মুজিবনগর সরকার গঠনের কারণ, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম

মুজিবনগর সরকার গঠনের কারণ, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম - Bongo Tweet
ছবি: albd.org

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘােষণা দেওয়ার পর এই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই সরকারের সরকার প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করেন মুজিবনগর। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই সরকারের প্রধান কার্যালয় ছিল কলকাতায়। নিরাপত্তা ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবিধার্থেই কলকাতায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়। দাপ্তরিক কাজ কলকাতায় সম্পাদিত হলেও কাগজপত্রে মুজিবনগর লেখা হয়।


মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রী পরিষদ

  • রাষ্ট্রপতি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পাকিস্তান সামরিক শাসকদের হাতে বন্দি)
  • উপরাষ্ট্রপতি : সৈয়দ নজরুল ইসলাম (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পদাধিকার বলে সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ।)
  • প্রধানমন্ত্রী : তাজউদ্দিন আহমদ 
  • অর্থমন্ত্রী : এম. মনসুর আলী 
  • স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী : এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান 
  • পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী : খন্দকার মােশতাক আহমেদ
  • প্রধান সেনাপতি : কর্নেল (অব.) এম. এ. জি. ওসমানী এম. এন. এ. 
  • চিফ অব স্টাফ : কর্ণেল (অব.) আবদুর রব 
  • ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং বিমান বাহিনী প্রধান : গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার 


মুজিবনগর সরকার গঠনের উদ্দেশ্য

  • বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণার বাস্তবায়ন এবং আনুষ্ঠানিক ও সাংগঠনিক রূপ প্রদান করা।
  •  মুক্তিযুদ্ধকে সুষ্ঠু ও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করে দ্রুত দেশকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করা। 
  • মুক্তিযােদ্ধাদের সংগঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
  • প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসলীলা ও নির্যাতন-নিপীড়ন সম্পর্কে ধারণা প্রদান এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করা।
  • পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালদের অত্যাচারে ভারতে চলে যাওয়া শরণার্থীদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করা। 
  • মুক্তিযােদ্ধাদের দ্বারা মুক্তাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করা। 


মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম

  • স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা নিয়ে কোনােরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই। 
  • পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন আমাদের দেশের অভ্যন্তরে নিরীহ জনসাধারণের উপর পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছিল তখন মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ায় স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। মুজিবনগর সরকার মুক্তাঞ্চলে এবং ভারতীয় এলাকায় মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। 
  • মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করে। যুদ্ধের সময়ে মুক্তিযােদ্ধাদের মনােবল ঠিক রাখা এবং বিভিন্ন সেক্টর এরং গেরিলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এই সরকার নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে। 
  • স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত রাখার জন্য মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও পত্রিকার মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালায়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দেশাত্মবােধক গান ও অভিনীত এম. আর. আখতার মুকুলের চরমপত্র , রাজু আহমেদের “জল্লাদের দরবার” অনুষ্ঠানগুলাে জনগণকে উদ্দীপ্ত করে। 
  • মুজিবনগর সরকার নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে একটি বেসামরিক প্রশাসনের সূচনা করে। 


তথ্যসূত্র : 
বই : পৌরনীতি ও সুশাসন। 
লেখক : প্রফেসর মোঃ মোজাম্মেল হক

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন