আল্লাহর ওয়াদা - ইসলামিক শিক্ষামূলক গল্প

ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্পের বই pdf | ইসলামিক গল্প থেকে শিক্ষা | মেয়েদের ইসলামিক গল্প | স্বামী স্ত্রীর রােমান্টিক ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্প ও কাহিনী | ছােটদের ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্প ও কাহিনী pdf | ইসলামিক গল্পের লিংক | শিশুদের ইসলামিক গল্পের বই pdf | ইসলামিক গল্পের বই | ছােটদের ইসলামিক গল্পের বই pdf | Bongotweet.com

তাপসী রাবেয়ার নাম কে না জানে? তাঁর মত ঈমানদার মহিলা পৃথিবীতে কমই জন্মেছেন। আল্লাহর ওপর তাঁর ছিল গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। তিনি আল্লাহর প্রতিটি কথা মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতেন এবং আল্লাহর হুকুম মেনে চলতেন। রাবেয় বসরীর কিছু দরকার হলে তিনি শুধু আল্লাহর কাছেই চাইতেন এবং আল্লাহ যা দিতেন তাতেই তিনি সন্তুষ্ট থাকতেন। 

একদিন তিনি খেতে বসবেন এমন সময় দু’জন মেহমান এলাে। ঘরে দুটো মাত্র রুটি আছে। ভাবলেন, দুটো রুটিই তিনজনে ভাগ করে খেয়ে নেবেন। তাঁরা তখনাে খাওয়া শুরু করেননি, একজন ভিখিরি এসে দরজার কড়া নেড়ে বলল, 'মাগাে, কিছু খেতে দেবেন?

ভিখিরিকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে নেই। তাপসী রাবেয়া দুটো রুটিই ভিখিরিকে দিয়ে দিলেন। মেহমান দু’জনতাে অবাক। উপােস থাকবে নাকি তারা? কিন্তু রাবেয়া নির্বিকার। তিনি দরজার দিকে মুখ করে বসে রইলেন। 

একটু পর পাশের বাড়ির এক দাসী এসে হাজির। ওর হাতে কাপড় দিয়ে ঢাকা তশতরি। তাতে আছে গরম গরম রুটি। দাসী বলল, ‘আমাদের বাড়িতে ভালাে রান্না হয়েছে। গিন্নিমা এগুলাে আপনার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন।' 

রাবেয়া ঢাকনা সরিয়ে রুটি গুনে দেখলেন ওখানে আঠারােটি রুটি আছে। হিসাব মিললাে না তাঁর। দাসীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি বােধহয় ভুল করেছে। এ রুটি আমার নয়।' তিনি রুটিগুলাে ফিরিয়ে দিলেন।

ব্যাপার দেখে মেহমানরা তাজ্জব হয়ে গেলেন। ক্ষুধায় ওদের পেট জ্বলছে, অথচ রাবেয়া এতগুলাে রুটি পেয়েও ফিরিয়ে দিলেন। তারা বলল, “এ আপনি কী করলেন?” 

রাবেয়া বললেন, 'আমি যা করেছি ঠিকই করেছি।'

একটু পরই দাসী এসে আবার কড়া নাড়ল। রাবেয়া এগিয়ে দরজা খুলে দিলেন। দাসী তশতরি এগিয়ে ধরে বলল, 'এই নিন আপনার রুটি। আপনি ঠিকই বলেছিলেন। গিন্নিমা আপনাকে বিশটি রুটি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গুনতে গিয়ে ভুল করে আঠারােটি রুটি পাঠিয়েছিলেন।' 

আরও পড়ুনঃ

রাবেয়া তশতরি হাতে নিয়ে রুটিগুলাে গুনে দেখলেন। তশতরিতে পুরাে বিশটি রুটি পেয়ে বললেন, হ্যাঁ, এবার ঠিক আছে। 

দাসী বিদায় হলে এবার মেহমানদের নিয়ে খেতে বসলেন তিনি। রুটিগুলাে দারুণ সুস্বাদু আর টাটকা গরম। দুই অতিথি তৃপ্তি করে খেলেন। তিনজনে পেটপুরে খাওয়ার পরও রয়ে গেল বেশকিছু রুটি। মেহমানদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল একটি প্রশ্ন। কৌতূহল ঘিরে ধরেছে তাদের। একজন তাে বলেই ফেলল, আচ্ছা রাবেয়া বসরী, আপনি কী করে জানলেন যে, ভুল সংখ্যক রুটি এসেছিল প্রথমে। পরে ঠিক ঠিক এসেছে? 

ও, এই কথা! কেন, আপনারা শােনেননি, আল্লাহপাক বলেছেন, কেউ আমার নামে এক গুণ দান করলে আমি তাকে দশ গুণ ফিরিয়ে দিই? আল্লাহর কথা তাে মিথ্যা বা ভুল হতে পারে না। আমি ভিখিরিকে দুটি রুটি দিয়ে তার দশ গুণ পাবার আশায় বসেছিলাম। এক রুটির বদলে দশ হলে দুই রুটির বদলে বিশটি রুটি পাবার কথা। কিন্তু দাসী আঠারােটি রুটি নিয়ে এলে বুঝলাম কোথাও সে ভুল করেছে।' 

মেহমানদের বিস্ময় আরাে বাড়লাে। বলল, “আপনি ঠিক ঠিক জানতেন বিশটি রুটি আসবে? 

অবশ্যই। কেন, আল্লাহর ওয়াদায় আপনাদের বিশ্বাস নেই?

মেহমানরা তাকালাে একে অন্যের দিকে, কিন্তু কেউ কোন জবাব দিল। রাবেয়া বসরী বললেন, বুঝেছি। আপনার নিজের বিশ্বাসের ওপর যদি আপনারই আস্থা না থাকে তবে আল্লাহর কী দোষ। আপনি তাে পাবেন আপনার বিশ্বাসের আলােকে। 

মেহমানরা তখন মাথা নিচু করে বললেন, 'আপনি ঠিক কথাই বলেছেন। 

রাবেয়া বসরী বললেন, আপনি পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে যদি একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে পারেন তবে আল্লাহ অবশ্যই তার ওয়াদা পূরণ করবেন।' 

গল্প থেকে শিক্ষা: এই গল্প থেকে আমরা শিখলাম, যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহ কখনাে তাদের নিরাশ করেন না।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন