Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.)-এর অমূল্য উপদেশ

উপদেশ মূলক কথা - হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.)-এর অমূল্য উপদেশ - বঙ্গ টুইট  - Bongotweet

হযরত আশরাফ আলী থানভী (রা.) ছিলেন একজন দেওবন্দি আলেম, সমাজ সংস্কারক, ইসলামি গবেষক এবং পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি ভারতের থানা ভবনের নিবাসী ছিলেন। তাই তার নামের শেষে "থানভী" যোগ করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশ ও এর বাইরের অসংখ্য মানুষ তার কাছ থেকে আত্মশুদ্ধি এবং তাসাওউফের শিক্ষা গ্রহণ করার কারণে তিনি "হাকীমুল উম্মত" (উম্মাহর আত্মিক চিকিৎসক) উপাধিতে পরিচিত। 

হযরত থানভী (র.) এর মূল্যবান কিছু উপদেশ 

সুখ্যাতির দ্বারা দ্বীনি ও দুনিয়াবি ক্ষতি হয়। যে সুখ্যাতি নিজের ইখতিয়ার ও ইচ্ছার মাধ্যমে অর্জিত হয়, তা অনিষ্টকর। কিন্তু যে খ্যাতি অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে যায়, তা আল্লাহর নেয়ামত।

পারিবারিক বিবাদ থেকে বাঁচার জন্য উত্তম কৌশল হলাে কয়েক পরিবারের লােক এক ঘরে না থাকা। কারণ, অনেক মহিলা এক জায়গায় থাকা-ই বিবাদের মূল কারণ।

যে কাজ একা করা সম্ভব, সেটা দলগতভাবে কখনাে করবে না। অধিকাংশ সময় দলবদ্ধতার কারণেই কাজ ওলট-পালট হয়ে যায়।

হাদীসে আছে, তােমরা গােনাহ কম করাে; অর্থাৎ- গুনাহ করবেই না। ফলে তােমার মৃত্যু সহজ হবে।

ঋণ কম করাে। মানে কর্জ করবেই না। তাহলে স্বাধীনতার সাথে জীবনযাপন করতে পারবে। অর্থাৎ- কারাে সামনে লাঞ্ছিত-অপমানিত হতে হবে না।

কারাে চিন্তাবিদ হওয়ার একটি নিদর্শন হলাে তার কথায় চিত্তে প্রশান্তি আসা।

সঠিক অনুভব ও দ্বীনের গভীর জ্ঞান সে-ই অর্জন করতে পারে, যে মনােযােগ দিয়ে পড়ে এবং ওস্তাদগণকে সন্তুষ্ট রাখে। যে ছাত্র শুধু শ্রম ব্যয় করে; কিন্তু ওস্তাদগণকে সন্তুষ্ট রাখে না, সে প্রকৃত ইলম কখনাে হাসিল করতে পারে না।

মাল জমা করেও যুহদ (পার্থিব মােহ বিসর্জন) হতে পারে। আর তা এভাবে যে, মালের সাথে মন লাগাবে না এবং প্রয়ােজনের অতিরিক্ত সম্পদের পিছনে পড়বে না।

আল্লাহ তা'আলার প্রেমিক ও প্রেমাস্পদ হতে চাইলে আমলের জন্য হিম্মত করে জাহেরি-বাতেনি সর্বদিক দিয়ে শরীয়তের পাবন্দি করতে হবে এবং আল্লাহ-আল্লাহ যিকির করতে হবে।

পীর ও মুর্শিদের হক তিনটি-
১. ইতিকাদ বা আস্থাশীল হওয়া।
২. ইতিমাদ তথা নির্ভরতা ও
৩. ইনকিয়াদ তথা আনুগত্য।

যেসব জিনিস ছাড়া সংসার চলে না, তা জরুরি। যা ছাড়া কষ্ট হয় না, সেটা অনাবশ্যক। যদি তাতে নিজের মনকে খুশি করার নিয়ত থাকে, তাহলে সেটা মােবাহ বা বৈধ। আর যদি অন্যদের দৃষ্টিতে বড়লােক হওয়ার নিয়তে হয়, তাহলে সেটা হবে হারাম।

হাদীসের বিশ্লেষণ হতে জানা যায়, সমস্ত উত্তম চরিত্রের সারমর্ম হল অন্য কাউকে কষ্ট না দেওয়া।

কথার উত্তর না দেওয়া (যখন তা কাম্য হয়) মারাত্মক বেয়াদবি অনুরূপ বিলম্বে জবাব দিয়ে অপেক্ষার কষ্ট দেওয়াও আদবের খেলাফ।

সবার সাথে ভাইয়ের মতাে জীবন-যাপন করবে; কিন্তু লেনদেন করবে অপরিচিতের মতাে।

দুনিয়ার উদাহরণ আখেরাতের তুলনায় একটা পাখি ও তার ছায়ার মতাে। পরকাল হলাে পাখি আর ইহকাল হলাে ছায়া। আপনি যদি পাখিটাকে ধরেন, তাহলে ছায়াও সাথে-সাথে চলে আসবে। আর যদি ছায়াটা ধরতে যান, তাহলে না ছায়া আপনার আয়ত্তে আসবে, না পাখি।

কুফরির মাধ্যমে রাজত্ব ধ্বংস হয় না। কিন্তু জুলুমের ফলে রাজত্ব ধ্বংস হয়ে যায়।

পেরেশানির কারণে মনে কষ্ট হলেও এতে আত্মায় নূর পয়দা হয়।

নিজের আত্মার সংশােধনের জন্য শুধু দু'আই যথেষ্ট নয়; বরং চেষ্টা করাও জরুরি। যেমন- সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য শুধু দু'আই যথেষ্ট নয়, স্বামী-স্ত্রীরও প্রয়ােজন আছে।

যদি মুসলমানরা নিজেদের সংশােধন করে নেয় এবং দ্বীন তাদের মধ্যে মজবুত রূপ ধারণ করে, তাহলে ইনশাল্লাহ পার্থিব বিপদ- আপদও অল্প দিনের মধ্যে দূরীভূত হয়ে যাবে।

হে মুসলিম সম্প্রদায়! আপনারা উন্নয়নের জন্য সর্বদা লক্ষ্য রাখবেন, কিভাবে মুসলিম জাতির উন্নতি হয়েছে। কখনও লক্ষ্য করবেন না, কাফিরদের উন্নতি ও অগ্রগতি কিরূপে হয়েছে। কারণ, প্রতিটি সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক মন-মানসিকতা স্বতন্ত্র । এক জাতির জন্য যে পদ্ধতি উপকারী অন্য সবার জন্যও তা-ই উপকারী হবে, এটা আবশ্যক নয়। বরং এটাও জরুরি নয় যে, একটা পদ্ধতি এক সম্প্রদায়ের কোনাে ব্যক্তিবিশেষের জন্য উপকারী এবং সেটাই গােটা সম্প্রদায়ের জন্য লাভজনক হবে। একজন স্পর্শকাতর সূক্ষ্মস্বভাবী লােকের জন্য ঐসব উপকারী নয়, যেগুলাে একজন গেয়ে লােকের জন্য উপকারী। ইসলাম গ্রহণের পর আপনার স্বভাব হয়ে গেছে অত্যন্ত উন্নতমানের স্পর্শকাতর। আপনাদের স্বভাব রাজকীয়। কাফিরদের জন্য যে পদ্ধতিটি উপকারী, সেটা আপনাদের জন্য লাভজনক হবে না। তাছাড়া আপনাদের উদাহরণ হলাে, যেমন মাথার টুপিতে সামান্য নাপাক লেগে গেলেও তৎক্ষণাৎ ছুড়ে ফেলা হয়। কিন্তু জুতার মধ্যে নাপাক লাগলে তা ছুড়ে ফেলা হয় না। ঠিক এমনিভাবে আল্লাহ রাব্বল আলামীন আপনাদেরকে নাপাকিলিপ্ত দেখতে চান । যদি কখনও আপনাদের গায়ে নাপাক লেগে যায়, তখনই লাঠিপেটা খাবেন। কাফেররা যতই গােনাহের কাদায় কর্দমাক্ত হােক, সেটা বরদাশত করা হবে। অতএব, আপনারা যদি উন্নতি চান, তাহলে লক্ষ্য করবেন, মুসলমানদের উন্নয়ন কিভাবে হয়েছিল। যারা সাহাবায়ে কেরামের উন্নতি ইতিহাস দেখেছেন, তাঁরা ভালাে করেই জানেন, তাঁদের উন্নতির একমাত্র কারণ ছিল দ্বীনের আনুগত্য। দ্বীনদারিতে তাঁরা ছিলেন পাকাপােক্ত। তাঁদের লেনদেন, সামাজিকতা, নৈতিকতা, আখলাক-চরিত্র, ইসলামি বিধিবিধানের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। এজন্য ভিন্ন জাতিগুলাে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং হতও। কেউ যদি তাদের মােকাবেলায় আসত, সে সময় আল্লাহ তা'আলা তাদের সাহায্য করতেন। যেহেতু তারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে রেখেছিলেন, এ কারণেই একেবারে আসবাব-উপকরণ এবং ধনবল-জনবল কম থাকা সত্ত্বেও বড়-বড় রাজা-বাদশাহরাও তাদের চোখের দিকে চোখ তােলার সাহস পায়নি।

প্রেমিকের স্বভাব যদি একেবারে খবীস (মাত্রাতিরিক্ত নষ্ট) না হয়, তখন মুত্তাকী ব্যক্তির দিকে কুপ্রবৃত্তি কিংবা আসক্তি কখনাে ধাবিত হয় না। কারণ, তাকওয়ার কুদরতী প্রভাব হলাে, সেটা মানবিক কুপ্রবৃত্তি থেকে হেফাজতকারী হয়। চাই তাকওয়া সম্পর্কে দ্বিতীয় ব্যক্তির জানা থাকুক বা না থাকুক।

শায়খের সান্নিধ্য ব্যতীত কেউ যদি লাখাে তাসবীহ পাঠ করতে থাকে, তাহলেও তেমন কোনাে উপকারিতা নেই। যেমন- তলােয়ার কোনাে জিনিসকে কর্তন করে ঠিক; কিন্তু শর্ত হলাে, সেটা কারাে হাতে থাকতে হবে। অন্যথায় শুধু তলােয়ার কোনাে কিছুকেই কাটতে পারবে না।

তাড়াতাড়ি বাইয়াত হওয়া ভালাে নয়। শায়েখের সাথে যখন ভালরূপে মহব্বত সৃষ্টি হয়, ঐ সময় বাইয়াত হলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। 

মুসলমানের কর্মব্যস্ততা যত থাকে, ততই ভালাে। অবসর না থাকাই উত্তম। 

স্বামীদের উচিত স্ত্রীদের সংশােধনের চেষ্টা করা। সংশােধন হােক বা না হােক তাদের বই-কিতাব পড়িয়ে শােনাতে থাকুন। এর ফলে অন্তত আল্লাহ তা'আলার পাকড়াও থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

আমি অনেকবার ছাত্রদের এবং জনতাকে বলেছি, আপনারা দুটি বিষয়ে পরিপক্ক হয়ে যান, আল্লাহ পর্যন্ত পৌছার জন্য আমি জিম্মাদার। 
১. গােনাহ থেকে বাঁচা। 
২. কম বলা এবং সামান্য সময় জিকির ও ফিকিরের জন্য নির্জনতা অবলম্বন। 

দুটো জিনিস বিষতুল্য। 
১. মেয়েদের সাথে নম্র ভাষায় কথা বলা এবং 
২. বালকদের সংসর্গ। 

মন একই সময় দুই জিনিসের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে না। অতএব যখন (অবৈধ স্থলে) উত্তেজনা সৃষ্টি হবে, তখন নিজের মনকে অন্য কাজে লাগিয়ে দেওয়া উচিত। চাই দ্বীনের কাজ হােক, যেমন- নামায যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি কাজে রত হওয়া কিংবা দুনিয়াবি কাজে। যেমন- কারাে কাছে গিয়ে বসা ইত্যাদি। 

নিয়মবহির্ভূত খেদমত করার মাধ্যমে কেউ মকবুল হতে পারে না। যেমন- ঠিক দুপুরের সময় নামায যেহেতু আইনবিরােধী, তাই গ্রহণযােগ্য নয়। 

বাস্তবিকই অজ্ঞের মহব্বতও অজ্ঞতা। অজ্ঞের মহব্বত মায়ের মমতার মতাে। মায়ের স্নেহ শিশুকে অজ্ঞই রেখে দেয়। 

এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, তাগড়া সুস্থ যুবককে ভিক্ষা দেওয়া কিরূপ? জবাবে হযরত থানভী (রহ.) বলেন, তাকে বলে দিন, সামনে যাও অথবা চুপ থাকো; এমনিই সে চলে যাবে। 

এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, কেউ যদি তার পীর সাহেবকে খারাপ বলে, তাহলে কী করা উচিত? উত্তরে হযরত বলেন, তাকে বারণ করুন, বলুন, আমার সামনে এসব আলােচনা করবেন না; এতে আমার ' কষ্ট হয়।

হকপন্থীদের উচিত ভীতসন্ত্রস্ত থাকা, বাতিলপন্থীদের তুচ্ছ ও নিজেকে বড় মনে না করা।

কোনাে রােগের মধ্যে সত্তাগতভাবে সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য নেই। কিন্তু ধারণাগত উপকরণের পর্যায়ে মনে হয়, রােগের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া না হওয়া নির্ভর করে মনের দুর্বলতা ও সবলতার উপর। দুর্বল হৃদয়ের উপর প্রভাব বেশি হয়।

খুব ভালাে করে বুঝুন, দুনিয়া কামাই করা এক জিনিস আর দুনিয়ার প্রতি মহব্বত আরেক জিনিস। দুনিয়ার প্রতি মহব্বত নিন্দনীয়। কিন্তু প্রয়ােজন অনুসারে পার্থিব বিষয়াবলি অর্জন করা জায়েয। 

সূফী-সাধকগণ সব যুগেই বদনামের শিকার হয়ে থাকেন। কারণ, তারা চুপচাপ থাকেন এবং সহনশীল হন। কিন্তু আমরা কি জানি, তারা কেন ধৈর্যশীল হয়ে থাকেন? মূলত তারা সবরের মাধ্যমে আল্লাহকে নিজের বন্ধু বানিয়ে নেন। 

যিনি যত বড় মুহাক্কিক হবেন, তার বদনাম তত বেশি হবে। কারণ, একজন মুহাক্কিকের দৃষ্টি থাকে অনেক গভীরে। মানুষের নজর সে পর্যন্ত পৌছে না। এজন্য বাহ্যত তার কথা তাদের কাছে নিজেদের পরিপন্থী মনে হয়। ফলে অনেকে তাদের বিরুদ্ধে কুফরি ফতােয়া পর্যন্ত দিয়ে দেয়।

মেয়েরা অধিক লাজুকতার কারণে পরস্পরে সালাম করে না। এরূপ লজ্জা বর্জনীয়, যার ফলে সুন্নত তরক হয়ে যায়। মেয়েরা পরপুরুষদের সালাম করবে না। কিন্তু পরস্পরে মেয়েরা মেয়েদের সালাম বিনিময় করবে। তারা মাহরাম পুরুষ অর্থাৎ যাদের সাথে দেখা জায়েয, তাদেরও সালাম দেবে। 

স্ত্রী যদি খারাপ হয়, তার উপর ধৈর্যধারণ করলে প্রচুর সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। 

দুই কারণে স্বামীর উচিত স্ত্রীর কদর করা। 
১. স্ত্রী হওয়ার কারণে। কারণ, সে তার সম্পূর্ণ আয়ত্তাধীন। 
২. তার দ্বীনের কারণে। কারণ, আপনিও মুসলমান, সেও মুসলমান। 

মেয়েদের তুচ্ছ ও হেয় মনে করা উচিত নয়। আল্লাহ অসহায় বাধ্য ও ভগ্নহৃদয়ের অধিকারী লােকদের সামান্য আমলও কবুল করে নেন এবং তাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন। 

আল্লাহ তা'আলার অশেষ মেহেরবানি যে, তিনি আমাদের পঁচা-গলা ইবাদাতও গ্রহণ করে নাজ-নেয়ামত দিচ্ছেন। নিজের দরবার হতে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেন না। কিন্তু একে আমরা গনিমত মনে করি না। 

পীর তিনি, যিনি মুরীদকে সংশােধন করতে পারেন। শুধু নেককার হওয়াই যথেষ্ট নয়। ওলী হওয়ার জন্য নেককার হওয়া আবশ্যক, সংশােধনকারী হােন বা না হােন। শায়খের ওলী হওয়ার জন্য সালেহ, মুসলিহ তথা নেককার ও সংশােধনকারী হওয়া জরুরি।

চাপ দিয়ে কখনাে চাদা নিবেন না। আল্লাহর দ্বীনের কাজ কখনাে বন্ধ থাকে না। 

যে জিনিসের সাথে যত বেশি সম্পর্ক হয়, তার হক্ব তত বেশী হয়। সম্পর্ক যত কম হয়, হকও ততটা কম হয়।

জগতে সবচেয়ে বেশি হক মানুষের উপর নিজের জানের। কেউ অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে কোনাে গুনাহের শিকার হয়ে নিজে গুনাহগার হলে সে বড় নির্বুদ্ধিতামূলক ও ইনসাফপরিপন্থী কাজই করবে। কারণ, সে বড় হক নষ্ট করে ছােট হক আদায় করেছে।

বন্যার পানি যেমন নিম্নভূমির দিকে খুব বেগে ধাবিত হয়, নীতিবান লােকদের দিকে বালা-মুসিবত তার চেয়েও বেশি দ্রুত ধাবিত হয়। 

গরীবদের চাঁদার কদর করা উচিত। সামান্য চাঁদা দেখে হাসা উচিত নয়। কারণ, এটা মারাত্মক অপরাধ। 

তাকাব্বর বা অহংকারের সার হলাে, ইচ্ছাকৃতভাবে পার্থিব অথবা ধর্মীয় কোনাে গুণের কারণে নিজেকে অন্যের তুলনায় এরূপ বড় মনে করা, যাতে অন্যদের ছােট মনে করা হয়। 

লােকজন কঠোরতার অর্থ বুঝতে ভুল করে। মূলত কঠোর তা, যার আইন কঠোর। যদি আইন সহজ ও নরম হয়, কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে কঠোরভাবে তা পালন করা হয়, তাহলে তাকে কঠোর বলা যায় না। যেমন- নামাযের প্রত্যেকটি রােকন সহজ; কিন্তু নামায আদায় না করার ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। 

সেই ব্যক্তির চেয়ে নির্বোধ আর কেউ নেই, যে সম্মানের আকাঙ্ক্ষী ও পদমর্যদার লােভী। কারণ, এই গুণটি শুধু কল্পনানির্ভর। কাল্পনিক বিষয় এমন, যেটা স্বয়ং তার সাথে কখনাে স্থির থাকে না; বরং অন্যদের ধারণার সাথে সংশ্লিষ্ট। কারণ, সম্মানের মােহ’র অর্থ হলাে অন্যদের দৃষ্টিতে সম্মানিত হওয়া, যা নির্ভর করে অন্যদের ধারণার উপর। যখন অন্যরা ইচ্ছা করবে, তা ঝেড়ে মুছে ফেলে দিতে পারবে। (আর ঠিক) তখন পুরাে সম্মানই ভূলুষ্ঠিত হয়ে যাবে।

অন্তরের প্রভাব মানুষের কথাবার্তা এবং লেবাস-পােশাকেও প্রকাশিত হয়। 

লােভ সমস্ত পেরেশানির মূল। এ এমন একটা ব্যাধি, যাকে সব রােগের মূল বলা উচিত। কারণ, এর ফলেই যত ঝগড়া-ফ্যাসাদ জন্ম নেয়। 

গােনাহ করার পর তাওবা ছাড়া এর আর কোনাে চিকিৎসা নেই। 

তাসাওউফের লাইনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বিষয় হলাে শায়েখ-পীরের উপর অভিযোেগ ও প্রশ্ন উত্থাপন করা। 

সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবুওতের দাবিদার কোনাে ব্যক্তিকে ওলী বলা বরং শুধু মুসলমান বলাও কুফরি। 

বিনয় ও নম্রতার নিদর্শন হলাে, চলার সময় মাথা নিচু করে চলা, কথাবার্তায়, লেনদেনে কঠোরতা আরােপ না করা, রাগ ও ক্রোধের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলা, প্রতিশােধ নেওয়ার ফিকিরে না থাকা ইত্যাদি। সাজ-সজ্জার পর্যায়ে চরমপন্থা ও শিথিলপন্থা দুটোই নিন্দনীয়। মধ্যম পন্থাই প্রশংসনীয়। 

মহিলাদের মধ্যে আল্লাহর যিকিরের প্রচলন খুবই কম। নামায, রােযার পাশাপাশি কিছু যিকিরও করা উচিত। 

মেয়েদের জন্য যিকরুল্লাহর সাথে মৃত্যুর মুরাকাবা (ধ্যান) অনেক উপকারী। 

শরীয়ত বিপদের মুহূর্তে ধৈর্য ও সবর করার শিক্ষা দেয়। চেষ্টা করুন, দুআ করুন। আবেগতাড়িত হলে লাভ কী? 

বর্তমানে যারা চাঁদা উঠান, তারা নাবালেগ বাচ্চাদের কাছ থেকেও চাঁদা নেন। এটা মােটেও জাযেয় নেই। শিশুর মালিকানাধীন মাল কাউকে সে নিজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিতে চাইলেও দিতে পারবে না। এমনকি তার গার্জিয়ানও দিতে পারবে না। 

বর্তমানে অনেক লােক আবেগতাড়িত হয়ে শিশুদের পয়সা অত্যন্ত গর্বের সাথে গ্রহণ করে। প্রকাশ্য মজলিসে বলে বেড়ায়, এ হল মাছুম বাচ্চার বরকতময় টাকা এবং সেই এক টাকা একশ, দুশ টাকায় নিলাম হয়। এতে কয়েকটা গুনাহ হয়। ১. সুদের ২. রিয়ার ৩. শিশুর মাল গ্রহণ করার।

পার্থিব বিষয়ে দিল প্রশান্ত হয়ে থাকা, আখেরাতের ব্যাপারে অস্থিরচিত্ত ও ব্যাকুল না হওয়া; এটাই হলাে সমস্ত ব্যাধির মূল। এই প্রশান্তিকে অন্তর থেকে বের করে দিন। 

তাওহীদের আকীদা পাকাপােক্ত করার পদ্ধতি হলাে বেশি-বেশি জিকির করা। আর আমলকে নেক বানানাের পদ্ধতি হলাে ইলমে দ্বীন অর্জন করা। মাসায়েলের কিতাব পড়া, ওয়াজ-নসিহতের বই-পুস্তক, কিতাবাদি অধ্যয়নে রাখা। 

অবসর সময়ে হাতে তসবীহ রাখা (উচিত)। তসবীহ হলাে (জিকিরের) স্মারক। এর ফলে যিকিরের কথা স্মরণ থাকে। 

প্রেমের প্রতিষেধক হলাে বিয়ে। যদি বিশেষ কোনাে প্রেমিকার সাথে হয়, তাহলে তাে খুবই ভালাে; নতুবা অন্য কোনাে জায়গায় বিয়ে করে ফেললে পরনারীর প্রতি প্রেম-ভালােবাসা অব্যশ্যই হ্রাস পাবে। 

ইসলামের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বিধর্মীদেরকে ভাই-বন্ধু বানানাের প্রয়ােজন নেই। দুশমনকে দুশমন মনে করেও নিজের দিকে আকৃষ্ট করা যায়। 

আপনারা শরীয়তের উপর চলুন। দেখবেন, ইনশাল্লাহ সবাই আপনাদের ইজ্জত করবে। আপনারা দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকুন। তাহলে গােটা সম্প্রদায় আপনাদের অনুগত হয়ে যাবে। 

সমস্ত পেরেশানির মূল কারণ হলাে, মানুষ নিজের জন্য অথবা সংশ্লিষ্টদের জন্য এক ধরনের কাল্পনিক পােলাও পাকায়। যেমন- ছেলেটি জীবিত থাকলে, সুশিক্ষিত হলে সে ভালাে বেতনে বড় চাকুরি করতে পারবে। যদি প্রথম থেকেই কোনাে পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে কোনাে পেরেশানি হবে না। এ কারণেই আল্লাহওয়ালারা সবচেয়ে আরাম, আনন্দ ও শান্তির দিন যাপন করেন। কোনাে কিছুতেই তারা পেরেশান, উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত হন না। কারণ, তাঁদের কোনাে পূর্বপরিকল্পনা নেই। সবকিছু পুরােপুরি আল্লাহর হাতে সােপর্দ। 

অন্তরের প্রভাব মানুষের কথাবার্তা এবং লেবাস-পােশাকেও প্রকাশিত হয়।

লোভ সমস্ত পেরেশানির মূল। এ এমন একটা ব্যাধি, যাকে সব রােগের মূল বলা উচিত। কারণ, এর ফলেই যত ঝগড়া-ফ্যাসাদ জন্ম নেয়। 

গােনাহ করার পর তাওবা ছাড়া এর আর কোনাে চিকিৎসা নেই। 

তাসাওউফের লাইনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বিষয় হলাে শায়েখ-পীরের উপর অভিযােগ ও প্রশ্ন উত্থাপন করা। 

সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর নবুওতের দাবিদার কোনাে ব্যক্তিকে ওলী বলা বরং শুধু মুসলমান বলাও কুফরি। 

বিনয় ও নম্রতার নিদর্শন হলাে, চলার সময় মাথা নিচু করে চলা, কথাবার্তায়, লেনদেনে কঠোরতা আরােপ না করা, রাগ ও ক্রোধের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলা, প্রতিশােধ নেওয়ার ফিকিরে না থাকা ইত্যাদি। সাজ-সজ্জার পর্যায়ে চরমপন্থা ও শিথিলপন্থা দুটোই নিন্দনীয়। মধ্যম পন্থাই প্রশংসনীয়। 

মহিলাদের মধ্যে আল্লাহর যিকিরের প্রচলন খুবই কম। নামায, রােযার পাশাপাশি কিছু যিকিরও করা উচিত । 

মেয়েদের জন্য যিকরুল্লাহর সাথে মৃত্যুর মুরাকাবা (ধ্যান) অনেক উপকারী। 

শরীয়ত বিপদের মুহূর্তে ধৈর্য ও সবর করার শিক্ষা দেয়। চেষ্টা করুন, দু'আ করুন। আবেগতাড়িত হলে লাভ কী? 

বর্তমানে যারা চাঁদা উঠান, তারা নাবালেগ বাচ্চাদের কাছ থেকেও চাঁদা নেন। এটা মােটেও জাযেয় নেই। শিশুর মালিকানাধীন মাল  কাউকে সে নিজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিতে চাইলেও দিতে পারবে না। এমনকি তার গার্জিয়ানও দিতে পারবে না।

বর্তমানে অনেক লােক আবেগতাড়িত হয়ে শিশুদের পয়সা অত্যন্ত গর্বের সাথে গ্রহণ করে। প্রকাশ্য মজলিসে বলে বেড়ায়, এ হল মাছুম বাচ্চার বরকতময় টাকা এবং সেই এক টাকা একশ, দুশ টাকায় নিলাম হয়। এতে কয়েকটা গুনাহ হয়। ১. সুদের ২. রিয়ার ৩. শিশুর মাল গ্রহণ করার । 

চাপ দিয়ে কখনাে চাঁদা নিবেন না। আল্লাহর দ্বীনের কাজ কখনাে বন্ধ থাকে না। 

যে জিনিসের সাথে যত বেশি সম্পর্ক হয়, তার হকও তত বেশী হয়। সম্পর্ক যত কম হয়, হকও ততটা কম হয়। 

জগতে সবচেয়ে বেশি হক মানুষের উপর নিজের জানের। কেউ অন্যের প্রতি সহনুভূতি দেখাতে গিয়ে কোনাে গুনাহের শিকার হয়ে নিজে গুনাহগার হলে সে বড় নির্বুদ্ধিতামূলক ও ইনসাফপরিপন্থী কাজই করবে। কারণ, সে বড় হক নষ্ট করে ছােট হক আদায় করেছে। 

বন্যার পানি যেমন নিম্নভূমির দিকে খুব বেগে ধাবিত হয়, নীতিবান লােকদের দিকে বালা-মুসিবত তার চেয়েও বেশি দ্রুত ধাবিত হয়। 

গরীবদের চাঁদার কদর করা উচিত। সামান্য চাঁদা দেখে হাসা উচিত নয়। কারণ, এটা মারাত্মক অপরাধ। 

তাকাব্বর বা অহংকারের সার হলাে, ইচ্ছাকৃতভাবে পার্থিব অথবা ধর্মীয় কোনাে গুণের কারণে নিজেকে অন্যের তুলনায় এরূপ বড় মনে করা, যাতে অন্যদের ছােট মনে করা হয়। 

লােকজন কঠোরতার অর্থ বুঝতে ভুল করে। মূলত কঠোর তা, যার আইন কঠোর। যদি আইন সহজ ও নরম হয়, কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকতার সাথে কঠোরভাবে তা পালন করা হয়, তাহলে তাকে কঠোর বলা যায় না। যেমন- নামাযের প্রত্যেকটি রােকন সহজ; কিন্তু নামায আদায় না করার ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। 

সেই ব্যক্তির চেয়ে নির্বোধ আর কেউ নেই, যে সম্মানের আকাঙ্ক্ষী ও পদমর্যদার লােভী। কারণ, এই গুণটি শুধু কল্পনানির্ভর। কাল্পনিক বিষয় এমন, যেটা স্বয়ং তার সাথে কখনাে স্থির থাকে না; বরং অন্যদের ধারণার সাথে সংশ্লিষ্ট। কারণ, সম্মানের মােহ’র অর্থ হলাে অন্যদের দৃষ্টিতে সম্মানিত হওয়া, যা নির্ভর করে অন্যদের ধারণার উপর। যখন অন্যরা ইচ্ছা করবে, তা ঝেড়ে মুছে ফেলে দিতে পারবে। (আর ঠিক) তখন পুরাে সম্মানই ভূলুন্ঠি হয়ে যাবে। 

মেয়েরা অধিক লাজুকতার কারণে পরস্পরে সালাম করে না। এরূপ লজ্জা বর্জনীয়, যার ফলে সুন্নত তরক হয়ে যায়। মেয়েরা পরপুরুষদের সালাম করবে না। কিন্তু পরস্পরে মেয়েরা মেয়েদের সালাম বিনিময় করবে। তারা মাহরাম পুরুষ অর্থাৎ যাদের সাথে দেখা জায়েয, তাদেরও সালাম দেবে। 

স্ত্রী যদি খারাপ হয়, তার উপর ধৈর্যধারণ করলে প্রচুর সাওয়াবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। 

দুই কারণে স্বামীর উচিত স্ত্রীর কদর করা। 
১. স্ত্রী হওয়ার কারণে। কারণ, সে তার সম্পূর্ণ আয়ত্তাধীন। ২. তার দ্বীনের কারণে। কারণ, আপনিও মুসলমান, সেও মুসলমান। 

মেয়েদের তুচ্ছ ও হেয় মনে করা উচিত নয়। আল্লাহ অসহায় বাধ্য ও ভগ্নহৃদয়ের অধিকারী লােকদের সামান্য আমলও কবুল করে নেন এবং তাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করেন। 

আল্লাহ তা'আলার অশেষ মেহেরবানি যে, তিনি আমাদের পঁচা-গলা ইবাদাতও গ্রহণ করে নাজ-নেয়ামত দিচ্ছেন। নিজের দরবার হতে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেন না। কিন্তু একে আমরা গনিমত মনে করি না । 

পীর তিনি, যিনি মুরীদকে সংশােধন করতে পারেন। শুধু নেককার হওয়াই যথেষ্ট নয়। ওলী হওয়ার জন্য নেককার হওয়া আবশ্যক, সংশােধনকারী হােন বা না হােন। শায়খের ওলী হওয়ার জন্য সালেহ, মুসলিহ তথা নেককার ও সংশােধনকারী হওয়া জরুরি।


নিয়মবহির্ভূত খেদমত করার মাধ্যমে কেউ মকবুল হতে পারে না। যেমন- ঠিক দুপুরের সময় নামায যেহেতু আইনবিরােধী, তাই গ্রহণযােগ্য নয়। 

বাস্তবিকই অজ্ঞের মহব্বতও অজ্ঞতা। অজ্ঞের মহব্বত মায়ের মমতার মতাে। মায়ের স্নেহ শিশুকে অজ্ঞই রেখে দেয়। 

এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, তাগড়া সুস্থ যুবককে ভিক্ষা দেওয়া কিরূপ? জবাবে হযরত থানভী (রহ.) বলেন, তাকে বলে দিন, সামনে যাও অথবা চুপ থাকো; এমনিই সে চলে যাবে। 

এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, কেউ যদি তার পীর সাহেবকে খারাপ বলে, তাহলে কী করা উচিত? উত্তরে হযরত বলেন, তাকে বারণ করুন, বলুন, আমার সামনে এসব আলােচনা করবেন না; এতে আমার  কষ্ট হয়। 

হকপন্থীদের উচিত ভীতসন্ত্রস্ত থাকা, বাতিলপন্থীদের তুচ্ছ ও নিজেকে বড় মনে না করা। 

কোনাে রােগের মধ্যে সত্তাগতভাবে সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য নেই। কিন্তু ধারণাগত উপকরণের পর্যায়ে মনে হয়, রােগের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া না হওয়া নির্ভর করে মনের দুর্বলতা ও সবলতার উপর। দুর্বল হৃদয়ের উপর প্রভাব বেশি হয়। 

খুব ভালাে করে বুঝুন, দুনিয়া কামাই করা এক জিনিস আর দুনিয়ার প্রতি মহব্বত আরেক জিনিস। দুনিয়ার প্রতি মহব্বত নিন্দনীয়। কিন্তু প্রয়ােজন অনুসারে পার্থিব বিষয়াবলি অর্জন করা জায়েয। 

সূফী-সাধকগণ সব যুগেই বদনামের শিকার হয়ে থাকেন। কারণ, তারা চুপচাপ থাকেন এবং সহনশীল হন। কিন্তু আমরা কি জানি, তারা কেন ধৈর্যশীল হয়ে থাকেন? মূলত তাঁরা সবরের মাধ্যমে আল্লাহকে নিজের বন্ধু বানিয়ে নেন। 

যিনি যত বড় মুহাক্কিক হবেন, তার বদনাম তত বেশি হবে। কারণ, একজন মুহাক্কিকের দৃষ্টি থাকে অনেক গভীরে। মানুষের  নজর সে পর্যন্ত পৌছে না। এজন্য বাহ্যত তার কথা তাদের কাছে নিজেদের পরিপন্থী মনে হয়। ফলে অনেকে তাদের বিরুদ্ধে কুফরি ফতােয়া পর্যন্ত দিয়ে দেয়। 

তাড়াতাড়ি বাইয়াত হওয়া ভালাে নয়। শায়েখের সাথে যখন ভালােরূপে মহব্বত সৃষ্টি হয়, ঐ সময় বাইয়াত হলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। 

মুসলমানের কর্মব্যস্ততা যত থাকে, ততই ভালাে। অবসর না থাকাই উত্তম। 

স্বামীদের উচিত স্ত্রীদের সংশােধনের চেষ্টা করা। সংশােধন হােক বা না হােক তাদের বই-কিতাব পড়িয়ে শােনাতে থাকুন। এর ফলে অন্তত আল্লাহ তা'আলার পাকড়াও থেকে মুক্তি পেতে পারেন। 

আমি অনেকবার ছাত্রদের এবং জনতাকে বলেছি, আপনারা দুটি বিষয়ে পরিপক্ব হয়ে যান, আল্লাহ পর্যন্ত পৌছার জন্য আমি জিম্মাদার। ১. গােনাহ থেকে বাঁচা। ২. কম বলা এবং সামান্য সময় জিকির ও ফিকিরের জন্য নির্জনতা অবলম্বন। 

দুটো জিনিস বিষতুল্য। 
১. মেয়েদের সাথে নম্র ভাষায় কথা বলা।
২. বালকদের সংসর্গ। 

মন একই সময় দুই জিনিসের দিকে আকৃষ্ট হতে পারে না। অতএব যখন (অবৈধ স্থলে) উত্তেজনা সৃষ্টি হবে, তখন নিজের মনকে অন্য কাজে লাগিয়ে দেওয়া উচিত। চাই দ্বীনের কাজ হােক, যেমন-নামায যিকির, তিলাওয়াত ইত্যাদি কাজে রত হওয়া কিংবা দুনিয়াবি কাজে। যেমন- কারাে কাছে গিয়ে বসা ইত্যাদি। 

শায়খের সান্নিধ্য ব্যতীত কেউ যদি লাখাে তাসবীহও পাঠ করতে থাকে, তাহলেও তেমন কোনাে উপকারিতা নেই। যেমন- তলােয়ার কোনাে জিনিসকে কর্তন করে ঠিক; কিন্তু শত হলো, সেটা কারাে হাতে থাকতে হবে। অন্যথায় শুধু তলােয়ার কোনাে কিছুকেই কাটতে পারবে না। 

প্রেমিকের স্বভাব যদি একেবারে খবীস (মাত্রাতিরিক্ত নষ্ট) না হয়, তখন মুত্তাকী ব্যক্তির দিকে কুপ্রবৃত্তি কিংবা আসক্তি কখনাে ধাবিত হয় না। কারণ, তাকওয়ার কুদরতী প্রভাব হলাে, সেটা মানবিক কুপ্রবৃত্তি থেকে হেফাজতকারী হয়। চাই তাকওয়া সম্পর্কে দ্বিতীয় ব্যক্তির জানা থাকুক বা না থাকুক।

হে মুসলিম সম্প্রদায়! আপনারা উন্নয়নের জন্য সর্বদা লক্ষ্য রাখবেন, কিভাবে মুসলিম জাতির উন্নতি হয়েছে। কখনও লক্ষ্য করবেন না, কাফিরদের উন্নতি ও অগ্রগতি কিরূপে হয়েছে। কারণ, প্রতিটি সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক মন-মানসিকতা স্বতন্ত্র। এক জাতির জন্য যে পদ্ধতি উপকারী অন্য সবার জন্যও তা-ই উপকারী হবে, এটা আবশ্যক নয়। বরং এটাও জরুরি নয় যে, একটা পদ্ধতি এক সম্প্রদায়ের কোনাে ব্যক্তিবিশেষের জন্য উপকারী এবং সেটাই গােটা সম্প্রদায়ের জন্য লাভজনক হবে। একজন স্পর্শকাতর সূক্ষ্মস্বভাবী লােকের জন্য ঐসব উপকারী নয়, যেগুলাে একজন গেয়ে লােকের জন্য উপকারী। ইসলাম গ্রহণের পর আপনার স্বভাব হয়ে গেছে অত্যন্ত উন্নতমানের স্পর্শকাতর। আপনাদের স্বভাব রাজকীয়। কাফিরদের জন্য যে পদ্ধতিটি উপকারী, সেটা আপনাদের জন্য লাভজনক হবে না। তাছাড়া আপনাদের উদাহরণ হলাে, যেমন মাথার টুপিতে সামান্য নাপাক লেগে গেলেও তৎক্ষণাৎ ছুড়ে ফেলা হয়। কিন্তু জুতার মধ্যে নাপাক লাগলে তা ছুড়ে ফেলা হয় না। ঠিক এমনিভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাদেরকে নাপাকিলিপ্ত দেখতে চান না। যদি কখনও আপনাদের গায়ে নাপাক লেগে যায়, তখনই লাঠিপেটা খাবেন। কাফেররা যতই গােনাহের কাদায় কর্দমাক্ত হােক, সেটা বরদাশত করা হবে। অতএব, আপনারা যদি উন্নতি চান, তাহলে লক্ষ্য করবেন, মুসলমানদের উন্নয়ন কিভাবে হয়েছিল। যারা সাহাবায়ে কেরামের উন্নতি ইতিহাস দেখেছেন, তাঁরা ভালাে করেই জানেন, তাঁদের উন্নতির একমাত্র কারণ ছিল দ্বীনের আনুগত্য। দ্বীনদারিতে তাঁরা ছিলেন পাকাপােক্ত। তাঁদের লেনদেন, সামাজিকতা, নৈতিকতা, আখলাক-চরিত্র, ইসলামি বিধিবিধানের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। এজন্য ভিন্ন জাতিগুলাে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং হতও। কেউ যদি তাদের মােকাবেলায় আসত, সে সময় আল্লাহ তাআলা তাদের সাহায্য করতেন। যেহেতু তারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে রেখেছিলেন, এ কারণেই একেবারে আসবাব-উপকরণ এবং ধনবল-জনবল কম থাকা সত্ত্বেও বড়-বড় রাজা-বাদশাহরাও তাদের চোখের দিকে চোখ তােলার সাহস পায়নি।

নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত লিখুন :