Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

জয় নাকি পরাজয়?

জয় নাকি পরাজয় - ইফতেখার সিফাত - বঙ্গ টুইট - Bongo Tweet

সত্তাগতভাবে ক্রিকেট খেলা হারাম না। শরীরচর্চা ও কেবল বিনোদনের জন্য উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে ক্রিকেট খেলা বৈধ। [১] 

কিন্তু প্রচলিত ক্রিকেট খেলার সাথে প্রাসঙ্গিক অনেক বিষয় যুক্ত হওয়ার কারণে তা সম্পূর্ণ হারামে রূপান্তরিত হয়েছে। এ ব্যাপারেও উলামায়ে কেরাম একমত। [২]

প্রচলিত ক্রিকেট খেলা শুধুই খেলা নয়, বরং তা রূপ নিয়েছে পুঁজিবাদী বিশ্বের এক জমজমাট আয়োজনে।

যেখানে একজন লোকের জীবনে একমাত্র উদ্দেশ্যই হয়ে দাঁড়ায় এই খেলা। এটা হয়ে যায় তার জীবনের পেশা।পুঁজিবাদীরা এখান থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে আমাদের কষ্টের অর্থকড়ি। সাথে নষ্ট করছে আমাদের মূল্যবান সময় রবের স্মরণ থেকে গাফেল করে। কঠিন বাস্তবতা থেকে দূরে সড়িয়ে আমাদের চেতনাকে নষ্ট করছে ফালতু গেইমে, রঙ তামাশায়। আবার এটাকে কেন্দ্র করে সমাজে ছড়িয়ে যাচ্ছে নানা অশ্লিলতা। প্রমোটের নেশায় কোম্পানিগুলো ইসপন্সরে কোটি টাকা ব্যয় করে, তারপর পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে কোম্পানিগুলো সেই টাকা খুব সচেতনভাবেই অচেতন আমাদের থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে।

একে কেন্দ্র করে চলে জুয়া ও বাজির মহড়া। নামাজ, যিকর, ইলম, আমল কত কিছু বিনষ্ট হয় এর কারণে। এমনকি কখনো কখনো হারিয়ে যায় জীবন। দেশের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয় খেলার পিছনে। দেশের উন্নয়নে যাদের কোন ভূমিকা নেই তাদের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। মিডিয়া-পত্রিকায় তাদের আইডল ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রচার করে তরুণ এবং কিশোর সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এতো কিছু ছিনিয়ে নিয়ে এবং ধ্বংস করে আমাদের মুখস্ত বলি শিখিয়ে দেয়া হয়েছে যে, ক্রিকেটাররা বাহিরে দেশের নাম উজ্জ্বল করছে! 

প্রচলিত ক্রিকেট খেলা হারাম। আর যেকোন হারাম কাজকে ঘিরে শুকরিয়া জ্ঞাপন এবং উল্লাসে মেতে উঠাও মারাত্মক পর্যায়ের গোনাহ। অধিকন্ত এতে হারাম বিষয়কে হালাল মনে করার ট্রেন্ড চলে আসে। দুঃখজনকভাবে হারাম এই বিষয়টির রাজনৈতিক ব্যাখ্যাও দেয়া হচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বা  পাকিস্তানের বিজয়ে বেশ আনন্দ প্রকাশ করা হয়ে থাকে।এই খুশি হওয়াটা আমাদের অপদার্থতার বড় একটি ছাপ। মোদির ভারত ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু। আমাদের এই শত্রুতা দ্বীনের জন্যই। একটা হারাম ক্ষেত্রে তাদেরকে পরাজিত করে আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই।

আজকে দেহ ব্যবসার প্রতিযোগীতায় ভারতের বিপক্ষে আমাদের জয় আসলে কোন বিজয় হিসেবে বিবেচিত হত না, এটা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পরাজয়ই বটে। আদর্শের কাছে পরাজয়। যেই খেল- তামাশাগুলো যুব সমাজের চেতনাকে নির্জীব করে দিচ্ছে সেখানে বিজয়ী হয়ে আনন্দ অনুভব করা পরাজিত মানসিকতার পরিচয়। তাদেরকে তো পরাজিত করার ছিল রণে-ইলমে, তাদের ধরাশায়ী করার ছিল রক্তের বদলা নিয়ে এবং তাদের উপর দ্বীনকে বিজয়ী করে। সীমান্ত হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে, গে রু য়া সন্ত্রাসের জবাব প্রদানে।তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রকৃত আনন্দের ক্ষেত্র সেটা।

হারাম ময়দানে বিজয়ী হয়ে দ্বীনি সূত্রের শত্রুতার আনন্দ পাওয়া মূলত আরেক পরাজয়ের চিহ্ন বহন করে। জাহেলী যুগীয় কোন প্রথাগত বিষয়ে কাফেরদের থেকে এগিয়ে রাসূল আনন্দিত হননি, বরং তিনি স্বস্তি অনুভব করেছেন সেটাকে মিটিয়ে। কাফেরদের বাস্তবিক পরাজয়ে। আমাদের এই তৃপ্তি তাদের সফলতা। পুঁজিবাদী বিশ্ব এটাই চায়, আমরা বস্তুবাদী ফেন্টাসীতে মগ্ন থাকি। খেল তামাশা আর বেলাল্লাপনার জয়-পরাজয়ের চক্রে আটকে থাকি। এভাবে বাস্তবিক ময়দানে তাদের আগ্রাসনের মোকাবেলায় পঙ্গু হয়ে বসি আদর্শিকভাবে এবং কর্মগতভাবে। [৩] 

নিশ্চিতভাবেই প্রচলিত ক্রিকেট খেলা একটি জাহেলী সমাজের সংস্কৃতি। গ্রীক সভ্যতাতেও প্রচলিত বিভিন্ন খেল তামাশার আয়োজনের মত সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহেলী কোন প্রথা ও সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেননি। সাহাবায়ে কেরামকে সেসব সংস্কৃতির ময়দানে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়ার নির্দেশও দেননি। তিনি বরং সেগুলোর মূলোৎপাটনের আদেশ করেছেন। কেউ সেসব জাহেলী কর্মকাণ্ডে সফল হলে আনন্দিত হননি, বরং কষ্ট পেয়েছেন। সতর্ক করেছেন, বারণ করেছেন। আনন্দিত তো সেদিন হয়েছেন, যেদিন জাহেলী সংস্কৃতির বিলুপ্তির ঘোষণা দিতে পেরেছেন। 

ভারতের বিরুদ্ধে ক্রিকেট ম্যাচ জয়ের কারণে আনন্দিত হওয়ার পিছনে লুকিয়ে আছে আমাদের পরাজয়ের বার্তা। এই বিজয়ের শ্লোগান মূলত আমাদের চেতনা ধ্বংসের জানান দিচ্ছে। এই বিজয় জাহিলিয়াতের , এই উল্লাস শত্রুদের। ইসলাম ও মুসলিমদের কোন জয়-আনন্দ এখানে নেই। তাদের জন্য রয়েছে মানসিক পরাজয় ও আদর্শিক দাসত্ব। চিন্তা ও কর্মের পঙ্গুত্ব।

নোট:
[১] ইসলামে ঘোড় সওয়ার, তীরান্দাজি, সাতার ইত্যাদি খেলার পিছনে অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল কি তা লে র প্রস্তুতি। প্রচলিত কোন খেলাতেই এর কোন অস্তিত্ব নেই। বরং এখানে এসে কি তা লে র চেতনা আরো বিনষ্ট হয়, বিলুপ্ত হয়।

[২] https://www.alkawsar.com/bn/article/380/
https://islamqa.info/amp/ar/answers/75644
https://cutt.ly/iRURWgp
https://ahlehaqmedia.com/5949/

৩) গত কয়েকদিনেই তো ভারতে মুসলিমদের ১৭ টি মসজিদে ভাংচুর করা হয়েছে, হামলা হয়েছে অনেক মুসলিমদের বাড়িতে। এভাবে নির্যাতন চলছেই। এতে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কিংবা হুমকি কিছুই আসেনি। অথচ বাংলাদেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটানো দুয়েকটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত হুমকি প্রদান করেছে। নদীর বাঁধ খুলে দিয়ে কতগুলো এলাকাকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। খেলার উন্মাদনায় কি কখনো এসব অপরাধের শোধ নেয়া যাবে?

নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত লিখুন :