মহিলাদের চোখ খোলা রাখা কি জায়েয?

মহিলাদের চোখ খোলা রাখা কি জায়েয - বঙ্গ টুইট - Bongo Tweet

আজকাল পর্দানশীন নারীদের মধ্যে অনেককে দেখা যায়, তারা হাত-পাসহ পূর্ণ শরীর আবৃত রাখলেও দু’চোখ খোলা রাখে। অনেকে জানতে চান যে, এভাবে চোখ খোলা রাখা কি বৈধ? চোখ পর্দার বিধানের আওতাধীন নয় কি? নিম্নে আমরা এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান আলোচনা করছি। 

নারীগণ প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে বোরকা বা পুরো শরীর ঢাকা যায় এমন বড় ও মোটা কাপড় দ্বারা সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে বের হবে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের কোনো অংশ খোলা রাখবে না। চেহারা ও উভয় হাত কব্জিসহ এবং উভয় পা টাখনুসহ আবৃত করবে। মনে রাখতে হবে, টাখনু পর্যন্ত কদম, কব্জি পর্যন্ত হাতের পাতা এবং চেহারা সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়, ফলে তা নামাযের সময় খোলা রাখা যাবে। কিন্তু এসব অঙ্গ পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। ফলে গায়রে মাহরাম ও পরপুরুষের সামনে তা খোলা রাখা যাবে না।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

'হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, আপনার কন্যাদের এবং মুমিনদের নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' -সূরা আহযাব : ৫৯

অন্য আয়াতে সাহাবীগণকে সম্বোধন করে বলেছেন-

ِوَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ۚ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

'তোমরা তাঁদের (নবী পত্নীদের) নিকট কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও। এই বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।' -সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩

এই আয়াতদ্বয় থেকে বোঝা যায়, নারীর দেহের কোনো অংশই পর্দার বিধানের বাইরে নয়। উম্মুল মুমিনীনগণের আমলও তা প্রমাণ করে।

তবে প্রয়োজনে পথ-ঘাট দেখার জন্য শুধু চোখ খোলা রাখা যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. উপরোক্ত প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-

ﺃﻣﺮ اﻟﻠﻪ ﻧﺴﺎء اﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺇﺫا ﺧﺮﺟﻦ ﻣﻦ ﺑﻴﻮﺗﻬﻦ ﻓﻲ ﺣﺎﺟﺔ ﺃﻥ ﻳﻐﻄﻴﻦ ﻭﺟﻮﻫﻬﻦ ﻣﻦ ﻓﻮﻕ ﺭﺅﻭﺳﻬﻦ ﺑﺎﻟﺠﻼﺑﻴﺐ، ﻭﻳﺒﺪﻳﻦ ﻋﻴﻨﺎ ﻭاﺣﺪﺓ. 

'আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) এক চোখ খোলা রাখতে পারবে।'
[তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৬৫৪; তাফসীরে তবারী ২০/৩২৪]

বিখ্যাত তাবেয়ী ইবনে সীরীন রহ. বলেন-

ﺳﺄﻟﺖ ﻋﺒﻴﺪﺓ اﻟﺴﻠﻤﺎﻧﻲ ﻋﻦ ﻗﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ: {يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ}، ﻓﻐﻄﻰ ﻭﺟﻬﻪ ﻭﺭﺃﺳﻪ ﻭﺃﺑﺮﺯ ﻋﻴﻨﻪ اﻟﻴﺴﺮﻯ. 

'আমি (বিশিষ্ট তাবেয়ী) আবীদা সালমানী রহ.কে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাঁর কাপড় দ্বারা নিজের মাথা ও চেহারা আবৃত করলেন এবং বাম চোখ খোলা রাখলেন।'
[তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৬৫৪; তাফসীরে তবারী ২০/৩২৫; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৫৪৬; ফাতাওয়া দারুল উলূম যাকারিয়া ৭/১৮৫, ১৯২-১৯৩]

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন-

ﻭاﺧﺘﻠﻒ اﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺻﻮﺭﺓ ﺇﺭﺧﺎﺋﻪ(أي الجلباب)، ﻓﻘﺎﻝ اﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻭﻋﺒﻴﺪﺓ اﻟﺴﻠﻤﺎﻧﻲ: ﺫﻟﻚ ﺃﻥ ﺗﻠﻮﻳﻪ اﻟﻤﺮﺃﺓ ﺣﺘﻰ ﻻ ﻳﻈﻬﺮ ﻣﻨﻬﺎ ﺇﻻ ﻋﻴﻦ ﻭاﺣﺪﺓ ﺗﺒﺼﺮ ﺑﻬﺎ. ﻭﻗﺎﻝ اﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺃﻳﻀﺎ ﻭﻗﺘﺎﺩﺓ: ﺫﻟﻚ ﺃﻥ ﺗﻠﻮﻳﻪ ﻓﻮﻕ اﻟﺠﺒﻴﻦ ﻭﺗﺸﺪﻩ، ﺛﻢ ﺗﻌﻄﻔﻪ ﻋﻠﻰ اﻷﻧﻒ، ﻭﺇﻥ ﻇﻬﺮﺕ ﻋﻴﻨﺎﻫﺎ ﻟﻜﻨﻪ ﻳﺴﺘﺮ اﻟﺼﺪﺭ ﻭﻣﻌﻈﻢ اﻟﻮﺟﻪ. 
[তাফসীরে কুরতুবী ৭/৫৩২]

উপরোক্ত আছার দু'টিতে যে এক চোখ খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে মাথার উপর থেকে মুখমণ্ডলের উপর এমনভাবে নিকাব ঝুলানো যাতে শুধু নিচের দিকে রাস্তা দেখা যায়, পরপুরুষ যেন চোখের কোনো অংশই দেখতে না পারে। কারণ মহিলাদের সম্পূর্ণ শরীরই পর্দার অন্তর্ভুক্ত।

বর্তমানে এমন নেকাব পরিধান করার প্রচলন ব্যাপকতা লাভ করেছে যাতে নারীর চোখ দেখা যায়। কিন্তু অনেকে উক্ত নেকাব ঠিকমতো পরেন না। নেকাবে চোখ খোলা রাখতে গিয়ে গাল, মুখ ও কপালের অনেকাংশ উন্মুক্ত রেখে দেন। এভাবে চেহারার প্রায় অর্ধেক খোলা থেকে যায়। আবার অনেকে পুরো মুখমণ্ডল ঢাকলেও ভ্রুর উপর থেকে নাকের অর্ধেক পর্যন্ত খোলা রাখেন। এভাবে নেকাব পরা বা চেহারা ঢাকা শরীয়তে অনুমোদিত নয়। 

সারকথা, নেকাব যদি এমন হয় যা নারীর শুধুমাত্র দুই চোখ উন্মুক্ত রাখে,  দুই চোখ ছাড়া চেহারার অন্য কোনো অংশ প্রকাশ না করে তাহলে সেটা ব্যবহার করার অনুমতি আছে। আর যদি এরকম না হয় তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। সেক্ষেত্রে নারীকে এমন কিছু পরতে হবে যা তার পুরো মুখমণ্ডল ঢেকে রাখে।

উল্লেখ্য, চোখ খোলা রাখলে চোখে কোনো প্রকার প্রসাধনী দিয়ে সাজসজ্জা করা যাবে না। নতুবা তা হবে সৌন্দর্য-প্রদর্শন, যা সম্পূর্ণ নাজায়েয। 

لا حرج على المرأة في لبس النقاب الذي تنكشف به العينان فقط بفتحات ضيقة لا يظهر منها سوى قدر حاجة الإبصار لتتمكن المرأة من النظر ، لكن يجب الحذر من كشف العينين بصورة تدعو للفتنة، بحيث يكون بالعين شيء من الكحل ، وينبغي أيضاً الحذر من النقاب الذي انتشر في هذه الأيام، مما يبدو منه أجزاء كبيرة من محاجر العينين والخدين فهذا لا يجوز، لما فيه من إبداء الزينة التي أمر الله بإخفائها، بل هو زينة في نفسه وملفت للأنظار ومصيدة لقلوب الرجال. 

তবে প্রয়োজন না হলে চোখ ঢেকে রাখাই উত্তম। আজকাল নেকাবের জন্য এক ধরনের পাতলা কাপড় পাওয়া যায়, যা ব্যবহারে চোখ ঢেকে যায়। আবার চলাচলেও কোনো অসুবিধা হয় না।

وإن سترتهما بساتر خفيف كان أولى وأفضل.

آنکھ کھلے برقعے:
بہتر ہے کہ نقاب ایسا استعمال کیا جائے کہ آنکھ کے حصہ پر بھی جالی لگی ہو، تاہم فقہاء کرام کی تصریحات کے مطابق آنکھیں کھلی رکھنے کی اجازت ہے، تاکہ چلنے میں سہولت ہو. (کتاب الفتاوی ٨٣/٦).

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন