প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনই হয়েছিল বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে। তিনি সর্বদা উম্মতের কল্যাণ চিন্তায় থাকতেন। তার বর্ণিত হাদিসগুলো কেয়ামত পর্যন্ত উম্মতকে পথের দিশা দেখিয়ে যাবে।
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশাল হাদিসে ভাণ্ডার থেকে চয়ন করে উম্মতের জন্য বিশেষ কিছু উপদেশ এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপদেশ
ইলমে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
যে ব্যক্তি যে জাতির বেশ-ভূষা অবলম্বন করবে, সে কেয়ামতের দিন ঐ জাতির সাথে থাকবে।
যে ব্যক্তি পাজামা, লুঙ্গি টাখনুর নিচে পরে, সে জাহান্নামে যাবে।
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় (অনীহা প্রকাশপূর্বক) নামায বর্জন করে সে মুসলমান থাকে না।
যে ব্যক্তি প্রত্যুষে ওঠে (এবং স্বীয় কর্মে আত্মনিয়ােগে করে) বরকত তার পদচুম্বন করে।
তিন ধরনের লােকের সঙ্গ অন্তরকে মুর্দা করে দেয়।১. নিচু২. ধনী ও৩. নারী।
কষ্ট সহ্য করার বিনিময় জান্নাত আর প্রবৃত্তির দাসত্ব করার পরিণাম জাহান্নাম।
সবচেয়ে নিকৃষ্ট সে, যার বাহির এক রকম আর ভেতর আরেক রকম।
ঐ চোখ জাহান্নামে যাবে না যা আল্লাহর ভয়ে রােদন করে।
সৎকাজের আদেশদাতা ঐ পরিমাণ সওয়াব পায়, যা সৎ কাজ যে করে সে পায়।
অত্যাচার কেয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার রূপ ধারণ করবে।
কূটনীতিবাজ আল্লাহপাকের কাছে বড়ই ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট।
মদ সকল পাপের উৎস।
যৌবন উন্মাদনার একটি অংশবিশেষ। অতএব সাবধান।
পরিবার-পরিজনদের কষ্ট দিয়াে না, তাদের বৈধ চাহিদা পূরণ করাে।
এমন কথা বলাে না, যার কারণে পরে লজ্জিত ও বিভিন্ন অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিতে হয় ।
(পার্থিব ব্যাপারে) নিজের থেকে অবস্থাসম্পন্ন লােকদের কথা ভাববে না ; বরং অপেক্ষাকৃত মন্দ অবস্থা যাদের তাদের কথা মনে করবে। এতে তুমি ধৈর্য ও সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাবে।
গরীব, নিঃস্ব ও ইয়াতিমদের যাকাত দিবে, যাতে তাদের অভাব দূর হয়।
তিনটি কাজ মানুষকে কঠোরচিত্ত ও নির্দয় করে দেয়।১. নাচ-গান২. অতিমাত্রায় শিকার এবং৩. বাদশার দরবারে উপস্থিতি।
তােমার প্রকৃত বন্ধু ও হিতাকাঙ্ক্ষী সে, যে তােমাকে মন্দ পথ হতে বাধা দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। পক্ষান্তরে অসৎ সাথী সে, যে তােমাকে অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে দেখেও বাধা দেয় না; বরং উল্টো তােষামােদ ও প্রশংসা করে।
দান-খয়রাত, অসুস্থতা ও বিপদাপদ গােপন রাখা মূলত গােপন নেকির ফান্ড।
গরীবদের মাঝে আমাকে খুঁজবে। মনে রেখাে, তাদের কারণেই এবং তাদের উপলক্ষ্যেই রুজি বৃদ্ধি পায়।
দুনিয়া মুমিনের কারাগার আর কাফেরের জান্নাত।
দুনিয়াপ্রীতিই সকল অনিষ্টের মূল।
তিন কাজে মােটেও বিলম্ব করবে না।১. নামাযের সময় নামায পড়তে।২. জানাযা প্রস্তুত হয়ে গেলে জানাযা নামায পড়তে।৩. পাত্র পেলে বিধবাকে বিয়ে দিতে।
মজলুমের বদদু'আকে ভয় করাে। কারণ, তাঁর দু'আ আর আল্লাহ তা'আলার মাঝে কোনাে আড়াল থাকে না (তা তার কাছে পৌছতে এবং কবুল হতে।)
পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি, কর্মচারী-কাজের লােক ও নিজের প্রতি কখনাে বদদু'আ করবে না। হতে পারে, সেটা কোনাে মকবুল মুহূর্তে পতিত হয়ে কবুল হয়ে যাবে।
মাঝে-মধ্যে কবর যিয়ারত করতে যাবে এবং সেখানে নিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে।
যে আল্লাহকে ভয় করে, সে কারাে থেকে প্রতিশােধ নেয় না ।
দানশীলের পানাহার ঔষধ বিশেষ আর কৃপণের পানাহার রােগবিশেষ।
প্রতিবেশীর হক শুধু এই নয় যে, তাকে কষ্ট দেওয়া হবে না। বরং তার প্রতি অনুগ্রহ করাও আবশ্যক।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী, তার কর্তব্য প্রতিবেশীদের সাথে সদাচরণ করা।
প্রতিবেশীকে যে (অন্যায়ভাবে) কষ্ট দেয়, সে জাহান্নামে যাবে। যদিও সে সারা রাত ইবাদাত করুক এবং সারা দিন রােযা রাখুক।
যে বড়দের সম্মান ও ছােটদের স্নেহ করে না, সে আমার আদর্শের অনুসারী নয়।
মন্দ লােকদের সাথে সদাচরণ করা সৎলােকদের ধর্ম। আর সৎলােকদের সাথে মন্দ আচরণ করা অসৎলােকদের বৈশিষ্ট্য।
প্রত্যেক জাতি ও সম্প্রদায়ের সম্মানিত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখবে।
অড়ম্বরহীন সাদাসিধা জীবন ঈমানের পরিচয়।
দানশীল আল্লাহর কাছে, জান্নাতের কাছে, মানুষের কাছে; কিন্তু জাহান্নাম থেকে দূরে।
কৃপণ আল্লাহর থেকে দূরে, জান্নাত থেকে দূরে, মানুষ থেকে দূরে, তবে জাহান্নামের নিকটে।
তিন ব্যক্তি মিলে কোথাও সফরে গেলে তাদের একজনকে আমীর (নেতা) বানিয়ে পথ চলা উচিত।
সুস্থতা ও অবসর দুটি বিরাট নেয়ামত। অথচ অধিকাংশ মানুষ তার যথাযথ মূল্যায়ন করে না।
যে জনবসতির অদূরে অবস্থান করে তার জ্ঞান-বুদ্ধি অনুধা থাকে। যে শিকারে মেতে থাকে, সে অসচেতন হয়।
যে রাজা-বাদশার দরবারে যায়, সে নিশ্চিত ফেতনার শিকার হয়। সে তথায় গিয়ে যতখানি তাদের কাছে ঘেঁষে, ঠিক ততখানি আল্লাহ তা'আলা হতে দূরে সরে যায়।
যুগকে গালি দিয়াে না। কেননা, তারা এর থেকে ঊর্ধ্বে। যা কিছু হয় আল্লাহর নির্দেশেই হয়। যে ব্যক্তি যুগকে গালি দেয় এবং তার সমালােচনা করে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকেই গালি দেয়। আর আল্লাহকে গালি দিলে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
ঈমানকে যদি দুভাগে বিভক্ত করা হয়, তবে তার এক ভাগ হলাে ধৈর্য ও সহনশীলতা আর দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে কৃতজ্ঞতা।
ঈমানের সাথে ধৈর্যের সম্পর্ক এমন, শরীরের সাথে মাথার সম্পর্ক যেমন।
কোনাে জালেমকে সাহায্য করার অর্থ আল্লাহর ক্রোধকে নিজের মাথায় চাপিয়ে নেওয়া।
মানুষ যত বৃদ্ধ হয়, তার মধ্যে দুটি বিষয়ের আগ্রহ তত তীব্র হতে থাকে।১. ধন-সম্পদের আকাক্ষা ও২. বেশি দিন বাঁচার আশা।
নেতৃত্ব ও পদ চেয়ে নিয়াে না। কারণ, চেয়ে নিলে তার দায় তােমার কাঁধেই বর্তাবে। আর চেয়ে না নিলে সকলের সাহায্য লাভে সমর্থ হবে।
তােমার কাছে পরিবার-পরিজনের হক আছে, মেহমানের হক আছে। এমনকি নিজ আত্মারও হক আছে। অতএব রােযাও রাখবে আবার খানাও খাবে। নামায পড়বে আবার বিশ্রামও নিবে।
কাউকে জুলুম করতে দেখেও যদি অন্যরা তাকে জুলুম হতে না ফেরায়, তবে আল্লাহ সকলের প্রতি আযাব প্রেরণ করবেন।
মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দাও, অসৎ কাজ হতে বিরত রাখাে। নতুবা আল্লাহ শীঘ্র তােমাদের প্রতি আযাব নাযিল করবেন। তখন কোনাে দোহাই দিলে তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হবে না।
কেউ কাউকে অন্যায় কাজ করতে দেখলে তার কর্তব্য হাত দ্বারা বাধা দেওয়া। এতে অসমর্থ হলে মৌখিক প্রতিবাদ করা। এটাও না পারলে অন্তরে অবশ্যই তার প্রতি ঘৃণাবােধ রাখতে হবে। এই শেষােক্ত পন্থা দুর্বলতম ঈমানের নমুনা।
দম্ভ করাে না, হিংসা-বিদ্বেষ রেখাে না, মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না; বরং পরস্পর আল্লাহর বান্দা ও ভাই-ভাই হয়ে থাকো।
মুমিনের চেহারা প্রসন্ন আর অন্তর বিষন্ন থাকে।
কেউ যদি চায়, মানুষ তার সম্মানার্থে দাঁড়াক, তাহলে তার ঠিকানা জাহান্নাম।
ভারসাম্য বজায় রেখে বন্ধুকে ভালােবাসবে। কেননা, হতে পারে, তার অবস্থা পরিবর্তিত হবে। অনুরূপ কারাে সাথে অতিমাত্রায় শক্রতাও করবে না। কেননা, পরে তার সাথে মহব্বতও হয়ে যেতে পারে।
আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত এমনভাবে করবে, যেন তাকে তুমি দেখছ। আর যদি না দেখতে পাও, তবে বিশ্বাস রাখবে, তিনি তােমাকে দেখছেন।
ইলম আমলকে আহ্বান করে। এতে সে সাড়া দিলে ইলম থাকে। অন্যথায় চলে যায়।
কেউ যদি দশ দেরহাম (টাকা) দিয়ে কোনাে কাপড় কিনে, যার মধ্যে একটি টাকা হারাম ছিল, তাহলে ঐ কাপড় পরা অবস্থায় কোনাে নামায পড়লে তা কবুল হবে না।
ঈমানদার যেমন দ্রুত জ্বলে ওঠে, তেমনি দ্রুত ঠাণ্ডাও হয়।
আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহর সাথে সম্বন্ধযুক্ত। ফলে যে এই সম্পর্ক রক্ষা করবে, আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক কায়েম থাকবে। পক্ষান্তরে যে এই সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আল্লাহর রহমত থেকেও সে ছিটকে পড়বে।
কেউ জানতে চাইল, হে আল্লাহর রাসূল! গুনাহের কাজ কী কী? জবাবে তিনি বললেন, যা তােমার অন্তরে খটকা জাগায়, তা-ই গুনাহের কাজ।
মানুষের তিন বন্ধু । যথা- ১. যা মৃত্যু পর্যন্ত সাথে থাকে। আর তা হলাে তার ধন-সম্পদ। ২. যা কবর পর্যন্ত থাকে। আর তাহলাে তার পরিববার-পরিজন। ৩. হাশর পর্যন্ত সাথে থাকে। আর তা হলাে তার কৃত আমল। '
যেলােক ইলম অন্বেষণে গমন করে, প্রত্যাগমন পর্যন্ত সে আল্লাহর রাস্তাতেই থাকে।
জিজ্ঞাসা করা হলাে, হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়েয়ে উত্তম ব্যক্তি কে? জবাবে তিনি বললেন, যে দীর্ঘদিন বাঁচে এবং নেক আমল করে। লােকেরা আবার জিজ্ঞাসা করল, সবচেয়েয়ে মন্দ ব্যক্তি কে? জবাবে তিনি বললেন, যে বেশি দিন বাঁচে; কিন্তু শুধু কুকর্ম করে।
বেশি-বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করলে গুনাহ হ্রাস পায়।
নিজ আত্মা ও সৃষ্টজীবের প্রতি মায়াশীল হও; তাহলে আল্লাহপাকও তােমাদের প্রতি দয়ালু হবেন।
বিপদাপদে পড়ে আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনাে অভিযােগ করবে না; তাহলে তুমি বড় বুযুর্গ হতে পারবে।
সদা পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকবে; তাহলে রিযিকে বরকত হবে ।
কারাে প্রতি অযথা রাগান্বিত হবে না। তাহলে আল্লাহ পাকের অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ থেকে রেহাই পাবে।
হারাম বস্তু গ্রহণ এবং হারাম কথা থেকে বেঁচে থাকবে; তাহলে যে দু'আই করবে, কবুল হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারাে নামে শপথ করে, সে কুফরি অথবা শিরক করে।
দুনিয়ায় ভালাে মানুষ ও মুমিনদের বিপদাপদ বেশি হয়। কোনাে মুমিনের গায়ে কাঁটা বিধলে অথবা এর থেকেও হাল্কা কোনাে কষ্ট হলে এতে তার গুনাহ মাফ হয় এবং পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
সম্পদ আকাঙ্ক্ষায়, যৌবন খেজাবে আর সুস্থতা ঔষধে হাসিল হয় না ।
নিজের জিহ্বাকে অভিযােগ থেকে সংযত রাখবে; তাহলে আরাম ও শান্তির জীবন যাপন করতে পারবে।
ইলম আম্বিয়ায়ে কেরামের উত্তরাধিকার আর ধন-সম্পদ কাফের- ফেরাউন ও হামান প্রমুখের উত্তরাধিকার। রাজা-বাদশাহদের কাছে গমনকারী আলেম আল্লাহর শত্রু আর উলামায়ে কেরামের কাছে আগমনকারী রাজা-বাদশারা আল্লাহর বন্ধু।
হাসা কেবল তারই সাজে, যে মৃত্যু সম্বন্ধে বেখবর।
স্বঘােষিত আলেম মূলত জাহেল (মূখ)। আর স্বঘােষিত জান্নাতী মূলত জাহান্নামী।
অপব্যয়-অপচয় হলাে মনের চাহিদা অনুযায়ী পানাহার ও বিলাসিতা করা।
দুনিয়াদারকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়া আর ডাকাতের কাছে তলােয়ার বিক্রি করা এক কথা।
সামনাসামনি কেউ প্রশংসা করলে বুঝবে, সে তােমাকে জবাই করছে।
ক্রুদ্ধ অবস্থায় কারাে আচরণ না দেখে তার চরিত্রের উপর আস্থা রেখাে না।
জালেমকে ক্ষমা করা মজলুমের প্রতি অবিচার করার নামান্তর।
মুমিন কখনাে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরােধীদের সাথে সখ্য গড়ে না।
দুনিয়াতে তিনটি কাজ আমার খুব প্রিয়।১. সৎ কাজের আদেশ দান।২. অসৎ কাজ থেকে বাধা দান এবং৩. পুরাতন কাপড় পরিধান করা।
যার আমানাতদারি নেই, তার ঈমান নেই।
যে দ্বীনদার নয়, সে অঙ্গীকার রক্ষা করে না।
ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়ের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ।
আমলের গ্রহণযােগ্যতা নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
কোনাে মুসলমানকে তুষ্ট করার চেয়ে অধিক উত্তম আর কোনাে ইবাদাত আল্লাহর দৃষ্টিতে নেই।
যে আল্লাহর হয়ে যায়, আল্লাহও তার হয়ে যান।
যে অন্যের প্রতি দয়াশীল নয়, তার প্রতিও দয়া করা হবে না।
আল্লাহপাক তােমাদের বাহ্যিক গঠন ও সৌন্দর্যের দিকে তাকান না। তিনি তাকান তােমাদের অন্তর, আমল এবং নিয়তের দিকে।
নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত লিখুন :