Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

আল-কুরআনের কতিপয় নাম

আল-কুরআনের কতিপয় নাম - বঙ্গ টুইট - Bongo Tweet

আল-কুরআনের ভাষা, ভাব, গ্রন্থনা বিন্যাস এবং নামকরণ সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে। মিশরের বিজ্ঞজন আস-সুয়ুতি (রহ) আল-কুরআনের ৫৫টি নাম উল্লেখ করেছেন। হানাফি পণ্ডিত; পাকিস্তানের শরিয়া আদালতের বিচারক মুহাম্মদ তাকি উসমানি আল-কুরআনের নাম ৯০টিরও অধিক বলে বর্ণনা করেছেন । তবে তিনি আল-কুরআনের প্রকৃত নাম ৫টি ছাড়া অন্যগুলােকে তার বিশেষণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইমাম জারকানি (রহ) বলেন, কুরআনুল কারিমের গুণবাচক নামগুলােকেও মূল নামে আখ্যা দেওয়ার ফলে এর সংখ্যা এতাে অধিক হয়েছে। অন্যথায় বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, আল-কুরআনের সর্বমােট নাম ৪টি। যেমন - ১. আল-কুরআন ২. আল-ফুরকান ৩. আজ-জিকর ৪. আত-তানজিল। আত-তাফসিরুল মুনির গ্রন্থে আল-কুরআনের ৫টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- ১. আল-কুরআন ২. আল-কিতাব ৩. আল-মাসহাফ ৪. আন-নুর ৫. আল-ফুরকান।

কুরআন মাজিদের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনের বিভিন্ন সুরায় এ মহাগ্রন্থকে 'কুরআন ছাড়া আরও বিভিন্ন নামে অভিহিত করেছেন। যেমন -

১. আল-ফুরকান বা হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী। কারণ আল-কুরআন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে, ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- "কত মহান তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি 'আল-ফুরকান' বা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী নাজিল করেছেন" (সুরা আল-ফুরকান: ১)

২. আল-কিতাব বা স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রন্থ। কেননা, কুরআন মাজিদ সব দিক বিবেচনাতেই একখানি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। আল্লাহ তায়ালা বলেন "নিশ্চয়ই আপনার প্রতি আমি আল-কিতাব বা স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রন্থ নাজিল করেছি, যাতে সব বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে (সুরা আন-নাহল: ৮৯)

৩. আজ-জিকর বা স্মারক, উপদেশ। কেননা কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতের স্মারক এবং তাঁর উপদেশ বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- "নিশ্চয়ই আমি 'আজ-জিকর' বা স্মারক ও উপদেশ নাজিল করেছি (সুরা হিজর: ৯)

৪. আল-মাওয়িজা বা উপদেশ। কেননা আল-কুরআনে বিশ্বমানবের জন্য আল্লাহ তায়ালা উত্তম ও কল্যাণকর উপদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- "হে মানুষ! তােমাদের রবের পক্ষ থেকে তােমাদের জন্য মাওয়িজা বা উপদেশ এসেছে (সুরা ইউনুস: ৫৭)

৫. আল-হিকমা বা বিজ্ঞানময়। সুরা ইয়াসিনের ২নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন নিশ্চয়ই এটি বিজ্ঞানময় কুরআন।

৬. আশ-শিফা বা নিরাময়। কেননা কুরআন মাজিদ হলাে মানুষের অন্তরের ব্যাধিসমূহের প্রতিষেধক। আল্লাহ বলেন - "আর কুরআন তােমাদের অন্তরে যা আছে তার 'শিফা' বা নিরাময় (সুরা ইউনুস: ৫৭)

আরও পড়ুনঃ
৭. আল-হুদা বা পথনির্দেশ। কেননা আল-কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্বমানবের জন্য হেদায়েত বা পথনির্দেশ। ইরশাদ হচ্ছে "আর (কুরআন) মুমিনদের জন্য 'হুদা' বা পথনির্দেশনা (সুরা ইউনুস: ৫৭)।

৮. আর-রাহমাত বা অনুগ্রহ, দয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- "আর (কুরআন) মুমিনদের জন্য 'হুদা' বা পথনির্দেশ এবং 'রহমত' বা অনুগ্রহ" (সুরা ইউনুস; ৫৭)

৯. আল-খায়র বা মঙ্গল, কল্যাণ। কেননা কুরআন মাজিদ পৃথিবীর সব মানুষের জন্য বিশ্বজনীন কল্যাণ ও চিরায়ত মঙ্গলের প্রতীক। আল্লাহ তায়ালা বলেন- "তােমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা 'আল খায়র' বা মঙ্গল ও কল্যাণের পথে আহ্বান করবে (সুরা আলে-ইমরান: ১০৪)।

১০. আল-বুরহান বা স্পষ্ট প্রমাণ। কেননা তাওহিদ, রিসালাত এবং ইসলামের সত্যতা এবং অন্য সব কিছুর পক্ষে কুরআন হলাে স্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ বলেন "হে মানুষ! তােমাদের রবের কাছ থেকে তােমাদে কাছে 'বুরহান' বা সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে (সুরা আন-নিসা: ১৭৪)

১১. আন-নুর বা জ্যোতি। কেননা সঠিক পথে চলার জন্য কুরআন হলাে আল্লাহ প্রদত্ত জ্যোতি। ইরশাদ হয়েছে- এবং যারা তাঁর সাথে যে 'নুর' বা জ্যোতি নাজিল হয়েছে তার অনুসরণ করে তারাই সফলকাম (সুরা আল-আরাফ: ১৫৭) 

১২. আল-হক বা সত্য। কেননা এ মহাগ্রন্থের সব বিষয় ও বক্তব্য এক পরম সত্যের প্রকাশ। আল্লাহ বলেন "বল, হক বা সত্য এসেছে এবং মিথ্যা অপসারিত হয়েছে" (সুরা বনি-ইসরাইল: ৮১) 

১৩. আন-নিয়ামত বা দান, অনুগ্রহ; ১৪. আল-মুহাইমিন বা সংরক্ষক, অভিভাবক; ১৫. আর-রূহ বা আত্মা, জীবন; ১৬. আল-বালাগ বা প্রচারধারা, প্রচারক; ১৭. আল-মাছানি বা পুনরাবৃত্তিকারী; ১৮. আল-মাজিদ বা মর্যাদাপূর্ণ; ১৯. আল-বায়্যিনাহ  বা স্পষ্ট প্রমাণ; ২০. আল-বায়ান বা বিবরণ; বর্ণনাকারী; ২১. আল-মুফাসসাল বা বিশদ বিবরণ; ২২. আস-সিরাতুল মুসতাকিম বা সঠিক পথ; ২৩. আত-তানজিল বা অবতীর্ণ; ২৪. আল-কালাম  বা বাণী; ২৫. আল-হাবলু বা রজ্জু: ২৬. আল-মুছাদ্দিক বা সত্যায়নকারী; ২৭. আল-আলিয়্যু বা মহিয়ান; সুউচ্চ; ২৮. আল-মুবিন বা স্পষ্ট বর্ণনাকারী; ২৯. আল-মুহকাম বা দ্ব্যর্থহীন; ৩০. আল-মাসহাফ বা ফলক; গ্রন্থ; ৩১. আল-হাকিম বা প্রজ্ঞাবান; ৩২. আল-বুশরা বা সুসংবাদদাতা; ৩৩. আল-কাসাস বা কাহিনিসমূহ।

কুরআনের বহু নামের হিকমত

অধিক নাম; বিশেষ্যের মর্যাদা ও কোনো বিষয়ে তার পূর্ণতাকে বোঝায়। লক্ষণীয় যে, কিয়ামতের বহু নাম থাকা প্রচন্ডতা ও কাঠিণ্যে তার পূর্ণতাকে বোঝায়। চতুর ব্যক্তির বহু নাম থাকা চাতুর্যে তার অস্বাভাবিক সূক্ষতাকে বোঝায়। ঠিক তেমনি- আল্লাহ তায়ালার অনেক নাম থাকা তার পরিপূর্ণ আজমত ও বরত্বকে বোঝায় এবং কুরআনের বহু নামও তার মর্যাদা ও ফজিলতকে নির্দেশ করে। 



তথ্যসূত্র:

বই: ইসলাম শিক্ষা - দ্বিতীয় পত্র
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী
-----------------------------------
ড. এ আর এম আলী হায়দার
ড. মোঃ রেজাউল করিম
ড. মোঃ ইব্রাহীম খলিল
ড. মুহাম্মদ আল আমীন

নিচের কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত লিখুন :