সত্যবাদিতা - উপকারিতা, গুরুত্ব ও সুফল

সত্যবাদিতা - উপকারিতা, গুরুত্ব ও সুফল - Bongo Tweet - বঙ্গ টুইট

সত্যবাদিতার সংজ্ঞা

সত্যবাদিতার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে 'সিদক' (اَلصٌِدْقُ)। সাধারণভাবে সত্য বলার অভ্যাস কিংবা অভ্যস্তরূপে সত্য বলাকে সত্যবাদিতা বলা হয়। তাকওয়ার প্রভাবে মুত্তাকির আচরণে যেসব সুন্দরতম গুণ প্রতিফলিত হয়ে ওঠে 'সিদক' তার মধ্যে প্রথম ও প্রধান। যে ব্যক্তি সিদক বা সত্যবাদিতার গুণে গুণান্বিত তাকে বলে 'সাদিক' বা সত্যবাদী। আর যে ব্যক্তি সত্যবাদিতার পরম সীমায় উত্তীর্ণ হয়েছে তাকে বলা হয় 'সিদ্দিক' বা পরম সত্যবাদী।

সত্যবাদিতার উপকারিতা/গুরুত্ব/সুফল

পার্থিব জীবনে এবং পরকালে সত্যবাদিতা পরম উপকারী গুণ। একজন মানুষের প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা এবং তার সাফল্য ও ব্যর্থতা পুরােপুরি সত্যবাদিতার ওপর নির্ভর করে। বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আল্লাহর নির্দেশ পালন : আল্লাহ তায়ালা মানুষকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা অনুশীলনের ওপর গুরুত্বারােপ করেছেন। তিনি ঘােষণা দিয়েছেন: - "হে মুমিনগণ, তােমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা বলাে (সুরা আল-আহযাব: ৭০)। সত্যবাদিতার মাধ্যমে ব্যক্তি মহান আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করে।

মুক্তি লাভ : সিদক বা সত্যবাদিতায় মানবজীবনের প্রকৃত মুক্তি ও সাফল্য আসে। ব্যক্তি বিবেক বিরােধী ও বাস্তবতা বিবর্জিত কথা বলা ও কাজ করার গ্লানি থেকে মুক্তি লাভ করে। রাসুল (স) বলেন - "সত্য (মানুষকে) মুক্তি দেয় (ফাতহুল কাবির)।"

জান্নাত লাভ : সত্যবাদিতা মানুষের পরকালীন জীবন সুখময় ও সফল হওয়ার নিশ্চয়তা দান করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন - "আল্লাহ বলবেন, এ হচ্ছে সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীরা তাদের সত্যবাদিতার জন্য কল্যাণ লাভ করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার তলদেশ থেকে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত (সুরা আল-মায়িদা; ১১৯)।"

আমল সংশােধন : সত্যবাদিতায় আমল সংশোধিত হয়। ব্যক্তি যেসব কাজ করে তাতে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ত্রুটি থেকে যায়। ব্যক্তি সত্যবাদিতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠলে এর কারণে আল্লাহ তায়ালা তার আমলগত ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশােধন করে দেন। আল্লাহ বলেন - "তােমরা সত্য কথা বল। এতে তােমাদের আমলসমূহ সংশােধিত হবে (সুরা আল-আহযাব: ৭০-৭১)।"

সাফল্য লাভ : সত্যবাদিতা মানুষকে পার্থিব জীবনে সাফল্য এনে দেয়। যারা সত্যবাদিতার ভিত্তিতে সৎ ও সুন্দর জীবনযাপন করে আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য চিরস্থায়ী পরম সাফল্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন -  "আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে (সুরা আল-আহযাব: ৭১)।"

আরও পড়ুনঃ

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ : সিদক বা সত্যবাদিতা আল্লাহ তায়ালার অন্যতম গুণ। যেজন্য কেউ সত্যবাদিতায় অভ্যস্ত হলে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর সন্তুষ্ট হন। তাদেরকে বিপুল পুরস্কারে ভূষিত করেন। ফলে সত্যবাদীরাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকে। কুরআনে এসেছে - "আল্লাহ তায়ালা সত্যবাদীদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর ওপর সন্তুষ্ট। আর এটা হচ্ছে বিরাট সাফল্য (সুরা আল-মায়িদা: ১১৯)।"

ক্ষমা লাভ : সত্যবাদিতা মানুষের পাপ মােচনে সহায়ক। আল্লাহ তায়ালা সত্যবাদিতার জন্য সত্যবাদীদের অপরাধসমূহ মােচন এবং তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করেন। কুরআনে এসেছে - "আর আল্লাহ তােমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন (সুরা আল-আহযাব: ৭১)।

সামাজিক মর্যাদা লাভ : সত্যবাদিতা মানুষকে সামাজিকভাবে সম্মানিত করে। যে সত্য কথা বলে বা সত্যের অনুশীলন করে সমাজের সব লােক তাকে ভালােবাসে ও বিশ্বাস করে। যেকোনাে ক্ষেত্রে তার ওপর আস্থা রাখে। রাসুলুল্লাহ (স) বাল্যকাল থেকেই ছিলেন সিদকের বাস্তব প্রতিকৃতি। কেবল সত্যবাদিতার জন্যই আইয়ামে জাহিলিয়ার বিপন্ন যুগেও তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। পেয়েছিলেন 'আল আমিন বা বিশ্বাসী উপাধি।

ইসলামের অনুশীলন : সিদক বা সত্যবাদিতার অনুশীলন মূলত ইসলামেরই অনুশীলন। এর মাধ্যমে ইসলামি বিধিবিধানের সর্বাধিক অনুশীলন সম্পন্ন হয়। কেননা সব সত্যের মূলভিত্তি হলাে ইসলাম। একমাত্র ইসলামই সত্য। এছাড়া আর সবকিছু মিথ্যা। যেমন বলা হয়েছে -  "ইসলামই সত্য আর কুফর হলাে মিথ্যা।"

ভালােবাসা লাভ : সত্যবাদীকে সবাই পছন্দ করে। আল্লাহ তায়ালা এবং রাসুলুল্লাহ (স) সত্যবাদীকে বিশেষভাবে পছন্দ করেন। তাঁদের পছন্দের কারণে পৃথিবীর সব সৃষ্টি এবং ফেরেশতাদের কাছেও সত্যবাদী ভালােবাসা লাভ করে।

তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম : সত্যবাদিতার বিশেষ উপকারিতা হলাে এর মাধ্যমে সব সৎগুণের উৎস তাকওয়া অর্জন করা যায়। কেননা সবসময় সত্য কথা বলতে হলে, সত্য মেনে চলতে হলে, মনে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন - "যারা সত্য নিয়ে আগমন করেছে এবং সত্যের অনুশীলন করেছে প্রকৃতপক্ষে তারাই তাকওয়াবান (সুরা যুমার: ৩৩)।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন