জানুয়ারি, ১৫৫৬ খ্রি.)। লেনপুল তাই যথার্থভাবেই বলেন, “যদি কোনাে প্রকার পতনের সম্ভাবনা থাকে, হুমায়ুন তার হাত হতে নিষ্কৃতি পেতেন না। তিনি সারা জীবন আছাড় খেয়েছিলেন এবং আছাড় খেয়েই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।”


সম্রাট হুমায়ুনের চরিত্র ও কৃতিত্ব 

সম্রাট নাসিরউদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন ছিলেন একজন আদর্শ পুত্র, আদর্শ স্বামী, আদর্শ পিতা এবং আদর্শ ভ্রাতা। ভাইদের মধ্যে তিনি সাম্রাজ্য বণ্টনের ব্যাপারে উদারতার পরিচয় দেন। অথচ তার সকল প্রকার দুর্ভাগ্যের মূলেই ছিল ভাইদের বিরােধিতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্র। মধ্যযুগের হানাহানি ও কলহমুখর বিশ্বে হুমায়ুন ছিলেন দয়া, ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার মূর্ত প্রতীক। 

ঐতিহাসিক ফিরিস্তার মতে হুমায়ুন ছিলেন চমৎকার চেহারার অধিকারী এবং তার গায়ের রং ছিল তাম্রসদৃশ। নম্রতা ও উপচিকীর্ষা (benevolence) হিল তার চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। হুমায়ুনের বদান্যতা এবং মহানুভবতা ছিল সর্বজনবিদিত। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল  প্রখর এবং জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র এবং কাব্য চর্চার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অসামান্য প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন সুকবি এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার মহৎ গুণে গুণান্বিত। তিনি দিল্লীতে ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে দিনপানাহ (বিশ্বাসীদের আশ্রম) নামক যে শহরটি নির্মাণ করেন তাতে একটি সুন্দর পাঠাগার ছিল। অসংখ্য সমস্যা, বিপদ, ঝঞ্ঝা থাকা সত্ত্বেও তিনি উক্ত পাঠাগারে জ্ঞানচর্চায় নিয়ােজিত থাকতেন এবং এ পাঠাগারের সিড়ি হতে পা পিছলিয়ে পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। স্মিথ বলেন, “হুমায়ুন শিক্ষিত, মার্জিত রুচিসমপন্ন ও শিষ্টাচারী ছিলেন।” আবুল ফজল বলেন— “হুমায়ুন আলেকজান্ডারের ন্যায় উদ্যোগী ও এরিস্টটলের ন্যায় জ্ঞানী ছিলেন। হুমায়ুনের শাসনামলে মুঘল রাজদরবার জাঁকজমকের জন্য খ্যাত ছিল। জৌহর, খুদামীর, শাহাবউদ্দিন কাকী প্রমুখ বিদ্বান ব্যক্তি তার রাজসতা অলংকৃত করেন। তিনি ছিলেন নিষ্ঠাবান মুসলমান। কিন্তু তাই বলে তিনি ধর্মান্ধ ছিলেন না। শিয়া মতবাদের অনুসারী হলেও তার প্রধান মহিষী হামিদা বানু বেগম এবং প্রধান অনুচর বৈরাম খানও ছিলেন শিয়া। লেনপুল বলেন, “ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন আনন্দদায়ক সঙ্গী ও অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি ছিলেন খ্রিস্টানােচিত গুণাবলির অধিকারী। এবং তার সারা জীবনই ছিল ভদ্রলােকসুলভ ব্যবহারে পূর্ণ।” হুমায়ুনের রাজত্বকালে মুঘল স্থাপত্য ও চিত্রকলারও উন্মেষ ঘটে। তার সাথে পারস্য হতে আগত মীর সৈয়দ আলী এবং খাওয়াজা আব্দুস সামাদ নামক প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে মুঘল চিত্রকলার শুভ সূচনা ঘটে। হুমায়ুনের অনিন্দ্যসুন্দর সমাধি সে যুগের মুঘল স্থাপত্যের একটি বিখ্যাত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নিদর্শন। 

একাধিক বার যুদ্ধে পরাজিত হলেও তিনি সকল ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত শৌর্যবীর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। শাসক হিসেবে তিনি তেমন কৃতিত্বের পরিচয় দিতে সমর্থ হন নি। তাঁর রাজত্বের প্রথম দশ বছর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকায় তিনি সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সক্ষম হন নি। বাংলা এবং গুজরাটের ব্যাপারে শাসক হিসেবে তার ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পরিচয় পাওয়া যায়। হুমায়ুনের দয়া-দাক্ষিণ্য , বদান্যতা, উদারতা ও সহিষ্ণুতা তার চারিত্রিক দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অতিরিক্ত অহিফেন (opium) সেবনের ফলে তার মস্তিষ্কের সজীবতা বিনষ্ট হয়েছিল এবং এটিই তার অব্যবস্থিতচিত্ততার কারণ ছিল। রাজকার্য অপেক্ষা আমােদ-প্রমােদেই তিনি অধিক সময় ব্যয় করতেন বলে বাহাদুর শাহ ও শের খানের ন্যায় শত্রুদের বিরুদ্ধে তিনি যথাসময়ে যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হন নি। তিনি স্বভাবসিদ্ধভাবে ধূর্ত কিংবা নিষ্ঠুর ছিলেন না। পিতার ন্যায় তিনি কঠোর বাস্তববাদী ও দৃঢ়সংকল্পের অধিকারী ছিলেন না। তাই লেনপুল বলেন, "তার চরিত্র আকর্ষণ করে, কিন্তু প্রভাবান্বিত করে না।” তার নামের অর্থ সৌভাগ্যবান, কিন্তু কোনাে হতভাগ্য সম্রাটেরই কখনও এমন ভুল নামে নামকরণ হয়নি।

তথ্যসূত্র:
বই: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি 
লেখক: হাসান আলী চৌধুরী 

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন