ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস - History of Babylonian Civilization

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ইতিহাস - History of Babylonian Civilization - Bongo Tweet

ইতিহাস প্রসিদ্ধ নৃপতি দুঙ্গীর মৃত্যুর পর সুমেরীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর যে ইতিহাস প্রসিদ্ধ সাম্রাজ্যের উদ্ভব ঘটে, সেটি ছিল ব্যাবিলনীয়। কালক্রমে এটি সমগ্র দক্ষিণ মেসােপটেমিয়া পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনাে কোনাে ঐতিহাসিকের মতে, “এটি ছিল প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সমসাময়িক এবং সমান গুরুত্বপূর্ণ।” এ সভ্যতা টাইগ্রীস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল। 

ব্যাবিলন শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে “বাব ইল” শব্দ থেকে। "বাব ইল”-এর অর্থ দেবতার নগর। আরব ঐতিহাসিকগণ এ উন্নত উপত্যকাভূমিকে “উম্মুল বিলাদ” বা সভ্যতার জন্মভূমি নামে অভিহিত করেছে। ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, “মেসােপটেমিয়াই মানবসভ্যতার আদি লীলাভূমি।” ঐতিহাসিক ম্যালােয়ান মনে করেন, “খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে এ অববাহিকা সভ্যতার প্রথম আলােকে উদ্ভাসিত হয়।” 

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সেমেটিক জাতির একটি শাখা টাইগ্রীস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) উপত্যকায় গমন করে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে সুমেরীয়দের কাছে গৃহ নির্মাণ, জলসেচ, লিখন পদ্ধতি প্রভৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। অতঃপর কালক্রমে অ-সেমেটিক সুমেরীয় জাতি এবং উল্লিখিত সেমেটিক জাতির সংমিশ্রণে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে। 


ব্যাবিলনীয়দের রাজনৈতিক ইতিহাস

গ্রিক, প্যালেস্টাইন এবং ইটালির ন্যায় এ অঞ্চলটিও ছিল প্রাচীরবেষ্টিত অসংখ্য নগর রাষ্ট্রের সমষ্টি। রাজ্যগুলাের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য বিদ্যমান না থাকায় সেগুলাে প্রভুত্ব স্থাপনের নিমিত্ত পরপর সংগ্রামে লিপ্ত থাকত। এ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমেই প্রথম সারগন আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ অব্দে সুমেরীয়দের পরাজিত করে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জন করেন। ঐতিহাসিক মায়ার্স বলেন, “তিনি ব্যাবিলনিয়ায় একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার বাহুবল ‘পড়ন্ত সূর্যের দেশ’ (সিরিয়া) পর্যন্ত বহন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য প্রায় ৪০০ বছর স্থায়ী হয়। 

সেমেটিক জাতির অপর একটি শাখা সিরিয়া হতে অগ্রসর হয়ে সুমার-আক্কাদ সাম্রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চল অধিকার করে। এরা ইতিহাসে আমােরাইট নামে পরিচিত। এ বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি হাম্মুরাবি (খ্রিস্টপূর্ব ২১২৩–২০৮১ অব্দ) ব্যাবিলনে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করে একটি শক্তিশালী ও সংঘবদ্ধ সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। শাসন-সংগঠক, সুদক্ষ আইনবিদ ও বিজ্ঞ শাসক হিসেবে এবং ব্যাবিলনীয় সভ্যতার উন্মেষ ও ক্রমবিকাশে অপরিসীম অবদান রেখে প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাসে তিনি অম্লান স্বাক্ষর রেখে গেছেন। 


হাম্মুরাবির আইন বা আইন সংহিতা 

সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাবিলনীয় সম্রাট হাম্মুরাবি (খ্রিস্টপূর্ব ২১২৩–২০৮১ অব্দ) শুধু একটি বিরাট সাম্রাজ্যের অধিকারীই ছিলেন না, তিনি একটি বিখ্যাত আইন সংহিতা প্রণয়ন করে ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। 

৪০ শতাব্দী পরে তাঁর আইন সংহিতা ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ ১৯০২ সালে এম. ডি. মরগান সুসা নামক স্থানে ব্যাবিলনীয়দের প্রাচীনতম দলিল উদ্ধার করেন। প্যারিসের ল্যুভর যাদুঘরে সংরক্ষিত এ দলিল অর্থাৎ শিলালিপি “হামুরাবির আইন" বা আইন সংহিতা নামে খ্যাত। সুমেরীয় রাজা দুঙ্গীর রচিত আইনের উপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হলেও হাম্মুরাবির আইন সংহিতা মনুষ্য প্রণীত আইন সংহিতার মধ্যে সবচাইতে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ।

আইন সম্বলিত প্রস্তরটি ৮ ফুট উঁচু মসৃণ ব্যাসেল্ট পাথর এবং এর উপরের দিক স্থূলভাবে বৃত্তাকার। স্তম্ভের উপর দিকে হাম্মুরাবি প্রার্থনার ভঙ্গিতে সিংহাসনে উপবিষ্ট সামাস দেবতার সামনে দাড়িয়ে রয়েছেন। অতঃপর দেবতা সামাস তাকে এ আইন সংহিতা উপহার দেন –এরূপ একটি দৃশ্য উক্ত স্তম্বে খােদিত রয়েছে। স্তম্ভের বাকি অংশের সামনে ও পিছনে দু’দিকে সংবাদপত্রের মতাে কলামে ২৮২ টি আইন অত্যন্ত বিশুদ্ধ ব্যাবিলনীয় ভাষায় খােদি রয়েছে। এ ২৮২ টি আইন মূলত নানা প্রকার আইনভঙ্গের শাস্তি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, বিবাহ, পরিবার, সম্পত্তি, বৃত্তিধারী লোকদের পারিশ্রমিক ও দায়িত্ব, কৃষিবিষয়ক আইনগত সমস্যা, ভাড়ার হার এবং পরিমাণ, বিভিন্ন দ্রব্যাদির মূল্য, ক্রয়-বিক্রয়ের নীতিমালা ইত্যাদি সংক্রান্ত। এক কথায়, সাম্রাজ্যের সকল শ্রেণির জনগণের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে নির্দেশাবলি এতে খােদিত আছে। চোখের বদলে চোখ’, ‘দাঁতের বদলে দাঁত' ইত্যাদি অত্যন্ত কঠোর ফৌজদারী দণ্ডবিধির কথা এতে উল্লেখ রয়েছে। এর এক দীর্ঘ উপসংহারে বিবৃত হয়েছে—“যে সুযােগ্য রাজা হাম্মুরাবি প্রতিষ্ঠিত এ ন্যায় আইন সংহিতা উৎকীর্ণ স্তম্ভের ক্ষতিসাধন অথবা পরিবর্তন করবে, তার উপর দৈব অভিশাপ বা শাস্তি নেমে আসবে।” 

প্রায় ২০০০ বছরের অধিককাল ধরে এ আইন সংহিতাটি অ্যাসিরীয়, ব্যাবিলনীয় প্রভৃতি সাম্রাজ্যে কার্যকর ছিল। এতদ্ব্যতীত তাঁর উদ্ধারকৃত ৫৫ খানি পত্র অদ্যাবধি বিদ্যমান থেকে সে আমলের শিক্ষা ও সংস্কৃতির স্বাক্ষর বহন করছে। তার সংগৃহীত ও রচিত আইন সংহিতাটি রােমান আইনকে বিশেষভাবে এবং আধুনিক পাশ্চাত্য আইনকে সাধারণভাবে প্রভাবান্বিত করেছে। 


ব্যাবিলনীয়দের লিখন পদ্ধতি

প্রাচীন ব্যাবিলনে “কুইনিফরম লিখন" নামে কীলক আকারে এক অভিনব লিখন পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। নিঃসন্দেহে এটি প্রাচীন মিশরীয় এবং সুমেরীয় “চিত্র-লিখন" পদ্ধতি অপেক্ষা উন্নততর ছিল। হয় পাথরে খােদাই নচেৎ মাটির থালাতে তিনকোণা কাঠি দিয়ে লেখা পাত রৌদ্রে শুকিয়ে বা অগ্নিতে সেঁকে রাখা হতাে। সম্ভবত তারা প্রায় ৫০০ অক্ষর ব্যবহার করত। এগুলাে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। ঐতিহাসিক মায়ার্সের মতে–পশ্চিম এশিয়ার জনগণের মধ্যে ব্যাবিলনীয় লিখন পদ্ধতি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ বছর হতে খ্রিস্টীয় শতাব্দী পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। 


ব্যাবিলনীয়দের ধর্ম

প্রাচীন ব্যাবিলনবাসী বহু দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা করতাে। সূর্যদেব মারদুক ছিল তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা। এ ছাড়া তারা প্রণয়ের দেবী ইসতার, বায়ুর দেবতা মারুত্তস এবং অসংখ্য নগর-দেবতা ও ছােটখাট দেব-দেবীর পূজা করতো। অশরীরী প্রেতাত্মার শক্তিতে তাঁরা বিশ্বাস করতাে। তাদের ধর্মবিশ্বাস হতে জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রসার ঘটেছিল। ভবিষ্যৎ গণনায় তারা বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করে। 


ব্যাবিলনীয়দের কৃষি ব্যবস্থা

দজলা ও ফোরাত নদীর উপত্যকা অত্যন্ত উর্বর থাকায় কৃষিকার্যে ব্যাবিলনবাসী প্রভূত উন্নতি সাধন করেছিল। নদীর বন্যার প্রকোপ হতে শস্যক্ষেত্র রক্ষার জন্য এবং অনাবৃষ্টির সময় ভূমিতে জলসেচের জন্য উপযুক্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বিখ্যাত গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডােটাস এ অঞ্চলের শস্যের প্রাচুর্য এবং কৃষি ব্যবস্থার পঞ্চমুখে প্রশংসা করেন। কৃষিকার্যে অবহেলা কিংবা খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণে অবহেলার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান ছিল। সামন্ত ভূমি ব্যবস্থায় কৃষকগণ উৎপন্ন শস্যের দুই-তৃতীয়াংশ জমির মালিককে দিতে বাধ্য থাকতাে।


ব্যাবিলনীয়দের ব্যবসায়-বাণিজ্য

ব্যবসায়-বাণিজ্যেও তারা উন্নত ছিল। হাম্মুরাবির আইনের নির্দেশ মােতাবেক অবগত হওয়া যায় যে, অসাধু ও অতিরিক্ত মুনাফাখাের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। নির্দিষ্ট ওজন ও পরিমাপ প্রণালি ব্যাবিলনে প্রচলিত ছিল। হিসাব রক্ষার এক নির্ভুল পদ্ধতিও তারা আবিষ্কার করেছিল। ব্যবসার বাণিজ্য, ব্যাংক, শিল্প সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। তারা উদ্বৃত্ত শসা, তেল, খেজুর, মুয়পাত্র, কাচ, চামড়া ইত্যা। রপ্তানি করতাে এবং স্বর্ণ, রৌপ্য, সীসা ইত্যাদি আমদানি করতাে। ভারতীয় উপমহাদেশের হরম্পা ও মহেন-জে দারাে এবং মিশরের সাথে ব্যাবিলনীয়দের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও যােগাযােগ বিদ্যমান ছিল। 


ব্যাবিলনীয়দের সাহিত্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা

গদ্য ও পদ্য সাহিত্যেও তারা কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। জনপ্রিয় বিখ্যাত ‘গিলগামেশ উপাখ্যান’ সুমেরীয়দের নিকট থেকে সংগ্রহ করে ব্যাবিলনের কবিগণ অপূর্ব সাহিত্য সৃষ্টি করেন। মহাকাব্য ও পৌরাণিক কাহিনী সম্বলিত সাহিত্য রচনায় তারা ছিল সিদ্ধহস্ত। 

ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদগণ খননকার্য পরিচালনা করে ১৮৯৪ সালে একটি ব্যাবিলনীয় স্কুলের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন। স্কুলটি ছিল ৫৫০ বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট এবং বর্গাকার। এ স্কুলে সম্ভবত প্রায় ৩৫০টি চিহ্ন মুখস্থ করতে হতাে এবং লিখন পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষাদান করার ব্যবস্থা ছিল। প্রতিষ্ঠানটির দেয়ালে লেখা ছিল—“ফলকে লিখন পদ্ধতিতে যে উৎকর্ষ সাধন করবে, সে সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল হবে।” 


ব্যাবিলনীয়দের চিত্র ও অঙ্কনবিদ্যা

চিত্র ও অঙ্কনবিদ্যায়ও তারা পারদর্শী ছিল। পাথর, চুনাপাথর এবং ধাতব বস্তুর উপর তারা খােদাই করে সুন্দর মূর্তি অঙ্কন করতাে। মাটি ও পাথরের বাসন-পত্রের গায়ের কারুশিল্প তাদের উন্নতমানের শিল্প পরিচয় বহন করে। এগুলাে ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মােহর, অলঙ্কার এবং রক্ষাকবচে ব্যাবিলনীয় সভ্যতার রূপ অনুধাবন করা যায় । 


জ্যোতির্বিদ্যা ও গণিতশাস্ত্রে অবদান

ব্যাবিলনে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র এবং আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের চর্চা হতাে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রাদি সম্পর্কে তারা যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছিল। সূর্যঘড়ি ও জলঘড়ি দ্বারা তারা সময় নিরূপণ করত। বার মাসে বছর গণনা, চার সপ্তাহে মাস, বার ঘণ্টায় দিন এবং এক ঘণ্টাকে ষাট মিনিটে ভাগ করার সর্বপ্রথম কৃতিত্ব ছিল তাদেরই। চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ সম্পর্কেও তাদের সঠিক ধারণা ছিল। তাদের তৈরি ব্যাবিলনীয় পঞ্জিকা মিশরীয় পঞ্জিকা অপেক্ষা উন্নত ধরনের ছিল। তারা দশমিক গণনা পদ্ধতি আবিষ্কার করে অঙ্কশাস্ত্রে মৌলিক অবদান রেখেছেন। তারা ওজন, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, শক্তি পরিমাপক প্রথার উদ্ভাবন করার গৌরব ও কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। 


চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান

চিকিৎসা বিদ্যায়ও তারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল। সে যুগে তাদের দেশে কমপক্ষে ৫০০ রকম ওষুধের প্রচলন ছিল। ঐতিহাসিক জে. ই. সােয়াইন বলেন, “তারা সূর্যমুখীর বীজকে দাঁত ব্যথার জন্য, দুধকে পেটের অসুখের জন্য এবং তেলের স্যাম্পু এবং মদকে টেকো বা কেশহীন মাথার জন্য ওষুধ হিসেবে সুপারিশ করতাে।”


ব্যাবিলনীয় সভ্যতার মূল্যায়ন ও প্রভাব

মুসলিম-অসুমলিম, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য এবং আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা পটভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ফরাসি ও জার্মানি ভূতত্ত্ববিদদের ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করার ফলে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা নিঃসন্দেহে ছিল উন্নত ও উচুদরের সভ্যতা। ঐতিহাসিক জে. ই. সােয়াইন বলেন, “পরবর্তীকালের দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং এমনকি গ্রিকগণও সভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যাবিলনীয়দের নিকট ঋণী।” 

তারা নিজস্ব এবং অন্যান্য জাতির পৌরাণিক কাহিনী কিংবা লৌকিক উপাখ্যান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে “হিব্রু” বাইবেলের পটভূমি রচনা করে গেছেন। তারা সমালােচনামূলক এবং বিস্তৃতভাবে পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করে অঙ্ক- শাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূতত্ত্ববিদ্যা, ইতিহাস, চিকিৎসাবিদ্যা, ব্যাকরণ, দর্শন এবং অভিধান সংকলনের ভিত্তি রচনা করে গেছেন। মহাকাব্য, ধর্মীয় গীতি, প্রবাদ ইত্যাদিরও প্রবর্তক বললে অত্যুক্তি করা হবে না। প্রকৃতপক্ষে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গভীর জ্ঞান অর্জনের অজানা পথের সন্ধান বিশ্ববাসীকে তারাই প্রথম দান করে গেছেন। তাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদান পরবর্তী শতাব্দীগুলাের অনুসন্ধিৎসু পণ্ডিতদেরকে গবেষণা পরিচালনা করার পথ রচনা করে গেছেন। এক কথায় আধুনিক সভ্যতা প্রাচীন কালের ব্যাবিলনীয় সভ্যতার কাছে বিশেষভাবে ঋণী। 

তথ্যসূত্র : 
বই : ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
লেখক : হাসান আলী চৌধুরী।

2 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন