আমাদের আকাবিরগণ কিভাবে সময় ব্যয় করতেন - ইসলামিক গল্প

ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্পের বই pdf | ইসলামিক গল্প থেকে শিক্ষা | মেয়েদের ইসলামিক গল্প | স্বামী স্ত্রীর রােমান্টিক ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্প ও কাহিনী | ছােটদের ইসলামিক গল্প | ইসলামিক গল্প ও কাহিনী pdf | ইসলামিক গল্পের লিংক | শিশুদের ইসলামিক গল্পের বই pdf | ইসলামিক গল্পের বই | ছােটদের ইসলামিক গল্পের বই pdf | Bongotweet.com

আমাদের আকাবির তথা পূর্বসরীগণ জীবনের প্রকৃত রহস্য উপলব্ধি করেছেন, জীবনকে বুঝেছেন। তাই তাঁরা সদা ইবাদতে মশগুল থাকার মাধ্যমে আপন শরীরকে সর্বদা ক্লান্ত-শ্রান্ত রাখতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এত অধিক পরিমাণ ইবাদত করতেন যে, হাদীসের মধ্যে রয়েছে حتى تور مت قد ماه (তাঁর কদম মােবারক ফুলে যেত)।

ইমাম আবু হানীফা রঃ এর সময় ব্যয়ের গল্প

ইমাম আবু হানীফা র.-এর ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি রমযান মাসে দিনে এক খতম কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন এবং রাতে এক খতম কুরআন শরীফ ও তারাবীহতে (প্রতি দশ দিনে) এক খতম কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে রমযান মাসে মােট ৬৩ খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন।

জনৈক বুযুর্গের সময় ব্যয়ের গল্প

জনৈক বুযুর্গ ছিলেন। যাঁর বয়স ছিল ৮০ বছর। ৮০ বছরের আয়ুকালে তিনি প্রতি দিন ৭০ বার বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতেন। প্রতি তাওয়াফে সাত চক্কর হিসেবে ৭০ তাওয়াফে মােট ৪৯০ বার চক্কর দেয়া হত। আর প্রত্যেক তাওয়াফে দু'রাকাত করে ৭০ তাওয়াফে মােট ১৪০ রাকাত নামায ও আদায় করতেন । আর আমাদের অবস্থা তাে এই যে, যদি আমরা কোন দিন ১৪০ রাকাত নফল নামায আদায় করি, তাহলে আমাদের মুখে শেষের এ سمع الله এর স্থলে 'হায় আল্লাহ' বের হয়ে যাবে। এটি ছিল তাঁর জীবনের একটি আমল মাত্র। এছাড়াও তিনি আরও অনেক আমল করতেন।

ইমাম আবু ইউসূফ রহঃ এর সময় ব্যয়ের গল্প

ইমাম আবু ইউসূফ রহ. ছিলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি ছিলেন সময়ের শ্রেষ্ঠ বিচারপতি। তিনি সারাদিন বিচারকার্য ও অন্যান্য ধর্মীয় কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। আর প্রতি রাতে তিনি দুই শত রাকাত নফল নামায আদায় করতেন। সুবহানাল্লাহ! এত ব্যস্ত একজন ব্যক্তি রাতের বেলা আল্লাহ তা'আলার কি পরিমাণ ইবাদত করতেন। তাঁরা কিভাবে আপন জীবনকে দীনের জন্য উৎসর্গ করেছেন।

খাজা আলী কুরাইশী রহঃ এর সময় ব্যয়ের গল্প

খাজা আলী কুরাইশী নামক জনৈক বুযুর্গ ছিলেন। তিনি বলেন,আমি ওযু করে আমার জমিনে কাজ করার জন্য যেতাম এবং কাজ করতাম ও মুখে আল্লাহ তা'আলার যিকির করতাম। এভাবে প্রতি দিন সত্তর হাজার বার আল্লাহর যিকির করা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল । অথচ আমাদের অবস্থা তাে এই যে, আমাদের একবার সুবহানাল্লাহ পড়া কষ্টকর মনে হয়। অথচ আল্লাহ তা'আলার কত বান্দা এমন রয়েছে যারা প্রতি দিন দশ হাজার বার কালিমায়ে তাইয়্যবার যিকির করে থাকে।

লাহােরের জনৈক ব্যক্তির সময় ব্যয়ের গল্প

লাহােরে জনৈক ব্যক্তি একজন আলেমকে নাস্তার জন্য নিমন্ত্রণ জানান। তখন সে ব্যক্তি বলল, হযরত! আমার পিতা ছিলেন কুরআন প্রেমিক। তখন বললেন, ভাই এখন তাে আমার নাস্তার চেয়ে আপনার পিতার অবস্থা জানার প্রতিই বেশী আগ্রহ। সুতরাং আপনি আমাকে আপনার পিতার অবস্থা বর্ণনা করুন। সে ব্যক্তি বলল, জি আচ্ছা, আমি আপনাকে একটি ঘটনা শুনাচ্ছি। আমার পিতাকে জনৈক বুযুর্গ বলেছেন যে, যদি দুই বছর যাবত প্রতি দিন এক খতম কুরআন তেলাওয়াত কর, তাহলে তােমার পরবর্তী বংশধরদের মাঝে কুরআনের বরকত জারি থাকবে। আমার পিতা তাঁর উপদেশ মতে প্রতি দিন এক খতম কুরআন পড়ার দৃঢ় সংকল্প করলেন এবং শীতে-গরমে, সুখে-দুঃখে, সুস্থাবস্থায়-অসুস্থাবস্থায়, দেশে-বিদেশে সর্বাবস্থায় তিনি প্রতি দিন এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন। এভাবে দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এর ফলাফল এই দেখা দিল যে, আমার পিতার দশ বছরের উর্ধ্বের সকল ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনী কুরআন কারীমের হাফেয হয়ে গেল । সূতরাং আমাদের বংশের দশ বছরের উর্ধ্বের সকল ছেলে-মেয়ে হাফেযে কুরআন। আল্লাহু আকবার! এই ব্যক্তি তাে এখনও জীবিত; অতীত কোন ব্যক্তির কথা আমি আপনাদেরকে বলছি না। এই সমস্ত আল্লাহর বান্দারা যদি বর্তমান সময়ে আল্লাহ তা'আলার এত বেশী ইবাদত করতে পারে, তাহলে আমরা কি দৈনিক এক পারাও তিলাওয়াত করতে পারি না?

আরও পড়ুনঃ

একজন বুযুর্গের সময় ব্যয়ের গল্প

আমার নিকটতম আত্মীয়দের মধ্যে একজন বুযুর্গ আত্মীয় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি যখন আমার পীর সাহেবের নিকট বাইআত গ্রহণ করি, তখন তিনি আমাকে প্রতি দিন এক খতম কুরআন তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বললেন, আমার বাইআতের ৪৩ তম বর্ষ চলছে, এর মধ্যে আমার একদিনও তিলাওয়াত কাযা হয়নি। আল্লাহ তা'আলার এই সকল বান্দারা যখন তাঁদের এমন ঈর্ষণীয় আমলনামা নিয়ে আল্লাহ তা'আলার দরবারে হাজির হবেন যে, ৪৩ বছরে তাঁদের কুরআন তিলাওয়াত কখনাে ছুটেনি, তাহলে আমাদের চিন্তা করা উচিত যে, তখন আমাদের অবস্থা কি হবে। যারা আমল করার তাঁরা তাে এই যামানায়ও আমল করে যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে তাে হাফেযদের অবস্থাও তাই। রমযান মাস এলে রাত-দিন করে কিছু তিলাওয়াত করে। আর সারা বছর সাধারণ মানুষের মতই তাদের অবস্থা।

একজন মায়ের সময় ব্যয়ের গল্প

আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। তাঁর মাতা ছিলেন কুরআনে কারীমের হাফেযা। আল্লাহর ফযলে কুরআন কারীম ঠিক সূরা ফাতিহার মত তাঁর মুখস্থ ছিল । যখন যেখান থেকে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হত একটা শব্দ বললেই তিনি সেখান থেকে পড়া শুরু করতেন। তিনি তাে বিস্মিত হয়ে যেতেন যে, কুরআন মজীদও বুঝি কেউ ভুলে যেতে পারে। বাস্তবেই যে শ্রম ও সাধনা করে আল্লাহ তা'আলা তাকে নেয়ামত দান করে থাকেন।

আজও কি এধরণের হাফেযে কুরআন রয়েছে?

একবার রমযান মাসে আমরা মিররীতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক জায়গায় তারাবীহ আদায় করতাম। সেখানকার একজন লােক বলল, গত ৩৬ বছর যাবত এখানে যে সকল হাফেস সাহেব তারাবীহ পড়াচ্ছেন, তাঁদের কোন লােকমা লাগেনি। আল্লাহু আকবার বর্তমান যামানায়ও এরূপ লােক বিদ্যমান রয়েছে, তথাপি আমরা কেন ভাল ভাবে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করছি না। এটি শুধুই একটু গুরুত্ব প্রদানের বিষয়। যে শ্রম-সাধনা করল সে-ই সময়কে সদ্ব্যবহার করল। সময়ের সদ্ব্যবহার না করলেও সময় তাে বয়ে যাবে; কারাে জন্য অপেক্ষা করবে না। সুতরাং আমাদের এ দেহ যেহেতু ধার নেয়া সম্পদতুল্য সেহেতু আমাদের উচিত এটিকে যত বেশী সম্ভব ইবাদত বন্দেগীতে রত রাখা, মাখলূকের খেদমতে নিয়ােজিত রাখা, যথা সাধ্য ধর্মীয় কাজে মশগুল রাখা। আল্লাহ তাআলার দীনের পথে আমরা আমাদের এ দেহ সদা ক্লান্ত-শ্রান্ত রাখব। বস্তুত অবসর সময় যাপন কোন সৌভাগ্য ও আনন্দের বিষয় নয়। বরং ব্যস্ত সময় পার করাই সৌভাগ্য ও খুশির বিষয়।

জনৈক ব্যক্তির সময় ব্যয়ের গল্প

কিছু দিন পূর্বে জনৈক ব্যক্তি আমার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে এলেন, যিনি ধারাবাহিকভাবে ১৬ বছর যাবত রােযা পালন করেছেন। এভাবে ধারাবাহিকভাবে রােযা পালনরত অবস্থায়ই তিনি জীবন যাপন করে যাচ্ছেন।

একজন কারী সাহেবের সময় ব্যয়ের গল্প

আমাদের একজন কারী সাহেব, যাকে আপনারা কেউ কেউ হয়ত দেখে থাকবেন। সেই বছরই তিনি আমাকে ইজাযতও দিয়েছেন খেলাফতও দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ একদিন রােযা ও একদিন রােযাহীন এভাবে তাঁর জীবনের ২৩ বছর অতিবাহিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন

নবীনতর পূর্বতন