এসিডিটি কি? এসিডিটির লক্ষণ ও এসিডিটি দূর করার উপায়

এসিডিটি কি? এসিডিটির লক্ষণ ও এসিডিটি দূর করার উপায় - বঙ্গ টুইট -Bongo Tweet

দিন বদলের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনধারা। কর্মস্থল কিংবা ব্যক্তিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে নানামুখী প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ব্যস্ততা। চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান কমাতে গিয়ে জীবন হয়ে পড়ছে স্ট্রেসফুল। ফলে এসিডিটির সমস্যা দেখা দিচ্ছে অনেকেরই। 

এসিডিটি বলা হয় - পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া। সাধারণত অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার এবং ভাজাপােড়া জাতীয় খাবারে এটি বেশি হয়। কারণ এসব খাবারকে হজম করতে অতিরিক্ত অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। ফলে অনেক হাইড্রোজেন ক্ষরিত হয়ে ক্লোরিনের সঙ্গে মিলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে। 

কী করে বুঝবেন আপনার এসিডিটি হচ্ছে?

নিচের উপসর্গগুলাের সবক'টি কিংবা কোন কোনটি থাকলে ধরে নিতে পারেন আপনার এসিডিটি হচ্ছে- 
  • পেটের ওপরের অংশে ব্যথা বা জ্বালাপােড়া। 
  • বমির ভাব কিংবা বমি। 
  • ক্ষুধামন্দা। 
  • টক ঢেকুর। 
  • পেট ভরা ভরা বােধ করা। 
  • ওজন কমে যাওয়া (দীর্ঘদিন এসিডিটির ক্ষেত্রে)। 
  • কোষ্টকাঠিন্য। 

এসিডিটি প্রতিরােধে করণীয় কী?

খাদ্যাভ্যাস : দৈনিক মােটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণের অভ্যাস করুন। একেবারে বেশি খাবার খাবেন না। অল্প করে বার বার খাবেন। খাবার ভালাে করে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন। খাওয়ার সময় তাড়াহুড়াে না করে রিলাক্স মুডে খাবার গ্রহণ করুন। আপনি নিজেই নির্ধারণ করুন কোন কোন খাবার গ্রহণ করলে আপনার এসিডিটি হয়। সাধারণত ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপােড়া খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার এসিডিটি বাড়ায়। সুতরাং এ জাতীয় খাবার যথাসম্ভব পরিহার করুন। পাশাপাশি পরিহার করুন নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ- 

ধুমপান : ধূমপান অধিকমাত্রায় গ্যাস্ট্রিক এসিড নিঃসরণ করে। পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পেপটিক আলসারের ক্ষত সারাতে বিলম্ব ঘটায়। ধূমপান অনেক ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। এছাড়া ধূমপান পাকস্থলির ক্যান্সারের ঝুঁকিও অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। তাই পর্যায়ক্রমে ধূমপান পরিহার করুন। 

মদ্যপান : মদ্যপান গলনালী এবং পাকস্থলী প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং এসিডিটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।

ব্যথানাশক ওষুধ : অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত নিজে নিজেই ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করে থাকেন। এর কারণে পাকস্থলীতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। সাধারণত অধিকমাত্রায় বা দীর্ঘদিন এ জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। সুতরাং এসিডিটি ও পেপটিক আলসারের ঝুঁকি এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। 

চা ও কফি : অনেকে দিন-রাত মাত্রাতিরিক্ত চা কিংবা কফি পান করে থাকেন। চা ও কফি উভয়ই পাকস্থলীর এসিডিটি বাড়ায়। এ ব্যাপারে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা প্রয়ােজন। পরিমিত মাত্রায় চা ও কফি পান করা যেতে পারে।

মানসিক চাপ কমান : অত্যধিক মানসিক চাপ হৃদরােগ ও এসিডিটির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কমিয়ে দেয় হজমশক্তি। মানসিক চাপ পরিহার করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। সুষম খাবার, পরিমিত বিশ্রাম, নিয়মিত ব্যায়াম, সবার সাথে সুসম্পর্ক, পর্যাপ্ত বিনােদন, প্রার্থনা, মেডিটেশন, ম্যাসাজ প্রভৃতি আপনার মনকে রিলাক্স করবে। রাগ এবং দুশ্চিন্তা পরিহার করুন। ঠান্ডা মাথায় সমস্যার মােকাবিলা করুন। মানসিক চাপ পরিহার করতে পারলে আপনার কাজের মানও অনেকাংশে বেড়ে যাবে। 

মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করুন : শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন। মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরােধ করুন। আপনার প্রয়ােজন অনুযায়ী সুষম খাবার গ্রহণ করুন। অতিরিক্ত লবণ, চর্বি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড ও কোল্ড ড্রিংকস যথাসম্ভব পরিহার করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি, ফলমূল ও শাক-সবজি খান। প্রতিদিন কিছু সময় মুক্ত বাতাসে হাঁটুন। সুযােগ থাকলে বাগান করুন। সাঁতার কাটুন। সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন ত্রিশ মিনিট ধরে হালকা ব্যায়াম করুন। 

সুতরাং ওপরের নির্দেশনা মেনে চললে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসিডিটি প্রতিরােধ করা সম্ভব হবে। সাধারণ এসিডিটির জন্য নিজে নিজেই এন্টাসিড বড়ি চুষে খেতে পারেন কিন্তু বেশি মাত্রায় সমস্যা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সর্বোপরি এসিডিটি প্রতিরােধ করুন, আর নিশ্চিত করুন আপনার দৈনন্দিন। 

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন