রসায়নশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

রসায়নশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান - বঙ্গ টুইট - Bongo Tweet

বিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক শাখা হলাে রসায়নশাস্ত্র।বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো রসায়নশাস্ত্রে ও মুসলিম মনীষীদের অসামান্য অবদান রয়েছে। মূলত রসায়ন শাস্ত্রের সূচণা হয়েছিল মুসলিম বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই। প্রাচীনকালে মিশরের মুসলিম বিজ্ঞানীরা আল-কেমি বা রসায়নাগারে রসায়নের চর্চা করত। আরবি শব্দ আলকেমি থেকেই ক্যামিস্ট্রি শব্দটি এসেছে। এ থেকে বুঝা যায় মুসলিম বিজ্ঞানীরা রসায়নের স্রষ্টা। শুধু সৃষ্টিই নয় অনেক মুসলিম বিজ্ঞানীরা রসায়নকে সমৃদ্ধ ও করেছে। রসায়নে সাংকেতিক চিহ্নও প্রথম মুসলিমরা ব্যবহার করেন। মুসলিম রসায়নবিদদের মধ্যে জাবির ইবনে হাইয়ান, আল কিন্দি, জুননুন মিসরি ও ইবনে আবদুল মালিক আল-কাসি প্রমুখের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। নিচে রসায়ন শাস্ত্রে মুসলিম মনীষীদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হল:

জাবির ইবনে হাইয়ান (৭২২-৮০৪ খ্রি.)

জাবির ইবনে হাইয়ান এর সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে আবু মুসা জাবির ইবনে হাইয়ান, ইবনে আব্দুল্লাহ আল আজাদী, আত তুসি, আস সুফি, আল ওমাবি। তবে তিনি আবু মুসা জাবির ইবনে হাইয়ান নামেই অধিক পরিচিত। ইউরোপীয় পণ্ডিতদের কাছে তিনি 'জিবার (Geber)' নামে পরিচিত। রসায়নশাস্ত্রের ইতিহাসে জাবির ইবনে হাইয়ান এর নাম অতি পরিচিত। বর্তমান রসায়ন বিজ্ঞানের অধিষ্ঠান জাবির ইবনে হাইয়ান এর মৌলিক আবিষ্কার এর ওপরই। জাবির ইবনে হাইয়ান সর্বপ্রথম রসায়নকে বিজ্ঞানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। জাবির ইবনে হাইয়ান কে আলকেমি বা রসায়নশাস্ত্রের জনক বলা হয়। জাবির ইবনে হাইয়ান আরবের কুফায় একটি বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করে সেখানে তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক গবেষণা পরিচালনা করতেন। জাবির ইবনে হাইয়ান বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেন। তিনি রসায়নশাস্ত্রের অন্যতম প্রধান দুটি সূত্র ভস্মীকরণ (Calcination) ও লঘুকরণ (Reduction) এর বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা করেন। তরল পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করার এবং বাষ্পকে তরল পদার্থে পরিণত করার পদ্ধতি তার জানা ছিল। জাবির ইবনে হাইয়ান পাতন, উর্ধ্বপাতন, পরিস্রবণ, দ্রবণ, গলন প্রভৃতি রাসায়নিক পদ্ধতির ব্যাপক উন্নতিসাধন করেন। Oxidation বা ধাতুর সাথে অম্লজান মিশ্রণ এবং হিসাব নিরুপণের রাসায়নিক পদ্ধতি তার হাতেই পূর্ণতা পায়।

আরও পড়ুন : 

জাবির ইবনে হাইয়ানের বড় কৃতিত্ব হলো তিনি রাসায়নিক সূত্র ও পদ্ধতির ব্যবহারিক রূপ দেন। তিনি ধাতুর মানগত উন্নতিবিধান, স্টিল ও লােহা তৈরি, মারকাসাইট থেকে স্থায়ী লেখার কালি তৈরি, চামড়া ও কাপড় রং করা, কাপড়কে ওয়াটার প্রুফ করা ও লােহা সংরক্ষণের জন্য বার্নিস ব্যবহার করা, ম্যাঙ্গানিজ ডাই-অক্সাইড থেকে কাচ তৈরি করা, সােনালি অক্ষরে লেখার জন্য লৌহ পাইরিটসের ব্যবহার করা এবং এসিডের ঘনত্বের জন্য অম্লরস চোলাই করার পদ্ধতির সফল প্রয়ােগ করেন। সাইট্রিক এসিড, সিলভার নাইট্রেট, কিউপ্রিক ক্লোরাইড, এন্টিমনি, আর্সেনিক প্রভৃতি বিষয়ে তার প্রয়ােজনীয় জ্ঞান ছিল। জাবির ইবনে হাইয়ান লবণ তৈরির একটি সফল ব্যবহারিক পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। জাবির ইবনে হাইয়ান বিজ্ঞান বিষয়ে দু'হাজারের বেশি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে রসায়ন নিয়ে লেখা গ্রন্থের সংখ্যা হলাে ২৬৭টি। বর্তমানে তার রচনা সমগ্রকে কয়েকটি সংকলনে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এ সংকলনের প্রত্যেকটিতে ৭০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তার গ্রন্থগুলাের মধ্যে কিতাব আল-তাজমী, কিতাব আল-রাহমাহ, আল-শারাকী প্রভৃতি অন্যতম। 

জুননুন মিসরি

তার অপর নাম ছাওবান। তিনি জুননুন মিসরি নামেই অধিক পরিচিত, আরবের মুসলমান বিজ্ঞানীদের মধ্যে রসায়নশাস্ত্রের উপর যাঁরা প্রথমদিকে গবেষণা করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জুননুন মিসরি। জুননুন মিসরি রসায়নশাস্ত্রের উপকরণ সম্পর্কে লেখালেখি এবং গবেষণা করেন। তার গবেষনা ও লেখার মধ্যে স্বর্ণ এবং রুপাসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি মিশরীয় সাংকেতিক বর্ণের মর্মার্থ বুঝতেন। জুননুন মিসরি মিশরের আল জিজাহ নামক স্থানে ৮৫৯ খ্রি. ইন্তিকাল করেন।

ইবনে আবদুল মালিক আল কাসি

ইবনে আবদুল মালিক আল কাসি রচিত 'আইনুস সানাহ ওয়া আইওয়ানুস সানাহ' (Essence of the Art and Aid of Worker) গ্রন্থটি রসায়নশাস্ত্রে একটি মূল্যবান সংযােজন। তিনি এ গ্রন্থে রসায়নের প্রত্যেক প্রয়ােজনীয় বিষয়ের সহজ-সরল পন্থা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেছেন।

তথ্যসুত্র : বই - ইসলাম শিক্ষা। 
লেখক: ড. এ আর এম আলী হায়দার।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন