বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর, সীমানা ও সেক্টর কমান্ডারদের নাম

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর, সীমানা ও সেক্টর কমান্ডারদের নাম - Bongo Tweet

২৫ শে মার্চ রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে পাক সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। মধ্যরাত্রির পূর্বেই তারা সুপরিকল্পিতভাবে ও সতর্কবাণী ছাড়াই অসহায় ও নিরস্ত্র ঢাকাবাসীর উপর আক্রমণ শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, ই.পি.আর (বর্তমানে বর্ডার গার্ড, বাংলাদেশ) রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করে। ই.পি.আর ও পুলিশ লাইনে কিছুটা প্রতিরােধ গড়ে তােলা হয়। পরে তারা পিছু হটে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করে। পাকিস্তান বাহিনী ট্যাঙ্ক, কামান, ভারী মেশিনগান নিয়ে নির্বিচারে আক্রমণ করে। শুরু হয় তাদের “অপারেশন সার্চ লাইট”। ২৫ শে মার্চের রাতেই অগণিত নর-নারী ও শিশু হত্যার শিকার হয়। বিভীষিকাময় ২৫ শে মার্চ বাঙালির ইতিহাসে “কালাে রাত্রি” হিসেবে পরিচিত। 

কালােরাত্রি ২৫শে মার্চ পার হওয়ার পর থেকে ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা শহরে সর্বস্তরের জনগণের সমন্বয়ে রাতারাতি মুক্তি বাহিনী গড়ে ওঠে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের সাধারণ মুক্তিকামীদের এক অসম লড়াই যা বাংলার ইতিহাসে মুক্তিহৃদ্ধ নামে পরিচিত। মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশকে ৪টি সামরিক জোনে বিভক্ত করে ৪ জন সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করেন। ১১ এপ্রিল তা পুনর্নির্ধারণ করে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। এছাড়াও কিছু সাবসেক্টর এবং বিগ্রেড ফোর্স গঠিত হয়।

সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডারদের তালিকা :

HTML Table Generator
সেক্টর কমান্ডার
১. চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী নদী পর্যন্ত কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২৫ জুন, ১৯৭১) ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম (২৮ জুন, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
২. নােয়াখালী জেলা, কুমিল্লা জেলার আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত এবং ফরিদপুর ও ঢাকার অংশবিশেষ মেজর খালেদ মােশাররফ (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) মেজর এ.টি.এম. হায়দার (২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৩. সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশােরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশবিশেষ মেজর কে এম শফিউল্লাহ (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২১ জুলাই, ১৯৭১) মেজর এ.এন.এম. নূরুজ্জামান (২৩ জুলাই, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
 ৪. সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খােয়াই- শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট -ডাউকি সড়ক পর্যন্ত মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
 ৫. সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল মেজর মীর শওকত আলী (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৬. সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা মােহাম্মদ খাদেমুল বাশার (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৭. দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা মেজর নাজমুল হক (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১, দুর্ঘটনায় নিহত) মেজর কাজী নূরুজ্জামান (২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
 ৮. সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশাের জেলা, ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়কের উত্তরাংশ মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-১৭ জুলাই, ১৯৭১) মেজর এম.এ. মঞ্জুর (১৪ আগস্ট, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
৯. দৌলতপুর-সাতক্ষীরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী মেজর এম এ জলিল (১০ এপ্রিল, ১৯৭১-২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১) মেজর জয়নুল আবেদীন (২৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২
১০. কোনাে আঞ্চলিক সীমানা নেই। নৌবাহিনীর কমান্ডাে দ্বারা গঠিত। শত্রুপক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানাে হতাে।
১১. কিশােরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা এবং নগরবাড়ি-আরিচা থেকে ফুলছড়ি- বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত যমুনা নদী ও তীর অঞ্চল মেজর জিয়াউর রহমান (২৬ জুন, ১৯৭১-১০ অক্টোবর, ১৯৭১) মেজর আবু তাহের (১০ অক্টোবর, ১৯৭১-২ নভেম্বর, ১৯৭১) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহ খান (২ নভেম্বর, ১৯৭১-১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২)
 টাংগাইল সেক্টর : সমগ্র টাংগাইল জেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার অংশ কাদের সিদ্দিকী
আকাশপথ : বাংলাদেশের সমগ্র আকাশসীমা গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার

এছাড়াও তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স ছিল। কলকাতা পোর্ট কমিশনারের নিকট থেকে এম. বি. পদ্মা এবং এম. ভি. পলাশ নামক দুটি জাহাজ সংগ্রহ করে মাত্র ৪৫ জন নৌসেনার সমন্বয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর গোড়াপত্তন হয়। ২৮ শে সেপ্টেম্বর বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।

তথ্যসূত্র : 
বই : পৌরনীতি ও সুশাসন। 
লেখক : প্রফেসর মোঃ মোজাম্মেল হক

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন